এক যুগেও শেষ হয়নি নাট্যকার চঞ্চল হত্যাকাণ্ডের বিচার
প্রকাশ : ১৫ জুলাই ২০২৪, ১৯:৫৭ | অনলাইন সংস্করণ
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত তরুণ নাট্যকার দিদারুল ইসলাম চঞ্চল হত্যাকান্ডের ১২ বছর আজ। এই এক যুগেও রহস্যের জট না খুললেও ইতিমধ্যে মামলার বিচার শুরু হয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। বারবার তদন্তকারী কর্মকর্তা বদল এবং চার্জশীটের বিরুদ্ধে নারাজীর পর মামলাটির সর্বশেষ তদন্তকারী সংস্থা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি’র পরিদর্শক আদালতে চার্জশীট দাখিল করার প্রেক্ষিতে বিচার কাজ শুরু হলেও দীর্ঘ ১২ বছরেও শেষ হয়নি বিচার কাজ।
জানা গেছে, ২০১২ সালের ১৬ জুলাই গভীর রাতে বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয় চঞ্চল। রাত ৩টায় চঞ্চল, তার বন্ধু মীম প্রধান, রাকিব ও শফিক একত্রে নগরীর ২নং রেলগেট এলাকার একটি দোকানে চা-নাস্তা খেয়েছিল। নিহত চঞ্চলের মোবাইলে রাত ৩টা ৯ মিনিটে সর্বশেষ কল করেছিল মীম প্রধানের আত্মীয় মেহেদী হাসান রোহিত। সে মীমের সঙ্গে তাকে দেখা করতে বলে। এরপর থেকে চঞ্চল নিখোঁজ হয়। পরে ১৮ জুলাই শীতলক্ষ্যা নদীতে বন্দর উপজেলার শান্তিনগর এলাকা থেকে অজ্ঞাত পরিচয় হিসেবে চঞ্চলের লাশ উদ্ধার করে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করে ফেলে পুলিশ। খবর পেয়ে ১৯ জুলাই লাশের ছবি ও পরিধেয় কাপড় দেখে উদ্ধার করা লাশটি চঞ্চলের বলে শনাক্ত করে নিহতের বড় ভাই জোবায়ের ইসলাম পমেল। ২০১৫ সালের ১৯ অক্টোবর চঞ্চল হত্যা মামলায় পাঁচজনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করে তদন্তকারী সংস্থা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ওই ৫ জন হলো চঞ্চলের বন্ধু মেহেদি হাসান রুহিত, মীম প্রধান, রাকিব, রাশেদ, শফিক। ২০১৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি চার্জশীটের বিরুদ্ধে আদালতে না রাজি পিটিশন দায়ের করেন মামলার বাদী নিহত চঞ্চলের মা খালেদা আক্তার রুবিনা। না রাজী পিটিশনে রুবিনা উল্লেখ করেছিলেন, ২০১২ সালের ১৬ জুলাই গভীর রাতে বাসা থেকে বের হয় চঞ্চল। পরে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে লাশ উদ্ধার করা হয় তার। ২০১২ সালের ১৯ জুলাই বন্দর থানা পুলিশের এসআই গোলজার হোসেন দিদারুল ইসলাম চঞ্চল নিহতের ঘটনায় মামলা দায়ের করেন। কিন্তু নিহতের মা সন্দেহভাজনদের নাম বলা সত্ত্বেও তাদের গ্রেপ্তার করেনি এবং জিজ্ঞাসাবাদ করেনি।
পরে ওই বছর ১৪ আগস্ট চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে কাজী মেহেদী হাসান রুহিত, রাসেদ, রাকিব, শফিউল্লাহ শফি ও মিম প্রধানকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। পরে আদালতে মামলাটি গ্রহন করে তদন্তের নির্দেশ দেন। কিন্তু মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শুধু মাত্র রাকিব ও মিম প্রধানকে গ্রেপ্তার করলেও বাকী আসামীদের গ্রেপ্তার ও জিজ্ঞাসাবাদ করেনি।
এছাড়াও এমনকি কোন স্থানে, কে ভিকটিম চঞ্চলকে ছুরি দ্বারা আঘাত করে হত্যা করেছে তাও চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়নি। ভিকটিমের ভাই জুবায়েদ ইসলাম পামেল তার ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬১ ধারা জবানবন্দি কালে জনৈক আফরিন এর নাম বলেন এবং উক্ত আফরিন চঞ্চলের বিপদ সম্পর্কে জ্ঞাত ছিল জবানবন্দিতে জানান। কিন্তু আফরিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। এছাড়াও চার্জশিটে বিভিন্ন বিষয় ত্রুটিপূর্ন রয়েছে। চার্জশীটের বিরুদ্ধে না রাজি পিটিশন দায়ের করে পুণরায় তদন্তের দাবি করা হয়েছিল। ওই বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর বাদীর নারাজি পিটিশন আবেদন মঞ্জুর করে মামলাটি পুণরায় তদন্ত করে ঢাকা মালিবাগ সিআইডিকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন আদালত। এদিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক মোঃ কাইউম বেশ কিছুদিন পূর্বে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। যার প্রেক্ষিতে চার্জ গঠনের পরে মামলাটির বিচার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
নিহত দিদারুল ইসলাম চঞ্চলের বড় ভাই জোবায়ের ইসলাম পমেল বলেন, ডিবি পুলিশের কর্মকর্তা চার্জশীটে যে ৫ জনের নাম উল্লেখ করেছিল সিআইডির পরিদর্শকও চার্জশীটে সেই ৫ জনের নামই উল্লেখ করেছে। সিআইডির পরিদর্শকের চার্জশীটে কারো কোন জবানবন্দী নেয়া হয়নি। চার্জশীট আদালতে কবে দাখিল করা হয়েছে সেটিও আমরা জানতাম না। সাক্ষীর সমন পাওয়ার পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি আদালতে চার্জশীট দাখিল করা হয়েছে। সিআইডির পরিদর্শকের দাখিলকৃত চার্জশীট দেখেও আমাদের পরিবারের সবাই হতাশ হয়েছি। যে কারণে আমরা পূর্বতন চার্জশীটের নারাজি দিয়েছিলাম তার কোন সুফল পাইনি। ইতোমধ্যে আদালতে ১০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে।
উল্লেখ্য নিহত দিদারুল আলম চঞ্চল নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজের অনার্স বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিল। মাত্র ২০ বছর বয়সেই চঞ্চল একজন সফল নাট্যকার হিসেবে খ্যাতি অর্জন করে। মুক্তিযুদ্ধের ৪০ বছর উপলক্ষে ঢাকা শিল্পকলা একাডেমিতে যে ১০০টি মুক্তিযুদ্ধের নাটক মঞ্চস্থ হয় তার মধ্যে চঞ্চলের রচিত ‘বক্তাবলী’ নাটকটিও মঞ্চস্থ হয়। ওই নাটকের জন্য শ্রেষ্ঠ নাট্যকার হিসেবে পুরস্কৃত করা হয় তাকে।