ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

জুন মাসে রোহিঙ্গা সহ ২২ খুন

কক্সবাজারে বাড়ছে খুনখারাবি, ডোবায়-রেললাইনে মিলছে লাশ

খুনসহ চাঞ্চল্যকর মামলার অগ্রগতি নেই
কক্সবাজারে বাড়ছে খুনখারাবি, ডোবায়-রেললাইনে মিলছে লাশ

কক্সবাজারে খুন-খারাবির ঘটনা বেড়েই চলছে। একের পর এক খুনসহ অপরাধের ঘটনায় ভাবিয়ে তুলেছে সচেতন মহলকে। এসব খুনখারাবিসহ অপরাধের চাঞ্চল্যকর মামলার কোন অগ্রগতি নেই বললে চলে। সর্বশেষ গত রোববার কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রেলপথের রামু রশিদনগর ইউনিয়নের কাদমরপাড়া-ধলির ছড়ার মাঝামাঝি স্থানের রেললাইনের পাশ থেকে হাত-পা বাঁধা এক যুবকের (৩০) মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

এছাড়া গরু, ইয়াবা ও অস্ত্র চোরাচালান সহ নানা কারনে কক্সবাজারে অপরাধ বেড়েই চলছে। গরু চোরাচালানকে কেন্দ্র করে রামুতে চারটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এমনকি একপক্ষ অপর পক্ষকে ঘায়েল করতে অস্ত্র মজুদের অভিযোগ উঠেছে। গত ১ জুলাই সীমান্ত উপজেলা টেকনাফ থেকে সুপারি বস্তার আড়ালে অস্ত্র পাচারের চেষ্টাকালে রামুর গর্জনিয়ার এক যুবকসহ দুইজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ওই অস্ত্রটি রামুর গর্জনিয়া এলাকার নুরুল আবছার নামের এক গরু চোরাচালান সিন্ডিকেটর হাতে আসছিল বলে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। অনেকটা রামু থানার পুলিশের বিরুদ্ধে গরু চোরাচালানে সহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘ দিন ধরে।

অন্যদিকে গত শনিবার (৬ জুলাই) উখিয়ার হলদিয়া পালং এলাকায় প্রবাস ফেরত শাহজাহান সিকদার নামের একজনকে কুপিয়ে হাত বিছিন্ন করেছে স্থানীয় জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী। এই ঘটনায় নারীসহ আরো তিনজন আহত হয়েছে। আহত শাহজাহান ঢাকায় একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এই ঘটনায় তার বাদি হয়ে জাহাঙ্গীর আলমকে প্রধান আসামি করে উখিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশ এই ঘটনায় গতকাল সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কাউকে আটক করতে পারেনি। এছাড়া কক্সবাজার শহরে চুরি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে নিত্যদিন। অনেকটা জেলা পুলিশের সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের নিক্রিয়তায় সমানতালে চলছে এসব অপরাধ।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের তথ্যে যা বলছে পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তার দেয়া তথ্য মতে, কক্সবাজারে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত খুন ও অপরাধের অভিযোগে ৮৩টি মামলা হয়েছে।তন্মধ্যে খুনের ৬৬টি মামলায় ১২২ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এবং অপহরণ কিংবা মানবপাচার ১৭ মামলায় ৩৬ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ওই তথ্য মতে, চলতি ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে ১৪টি খুনের মামলায় ৩২ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই মাসে অপহরণ কিংবা মানবপাচারের ৬ মামলায় ১৪ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। ফেব্রুয়ারি মাসে ১৩টি খুনের মামলায় ৯ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই মাসে অপহরণ কিংবা মানবপাচারের ২ মামলায় ৬ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। মার্চ মাসে ১০টি খুনের মামলায় ৩৫ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই মাসে অপহরণ কিংবা মানবপাচারের ৪ মামলায় ৯ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এপ্রিল মাসে ১৩টি খুনের মামলায় ২৩ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই মাসে অপহরণ কিংবা মানবপাচারের ৪ মামলায় ৬ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। মে মাসে ২০টি খুনের মামলায় ২৫ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই মাসে অপহরণ কিংবা মানবপাচারের ১ মামলায় ১ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশের তথ্য মতে, গত জুন মাসে রোহিঙ্গা সহ ২২ খুন হয়েছে।

রামুতে হাত-পা বাঁধা এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রেলপথের রামু এলাকায় হাত-পা বাঁধা এক যুবকের (৩০) মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। রোববার রশিদনগর ইউনিয়নের কাদমরপাড়া-ধলির ছড়ার মাঝামাঝি স্থানের রেললাইনের পাশ থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। নিহত যুবকের নাম আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি কক্সবাজার সদরের খরুলিয়া ঘাটপাড়া এলাকার মৃত নবী হোসেনের ছেলে। রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.আবু তাহের দেওয়ান মরদেহ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

পুলিশ ও নিহতের স্বজনরা জানান, শনিবার (৬ জুলাই) সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বের হয়ে কক্সবাজারের দিকে যান মামুন। এর কয়েকঘণ্টা পর থেকে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। রাত ১১টা বাজলেও মামুন বাড়ি না ফেরায় পরিবারের লোকজন বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নেন। তবে তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। রোববার সকালে রামুর রশিদ নগরের কাদমরপাড়া-ধলির ছড়ার মাঝামাঝি রেললাইনের পাশে হাত-পা বাঁধা একটি মরদেহ দেখতে পান স্থানীয়রা। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। পরে মরদেহটি আবদুল্লাহ আল মামুনের বলে শনাক্ত হয়। সুরতহাল প্রস্তুতকারী, রামু উপপরিদর্শক(এসআই) মো.তৌহিদুর রহমান বলেন, মরদেহটি হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পাওয়া গেছে। শরীরে বড় কোনো আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়নি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। মরহেদটি ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

দুই ঘটনায় পুলিশের নিস্ফল অভিযান শনিবার উখিয়া উপজেলার হলদিয়া পালং এলাকায় প্রবাস ফেরত শাহজাহান সিকদার নামের একজনকে কুপিয়ে হাত বিছিন্ন করার ঘটনায় এবং রোববার রশিদনগর ইউনিয়নের কাদমরপাড়া-ধলির ছড়ার মাঝামাঝি স্থানের রেললাইনের পাশ থেকে আবদুল্লাহ আল মামুনের লাশ উদ্ধার করার ঘটনায় কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। যার কারনে আহত ও নিহতের পরিবারের মাঝে হতাশা দেখা দিয়েছে। মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তাদ্বয়ের সাথে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে।

সূত্র বলছে, এই পৃথক ঘটনায় রামু ও উখিয়া থানা পুলিশ সাড়াশি অভিযান চালিয়েও ব্যর্থ হয়েছে। বলা চলে, পুলিশের নিস্ফল অভিযান।

কুপিয়ে হাত বিছিন্নকারী সেই জাহাঙ্গীর পাড়ি দিতে পারে প্রবাসে উখিয়ার হলদিয়াপালং এলাকায় প্রবাস ফেরত শাহজাহান সিকদারকে কুপিয়ে হাত বিছিন্নকারী সেই জাহাঙ্গীর আলম প্রবাসে পাড়ি দেয়ার আশংকা প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসী। তাদের মতে, জাহাঙ্গীর আলম একজন চিহ্নিত অপরাধী। সে দীর্ঘ দিন প্রবাসে ছিল। সে সম্প্রতি প্রবাস থেকে এসে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। তাদের মতে, হয়তো তার ফিরতি টিকেট রয়েছে। যার কারনে সহজেই বিদেশ পাড়ি দিতে পারে বলে মন্তব্য করেন ভুক্তভোগী ও এলাকার লোকজন।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মাহফুজুল ইসলাম ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. রফিকুল ইসলাম বলেছেন, কক্সবাজারবাসীকে নিরাপদে রাখতে পুলিশ কাজ করছে। জমি বিরোধ ও রোহিঙ্গাদের কারনে অপরাধের মাত্রা এবং মামলার সংখ্যাও বাড়ছে। ক্যাম্প কেন্দ্রীক বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছেন। অপরাধ নির্মূলে জেলা পুলিশও কাজ করছে।

রোববার রশিদনগর ইউনিয়নের কাদমরপাড়া-ধলির ছড়ার মাঝামাঝি স্থানের রেললাইনের পাশ থেকে আবদুল্লাহ আল মামুনসহ একাধিক খুনের ঘটনার প্রসঙ্গে এসপি বলেন, জমি বিরোধ- নারী ঘঠিত কারনেই কয়েকটি বিছিন্ন ঘটনা সংগঠিত হয়েছে। তা নিয়ে পুলিশ কাজ করছে। বেশ কয়েকটি খুনের ঘটনা রহস্যাও উদঘাটন করেছে পুলিশ। রেললাইনের পাশ থেকে উদ্ধার করা আবদুল্লাহ আল মামুনের বিষয়টিও গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। তার পরিবার যেইসব তথ্য উপস্থাপনা করেছেন, সেগুলো সামনে রেখে পুলিশের পৃথক টিম মাঠে কাজ করছে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. মিজানুর রহমান বলেন, রোববার রশিদনগর ইউনিয়নের কাদমরপাড়া-ধলির ছড়ার মাঝামাঝি স্থানের রেললাইনের পাশ থেকে আবদুল্লাহ আল মামুনের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় তদন্তে পুলিশের টিম কাজ করছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, গরু চোরাচালানে চারজন নিহত হওয়ার ঘটনায় সোমবার পর্যন্ত পুলিশ ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে। বাকিদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

কক্সবাজার,পুলিশ,খুন
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত