মানিকগঞ্জে ক্লাবের কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে হামলা
প্রকাশ : ০১ জুলাই ২০২৪, ০৮:০৪ | অনলাইন সংস্করণ
মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি
মানিকগঞ্জে ক্লাবের কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে শিক্ষক-ইমামসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। হামলার শিকার সজিব মিয়া ১১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো দশবারো জনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।
শনিবার বিকেলে সদর উপজেলার ভাটবাউর কেন্দ্রীয় মসজিদ মাঠে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, চলতি বছরের ১৮ এপ্রিল ভাটবাউর যুব সংঘের কমিটি গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় তিন মাসের জন্য আহবায়ক কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। আহবায়ক কমিটি নির্বাচন সম্পন্ন করে নির্বাচিত কমিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন। কিন্তু সেটা না করে আহ্বায়ক কমিটি নিজেদের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে রূপান্তরের চেষ্টা করলে এলাকায় অসন্তোষ তৈরি হয়। তারা নিজেদেরকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দাবী করে ক্লাবের দেয়ালে শুভেচ্ছা ব্যানার সাঁটিয়ে দেয়। এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ ও কমিটির প্রতি অনাস্থা জানিয়ে এলাকাবাসী গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে। বিষয়টি সমাধানের জন্য গত শনিবার বিকেলে ভাটবাউর কেন্দ্রীয় মসজিদ মাঠে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে সভা আহবান করা হয়। সেখানে লেবু নিয়া নামের এক ব্যক্তি আহবায়ক কমিটি কিভাবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হলো তার ব্যাখ্যা দাবি করেন। তার এ বক্তব্যের পরই উত্তেজনায় ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বর্তমান কমিটির স্বপক্ষের লোকজন হামলা চালায় বলে অপরপক্ষ দাবি করেন। সভা শুরুর আগে মাওলানা আশিকুল ইসলাম সানোয়ার কুরআন তেলাওয়াত করেন। হামলাকারীরা তাকেও লাঞ্ছিত করে তার মোটরসাইকেলের চাবি কেঁড়ে নেয়।
এ বিষয়ে ভাটবাউর এলাকার মো. লাবলু মিয়া বলেন, দ্রুত এঘটনার সুষ্ঠ সমাধান না হলে এলাকায় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে। মো. শাহীনুর ইসলাম বলেন, হামলা ঠেকাতে গিয়ে আমি নিজেও হামলার শিকার হয়েছি। মো. রশীদ মিয়া বলেন, এ হামলা পূর্বপরিকল্পিতভাবে বর্তমান কমিটির লোকজন করেছে। তারা হামলা করবে বলে আগে থেকেই কাঠের বাটাম ও বাঁশের টুকরো রেডি রেখেছিল। ভাটবাউর যুব সংঘের সাবেক আহ্বায়ক মো. সুমন মিয়া বলেন, বর্তমান কমিটির লোকজন অপ্রীতিকর অবস্থা তৈরি করতেই এ হামলা চালিয়েছে। আলেক মিয়া বলেন, সামাদ মাষ্টারের নেতৃত্বে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে এ হামলা হয়। তারা লাঠিসোটা আগেই জমা রেখেছিল। লেবু মিয়া বলেন, আমি গঠনমূলক বক্তব্য দেওয়ার সময়ই তারা উত্তেজিত হয়ে হামলা করে। এ হামলা সামাদ মাষ্টারের নেতৃত্বে হয়েছে।
আলোচনা সভার সভাপতিত্ব করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল খালেক, তিনি বলেন আহবায়ক কমিটি হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটির মতো সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক দাবী করে সাইনবোর্ড ব্যবহার করায় ভুলবোঝাবুঝির তৈরি হয়। এটা সমাধানের জন্য আমরা সভা আহবান করি। ওই আলোচনা সভায় আমি সভাপতি ছিলাম। লেবু মিয়া বক্তব্য দেওয়ার সময় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আমি চেষ্টা করেও হামলা ফেরাতে পারিনি। মাওলানা সানোয়ার কোন পক্ষেরই লোক নয় অথচ তাকেও লাঞ্ছিত করে মোটরসাইকেলের চাবি কেঁড়ে নেওয়া হয়।
জেলা ইমাম মুয়াজ্জিন কল্যাণ পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আশিকুল ইসলাম সানোয়ার বলেন, কমিটি নিয়ে যে আলোচনা সভা হয় সেখানে আমি পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত করি। কোরআন তেলাওয়াতের পরেই সভার কার্যক্রম শুরু হয়। হামলা শুরু হলে আমি পাশে সরে যাই। আমি কোন পক্ষের সাথে জড়িত নই। তবুও তারা আমাকে কিল-ঘুষিসহ এলোপাতাড়ি হামলা করে মোটরসাইকেলের চাবি কেঁড়ে নেয়।
গড়পাড়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুল খালেক বলেন, আমার উপরও হামলা করেছে। আমার চোখের নিচে ক্ষত হয়েছে। আরেকটু হলে আমার চোখটা বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেত।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আবদুস সামাদ মাষ্টার বলেন, কমিটি নিয়ে এলাকায় উদ্ভূত পরিস্থিতি তৈরি হলে কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। এ বিষয়ে বক্তব্য দেবার সময় লেবু মিয়া কমিটি স্থগিত হয়েছে বলে বক্তব্য দেয়। আমি প্রতিবাদ করে বলি কমিটি নয়; কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। এরপরই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এক পক্ষ আরেক পক্ষের উপর হামলা করে। আমার হাই প্রেসার থাকায় হামলা ফেরাতে ব্যর্থ হয়ে আমি গঠনাস্থল ত্যাগ করি।
ভাটবাউর যুব সংঘের আহবায়ক মো. রাজীব মিয়া বলেন, যেটা ঘটেছে সেটা অত্যন্ত দুঃখজনক। এটি যেন সামনে আর না বাড়ে সেজন্য এলাকাবাসীসহ সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত দীঘি ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড সদস্য মো. মাসুদ রানা বলেন, ক্লাব নিয়ে অপ্রীতিকর অবস্থা নিরসনের জন্য আমরা গ্রামবাসী ওই সভায় উপস্থিত হই। কিন্তু বর্তমান কমিটির লোকজন যেভাবে হামলা করেছে সেটা নিন্দনীয়।
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাবিল হোসেন বলেন, এ ঘটনায় অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।