ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কক্সবাজারে মালখানার অস্ত্রসহ মালামাল লুটের চেষ্টা

দুই মাসেও শনাক্ত হয়নি মূল অপরাধী

দুই মাসেও শনাক্ত হয়নি মূল অপরাধী

কক্সবাজারে মালখানা ভবনের দেয়াল ফুটো করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর জব্দকৃত অস্ত্রসহ গুরুত্বপূর্ণ মালামাল চুরির চেষ্টার ঘটনা দুই মাস অতিবাহিত হলেও এখনও ধরা পড়েনি মূল অপরাধী। কক্সবাজার শহরের ডিসি ও কোর্ট সংলগ্ন মালখানার মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় চুরির চেষ্টার ঘটনা সচেতন মহলকে ভাবিয়ে তুলেছে। উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন মহল।

যদিও ঘটনার পরপর সন্দেহভাজন পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ। তাদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। এই ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে মালখানার দায়িত্বরত পুলিশ পরিদর্শক আনিসুর রহমানকে রাঙ্গামাটি বদলি করা হয়েছে।

অন্যদিকে এঘটনায় কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত মো.শাকিল আহমেদকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) অলক বিশ্বাস, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. মিজানুর রহমান।

মামলার বাদী ও কক্সবাজার সদর কোর্টের মালখানার অতিরিক্ত দায়িত্বশীল উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শামীম হোসাইন তার এজাহারে দাবি করেন, গত ৩ জুলাই কোর্টের যাবতীয় কাজ সেরে কোর্ট পুলিশের পরিদর্শকে অবগত করে তালা লাগিয়ে চলে যায়। পর দিন মালখানার সীলগালা ও চাবী দিয়ে তালা খোলার সাথে সাথে দক্ষিণ -পশ্চিম কোনে ছাদের লিন্টারের নিচে দেয়াল ভাঙা পায়। বিষয়টি তৎক্ষানিক কোর্ট পুলিশ পরিদর্শকে অবগত করা হলে ভেতরে পরিদর্শন করেন এবং ভাঙা স্থান থেকে একটি লোহার কোরাবানী, দুইটি হেসকো ব্লেড ও দুই জোড়া কেডস জুতা উদ্ধার করা হয়। ওই সময় সিনিয়র কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

এজাহারের ভাষ্যমতে, কোর্ট মালখানায় ২৭,৫৩২ টি সিএমআর এ নগদ, স্বর্ণালংকার, অস্ত্র, গুলি, ইয়াবা, গাঁজাসহ অসংখ্য আলামত রয়েছে। তবে কি আলামত চুরি হয়েছে, তা নির্ণয় করা যায়নি বলে উল্লেখ করেন মামলার বাদি।

মামলার বাদী ও কক্সবাজার সদর কোর্টের মালখানার অতিরিক্ত দায়িত্বরত উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শামীম হোসাইন বলেন, আমি শুধু চুরির চেষ্টার অপরাধে অজ্ঞাত এজাহার দিয়েছি। বিষয়টি সদর মডেল থানার একজন কর্মকর্তা তদন্ত করছেন। তিনি দাবি করেন, মালখানা থেকে কোন মাল খোয়া যায়নি।

যোগাযোগ করা হলে মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা, কক্সবাজার সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আব্দুস সাত্তার জানান, এঘটনায় এপর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আদালতে প্রত্যেকের পাঁচ দিন করে রিমান্ড আবেদন করা হয়। দুই করে রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। তার প্রেক্ষিতে পৃথক ভাবে দুই দিন করে রিমান্ডেও আনা হয়েছে তাদের।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, নানা ভাবে চেষ্টা করেও রিমান্ডে তারা এই ঘটনার ব্যাপারে মুখ খুলেনি। তবুও এই ঘটনায় কারা জড়িত তাদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। গ্রেফতারকৃতরা কক্সবাজারের চিহ্নিত অপরাধী। তাদের বিরুদ্ধে পূর্বেরও মামলা রয়েছে।

তদন্তকালে মালখানার কোন মালামাল খোয়া গেছে কিনা এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এপর্যন্ত এই ধরনের তথ্য মিলেনি। বিষয়টি তদন্ত চলমান রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এই ঘটনায় পশ্চিম নতুন বাহারছড়া এলাকার জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে গিয়াস উদ্দিন প্রকাশ নাগু (২৪), চৌফলন্ডী এলাকার মৃত আব্দুস শুক্কুরের ছেলে রাইতুল্লাহ (২২), ভারুখালী এলাকার আইয়ুব আলীর ছেলে মো. আলম মিয়া (২১), ঈদগাহ মাছুয়াখালী এলাকার মৃত কবির আহমেদ এর ছেলে মো. রায়হান ও সমিতিপাড়া এলাকার সাজ্জাদকে গ্রেফতার করা হয়। তারা কারাগারে রয়েছে। পুলিশের তথ্য মতে, গ্রেফতারকৃতরা সবাই কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন স্থানের বাসিন্দা হলেও তারা সবাই শহরের সমিতি পাড়া এলাকায় ভাড়া বাসা নিয়ে বসবাস করে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রেফতারকৃতরা কক্সবাজার শহরের চিহ্নিত অপরাধী।

মালখানায় তৎকালীন দায়িত্বরত পুলিশ পরিদর্শক আনিসুর রহমানের সাথে গতকাল যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ঘটনার সময় আমি কর্মস্থলে ছিলাম না। তবে কোন মালামাল খোয়া যায়নি। ৬-১০ ইঞ্চি ফুটো দিয়ে তো কেউ ডুকতে পারবে?

এক পর্যায়ে জবাবে তিনি বলেন, তবুও রক্ষিত মালামালগুলো গণনা করা হয়েছে। এখনো নতুন কাউকে দায়িত্ব দেয়নি। দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে পারলে আমি চলে যাব।

গতকাল তদন্ত কমিটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার এক কর্মকর্তার সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, মালখানা ভবনের দেয়াল ফুটো করে শৃঙ্খলা বাহিনীর জব্দকৃত অস্ত্র সহ গুরুত্বপূর্ণ মালামাল লুটের পরিকল্পনা ছিল। তবে যেই পরিমাণ দেয়াল ফুটো করা হয়েছে, তাতে কেউ প্রবেশ করতে পারেনি। তদন্তে তা প্রতীয়মান হয়েছে।

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। গুরুত্বপূর্ণ সহকারে খতিয়ে দেখা হয়েছে। এবং এই কাজে জড়িত মূল অপরাধীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি মালখানায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

কক্সবাজার
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত