ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ঘুমন্ত স্বামীকে ডেকে তোলায় স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যা

ঘুমন্ত স্বামীকে ডেকে তোলায় স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যা

বাড়ির পোষা গরুকে খাওয়ার পানি দেওয়ার জন্য ঘুমন্তস্বামীকে ডেকে তোলেন স্ত্রী। আর এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে স্ত্রীর গলা চিপে ধরেন স্বামী। এসময় স্ত্রীর শরীর নিন্তেজ হয়ে গেলে বিছানায় ফেলে আলু ক্ষেতে সেচ দিতে যান তিনি। বাড়িতে ফিরে দেখেন স্ত্রীর শরীরে প্রাণ নেই। ঘটনা ভিন্নখাতে নিতে মৃত স্ত্রীর গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হয় রশি।

ঘটনা গত বছরের ৩১ ডিসেম্বরের রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের ছোট হাজিপুর তেলীপাড়া গ্রামের।

গতকাল রোববার বিকেলে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি জানান রংপুরের পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান আলী। এ ঘটনায় পুলিশ স্ত্রী হত্যার অভিযোগে স্বামী ছইদার সরদার ওরফে সহিদারকে শনিবার গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের ছোট হাজিপুর তেলীপাড়া ছইদার সরদারের সঙ্গে ১৪ বছর আগে বিয়ে হয় পাশের ডাঙ্গাপাড়া ডাকেরহাট এলাকার নিলুফা ইসয়ামিনের (৩০)। ছইদার সরদার কৃষি কাজের পাশাপাশি স্থানীয় বাজারে রাতে নৈশ প্রহরীর কাজ করতেন। দীর্ঘদিন ধরে তাদের দম্পত্তি কলহ লেগেছিল।

গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর ভোরে ছইদার নৈশ প্রহরীর কাজ শেষে বাড়িতে এসে ঘুমান। ওই দিন দুপুরে তার স্ত্রী নিলুফা ইয়াসমিন বাড়িতে থাকা গরুকে পানি খাওয়ানোর জন্য ঘুমন্ত স্বামীকে ডাকেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ছইদার নিলুফা ইয়াসমিনের গলা চিপে ধরেন এবং দুই তিন মিনিট পর গলা থেকে হাত সরালে নিলুফা নিস্তেজ হয়ে যান। এ সময় তাকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে রেখে আলু ক্ষেতে সেচ দিতে যান।

আধাঘণ্টা পর বাড়ি ফিরে চিৎকার শোরগোল শুনে তার স্বামী দেখেন নিলুফার দেহে প্রাণ নেই। এই ঘটনা ভিন্নখাতে নিতে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সহযোগিতায় গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছে বলে প্রচার চালায়। এবং বদরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। বদরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ সময় নিলুফার পক্ষে বাবা এবং স্বামীর পরিবারের কেউই অপমৃত্যু বা অন্য কোনো মামলা দায়ের করতে রাজি না হলে কর্মরত চিকিৎসক বিষয়টি থানায় অবহিত করেন। এরপর ওই দিনই থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা রুজু হয়।

অপমৃত্যু মামলার তদন্তকারী অফিসারের ওই গৃহবধূর মৃত্যু সম্পর্কে সন্দেহ হলে তিনি লাশ ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠান। এরপর ফরেনসিক রিপোর্টে নিলুফাকে শ্বাসরোধ করে হত্যার বিষয়টি উঠে আসে। পুলিশ ঘটনাটি নিহত গৃহবধূর বাবাকে আব্দুল মমিনকে জানালে তিনি জামাই ছইদার সরদার ও আব্দুল হাইসহ আরও দুই তিনজনকে অজ্ঞাতনামা করে শনিবার মামলা দায়ের করেন। এরপর পুলিশ ছইদার সরদারকে গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদে ছইদার পুলিশকে স্বীকারোক্তিমূলক জবান দেন। এরপর তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠান।

এ বিষয়ে পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান বলেন, চাঞ্চল্যকর না হলেও ঘটনাটি সচেতনতার বার্তা দেয়। অপমৃত্যু বলে ওই গৃহবধূর পক্ষে কেউ অভিযোগ করেনি। আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার চালানো হয়। অথচ পুলিশ ময়নাতদন্ত করলে তা হত্যার ঘটনা উদঘাটন হয়। নিহত গৃহবধূর স্বামী হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করে ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন। তাকে শনিবারই আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, সমাজে বিভিন্ন সময় এরকম সুইসাইটাল ঘটনা ঘটে। বিষ খেয়ে ফাঁস দিয়ে মরার খবর আসে। তখন পরিবারের লোকজন, স্থানীয় লোকজনের সন্দেহ থাকলেও তারা পুলিশকে বিনা ময়নাতদন্তে লাশ দাফনের জন্য আবেদন করে। বিভিন্ন লোকজন দিয়ে তদবির করার চেষ্টা করে। পুলিশ আইন অনুযায়ী লাশ ময়নাদন্তের জন্য পাঠায় বলেই আজ এরকম একটি হত্যাকান্ডের ঘটনা উদঘাটন হলো এবং এটি বিচারের আওতায় আসলো। কাজেই এরকম ঘটনা যদি কোথাও ঘটে তাহলে সমাজে যারা আছে তাদের সবারই উচিৎ হবে, যদি সন্দেহ থাকে তাহলে ময়নাতদন্ত করে লাশ দাফন করা।

শ্বাসরোধ,হত্যা,রংপুর
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত