ক্ষোভ দ্বন্দ্বে বন্ধুকে খুন

প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০২৪, ১৮:৫৭ | অনলাইন সংস্করণ

  স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার

নানা কারনে ক্ষোভ, দ্বন্দ্ব তৈরি হয় ব্যবসায়ী বন্ধু শাহেদ হোসেন ও আব্দুল্লাহ আল মামুনের মধ্যে। এই কারনে মামুনকে হত্যার 'ছক' আঁকেন শাহেদ। ভাড়া করেন  ভাটাতে কিলার। হত্যার মিশন সফল হন ৬ জুলাই রাতে। শাহেদ নিজেকে আড়াল করতে বন্ধুর নামাজে জানাজায়ও অংশ নেন। তবুও শেষ রক্ষা হয়নি তার। অবশেষে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) তাকে গ্রেফতার করেছে। গতকাল বুধবার (১০ জুলাই) দুপুরে র‌্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে উপ-অধিনায়ক মেজর মো.শরীফ আহসান তার গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তড়িৎ গতিতে চাঞ্চল্যকর হত্যার রহস্য উদঘাটন করায় প্রশংসায় ভাসছেন র‌্যাব।

র‌্যাব জানিয়েছে, গত ৭ জুলাই সকালে রামু উপজেলার রশিদনগর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের খাদেম পাড়ায় রেললাইনের পূর্ব পাশে হাত-পা বাধা অবস্থায় আব্দুল্লাহ আল মামুন নামে এক ব্যবসায়ীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে হত্যার রহস্য উদঘাটন ও জড়িতদের চিহ্নিত করে তাদের গ্রেপ্তারে র‌্যাব অভিযান শুরু করে।

নিহত আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩০) কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের খরুলিয়া ঘাটপাড়ার মৃত মো. নবী হোসেনের ছেলে।

এ ঘটনায় গ্রেপ্তার মো. শাহেদ হোসেন (৩০) রামু উপজেলার রশিদনগর ইউনিয়নের মাছুয়াখালী সিকদার পাড়ার মো. মতিউর রহমানের ছেলে।

গত ৭ জুলাই ব্যবসায়ী আবদুল্লাহ আল মামুনের মরদেহ উদ্ধারের পর ঘটনার রহস্য উদঘাটনে অভিযানে নামে র‌্যাব। এক পর্যায়ে মঙ্গলবার বিকেলে লিংকরোড বাজার এলাকা থেকে ব্যবসায়িক অংশীদার শাহেদ হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র‌্যাব হেফাজতে নেয়। তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর হত্যার ঘটনার মূল রহস্য বের হয়ে আসে।

র‌্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে শাহেদ হোসেন তথ্য দিয়েছে, ঈদগাঁও উপজেলার এক তরুণীর সঙ্গে শাহেদ হোসেনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সম্পর্কের এক পর্যায়ে শাহেদ নিজের মোবাইল ফোনে দুইজনের অন্তরঙ্গ মুহুর্তের কিছু ছবি ও ভিডিও ফুটেজ ধারণ করে রাখেন। পরে তাদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হলে প্রেমিকা সামনা-সামনি এসে ওই ছবি ও ফুটেজ মুছে ফেলার জন্য তাকে (শাহেদ) চাপ দেন।

কিন্তু প্রেমিকার অজ্ঞাতে শাহেদ ওই ছবি ও ফুটেজ ব্যবসায়িক অংশীদার এবং ঘনিষ্ট বন্ধু আব্দুল্লাহ আল মামুনের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে পাঠিয়ে সংরক্ষণ করে। পরে তিনি (শাহেদ) প্রেমিকার সামনে গিয়ে নিজের মোবাইল ফোন থেকে ওই ছবি ও ফুটেজগুলো মুছে ফেলেন। পরে আব্দুল্লাহ আল মামুনের কাছ থেকে শাহেদ ওই ছবি ও ফুটেজগুলো ফেরত চায়। কিন্তু নানাভাবে চেষ্টার পরও ছবি-ফুটেজগুলো ফেরত নিতে ব্যর্থ হওয়ায় শাহেদ হোসেন রেগে যান। এক পর্যায়ে তিনি ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে আব্দুল্লাহ আল মামুনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।

গ্রেপ্তার শাহেদের স্বীকারোক্তির বরাতে র‌্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, পরিকল্পনা মতে গত ৬ জুলাই রাত ৮টার দিকে কক্সবাজার শহরের ঝাউতলা এলাকাস্থ ভিশন শো-রুম থেকে মামুনকে মোবাইল ফোনে কল দিয়ে বাহারছড়া বাজারে ডেকে নেন শাহেদ। পরে ঈদগাঁওতে জরুরি কাজের কথা জানিয়ে একই মোটরসাইকেল যোগে দুইজনে রওয়ানা দেন। পথিমধ্যে তারা রশিদনগর ইউনিয়নের কালিরছড়া বাজারের একটু আগে পৌঁছালে শাহেদ হোসেন মোটরসাইকেলটি থামানোর জন্য বলে। এ সময় আগে থেকে সেখানে ওৎপেতে থাকা তিন থেকে চারজন দুর্বৃত্ত মামুনকে টেনে হেঁচড়ে নিয়ে যায়। পরে মামুনের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনটি ছিনিয়ে নিয়ে দুর্বৃত্তরা শাহেদের কাছে তুলে দেয়।

মেজর শরীফ আহসান জানান, দুর্বৃত্তরা মামুনকে রশিদনগর ইউনিয়নের খাদেম পাড়ায় রেললাইনের পূর্ব পাশে নিয়ে যায়। পরে সেখানে তার হাত-পা বেঁধে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর মরদেহ ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।

সংবাদ সম্মেলনে মেজর শরীফ আহসান বলেন, ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ আল মামুন ও শাহেদ হোসেন পরস্পর ব্যবসায়িক অংশীদার এবং ঘনিষ্ট বন্ধু। শাহেদ হোসনের এক ভগ্নিপতিসহ তিনজনের অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কক্সবাজার সদরের লিংকরোড এলাকায় একটি কোম্পানির ইলেক্ট্রনিকস পণ্যের একটি শো-রুমের দোকান রয়েছে।

গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা,  রামু থানার উপপরিদর্শক ( এসআই)  মোহাম্মদ তৌহিদুর রহমান বলেন, র‌্যাব গ্রেপ্তার শাহেদকে থানায় হস্তান্তর করেছেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাধে নানা তথ্য পাওয়া গেছে। পুলিশ ওই তথ্যের সূত্র ধরে মাঠে কাজ করছেন। জিজ্ঞাসাবাধের শেষে আজ বৃহস্পতিবার  রিমান্ড চেয়ে তাকে আদালতে তোলা হবে।

এদিকে এই হত্যার ঘটনার পর থেকে নানা সূত্র মতে, ভাড়াটে খুনি হিসাবে কাজ করেছেন সাদ্দাম, সালাউদ্দিন,  মো. কালুর নাম আলোচনায় আসছে। এর মধ্যে সাদ্দাম ও কালু এলাকায় দুর্ধর্ষ অপরাধী। তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে ডজন খানেক মামলা। সূত্রটি দাবি করেছেন, মামুনকে হত্যার সময় ধস্তাধস্তিতে সাদ্দাম জখম হয়। সে আত্নগোপনে কোথায় চিকিৎসা নিচ্ছে? এর মধ্যে কালু ও সালাউদ্দিনের গতিবিধিও সন্দেহ জনক বলে মন্তব্য করেন সূত্রটি।

ঘটনার পর অনুসন্ধানে উঠে আসা সাদ্দাম, সালাউদ্দিন, মো. কালুর বক্তব্য নেয়ার জন্য নানা ভাবে চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি। যার কারনে বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।