চাঁদপুরে দুইপক্ষের ব্যাপক সংঘর্ষ, পুলিশসহ আহত ৪০, নিহত ১
প্রকাশ : ১২ জুন ২০২৪, ১৭:৪৭ | অনলাইন সংস্করণ
চাঁদপুর প্রতিনিধি
চাঁদপুরে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শত্রুতার জেরে ২ পক্ষের দফায় দফায় ব্যাপক সংঘর্ষে শহরের পুরানবাজার রনক্ষেত্রে পরিনত হয়েছে। এ ঘটনায় বৃষ্টির মত ইট পাটকেল,কাচেঁর বোতল ও ককটেল নিক্ষেপে ৫ পুলিশসহ অন্তত ৪০ জন আহত ও মাথায় গুলি প্রবেশ করায় আল-আমিন খান (৩৫) নামে এক যুবক অটোচালকের করুন মৃত্যু হয়েছে। নিহত আল-আমিন পুরানবাজার এলাকার আব্দুল মজিদ খান ডেংগুর ছেলে। তিনি দুই সন্তানের জনক।
এ ঘটনায় চাঁদপুর সরকারী জেনারেল হাসপাতালে পুলিশের এক কর্মকর্তাসহ ৩জন ও সংঘর্ষের সময় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ইটপাটকেল নিক্ষেপ,দেশীয় অস্ত্রের আঘাত ও ককটেল নিক্ষেপের আহতদের মধ্যে ৮জনকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ঘটনার সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে রাবার বুলেট ও টিয়াল সেল নিক্ষেপ করেছেন বলে পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায় নিশ্চিত করেছেন।
এ বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে ও নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
মঙ্গলবার (১১ জুন) রাতে পুরাণবাজার মধুসুদুন উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন পলাশের মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় প্রায় ৩০টি দোকান পাটও ভাঙচুর করা হয়।
রাত সাড়ে ৮টা থেকে সংঘর্ষ রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত চলে । এতে দুই পক্ষ একে অপরকে ইট পাটকেল নিক্ষেপ এবং ককটেট বিস্ফোরণ ঘটায় এতে এলাকা রনক্ষেত্রে পরিনত হয়। প্রথমদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুরানবাজার ফাড়ি পুলিশ ব্যাপক চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। পরবর্তীতে চাঁদপুর সদর সার্কেল ইয়াসিন আরাফাতের নেতৃত্বে মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিযন্ত্রণে আনে ।
চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে, পুলিশের এএসআই মনিরুল ইসলাম, কন্সটেবল আল-আমিন ও স্বপন চন্দ্র দাস। অন্য আহতরা হচ্ছে, রাশেদ, কামাল, শাকিল, রহমান, জসিম, আল-আমিন,জাহিদ ও রাকিবসহ অন্তত ৪০ জন আহত হয়। আহতদের অনেকে সরকারী হাসপাতালে না’এসে প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে বলেও জানা গেছ্।ে
ঘটনার পরপর চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) সুদিপ্ত রায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( ক্রাইম অ্যান্ড অপস) রাশেদুল হক চৌধুরী, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ওসি) এনামুল হক চৌধুরী, চাঁদপুর সদর মডেল থানার (ওসি) শেখ মো. মুহসীন আলম হাসপাতালে ছুটে আসেন এবং নিহতের পরিবারকে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আইনের আওতায় আনা হবে বলে আশ্বস্ত করেন।
জানা গেছে, চাঁদপুর পুরানবাজার ১ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি শান্ত হাওলাদারের সঙ্গে কাউন্সিলর মোহাম্মদ আলী মাঝির ছেলে সজিব মাঝির সঙ্গে এর আগে কয়েক দফা মারামারি হয়। পূর্ব শত্রুæতার জের ধরে রাত সাড়ে ৮ টা থেকে দুই গ্রুæপের সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়ে রাত ১১টা পর্যন্ত গড়ায়।
নিহতের পিতা আব্দুল মজিদ খান জানায়ন ‘আমার ছেলেকে যে গুলি করে মেরেছে আমি তার ফাঁসি চাই।
প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুর রহিম ও মিজানুর রহমান জানান,কিছুদিন পূর্বে পুরানবাজার মেরকাটিজ রোডের নয়ন নামে একজন কিশোরের সাথে নিতাইগঞ্জ রোডের জুয়েল নামের এক কিশোরের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
মূলত এই ঘটনাটা কেন্দ্র করে নিতাইগঞ্জ রোডে যুবকদের সাথে মেরকাটিজ রোড এলাকার যুবকদের সংঘর্ষ সৃষ্টি হয় । এতে করে এক পক্ষে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগের শান্ত হাওলাদার ও অপর পক্ষ নেয় সজিব মাঝি।
চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ওমর ফারুক সবুজ জানান,আল-আমিনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আনা হয়। তার মাথার ডানপাশে গুলির আঘাত রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে সে গুলির আঘাতে মৃত্যুবরণ করেছেন।
চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) সুদিপ্ত রায় বলেন, পূর্ব থেকে ঝামেলা ছিল। সেই ঝামেলাই সূত্রপাত। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাবার বুলেট ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। কারা কী কারণে ঘটনাটি ঘটিয়েছে, তা আমরা খতিয়ে দেখছি। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। আমরা অভিযানে আছি। শীঘ্রই দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে। এ রিপোট লেখা পর্যন্ত পুরানবাজার এলাকার মেরকাটিস রোড ও নিতাই গঞ্জে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
এ বিষয়ে চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মহসিন আলম গুলিতে একজনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, 'আমরা এই ঘটনার কারণ এখনো জানতে পারিনি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে চার-পাঁচজন পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছে। তবে পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক আছে।'
এই ঘটনায় বর্তমানে পুরানবাজারের ব্যাপক থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এলাকাবাসী জানায় , যে কোন মুহূর্তে এই নিহতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভয়াৎবহ সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে।