নারায়ণগঞ্জে ছাত্র আন্দোলনে সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ শতাধিক
প্রকাশ : ০৪ আগস্ট ২০২৪, ১৭:৫৩ | অনলাইন সংস্করণ
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
নারায়ণগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
রোববার ৪ আগষ্ট দুপুর ১২টার দিকে ফতুল্লার চাঁদমারীস্থ নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার কার্যালয় প্রাঙ্গনে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে এ ঘটনা ঘটে।
আন্দোলনকারীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ও পুলিশ সুপার কার্যালয়ে ভাংচুর চালানোর চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ছাত্র জনতার সংঘর্ষ বেঁধে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ বিপুল সংখ্যক টিয়ারসেল ও গুলি ছুড়ে। এতে শিক্ষার্থীসহ শতাধিক গুলিবিদ্ধ হয়েছে। গুলিবিদ্ধ শতাধিক ব্যাক্তিকে শহরের খানপুরস্থ নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, রোববার ৪ আগষ্ট থেকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড সংলগ্ন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সর্বাত্মক অসহযোগের ডাক দেওয়া হয়। সেই অসহযোগের আহবানে সাড়া দিয়ে সকাল ৯টার দিকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার বিসিক শিল্পনগরী ও ফতুল্লার কায়েমপুর এলাকায় গার্মেন্টস শ্রমিকরা ছুটি চাইলে মালিকপক্ষ ছুটি দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এসময় তৈরি পোশাক কারখানায় ভাঙচুর করেছে আন্দোলনকারীরা। পরে এসব কারখানার পাশাপাশি আশপাশের সব কারখানা ছুটি দিতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে শহরের শিবুমার্কেট থেকে শ্রমিক জনতা বের হয়ে ছাত্রদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার চাঁদমারীস্থ নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার কার্যালয় প্রাঙ্গনে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে অবস্থান নেয়
এসময় আন্দোলনকারীরা নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদ কার্যালয় ভাংচুর করে ও কয়েকটি যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দেয়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিক্ষুব্দরা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার কার্যালয়ে ভাংচুর চালানোর চেষ্টা চালালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ছাত্র জনতার সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এসময় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থিম পার্কে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ বিপুল সংখ্যক টিয়ারসেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও গুলি ছুড়ে। এতে স্কুলছাত্রসহ অন্তত অর্ধশতাধিক গুলিবিদ্ধ হয়েছে।
বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত গুলিবিদ্ধ অন্তত শতাধিক ব্যাক্তিকে শহরের খানপুরস্থ নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। গুলিবিদ্ধদের মধ্যে প্রাইমারী স্কুলছাত্র সাগর (১১), শিক্ষার্থী রিয়াজুল (১৭), নিটিং শ্রমিক সামি (১২), পরিবহন শ্রমিক ফাহিম (১৬), গার্মেন্টস শ্রমিক বাবু (২৩), আকাশ (২২), রাতুল (২০), শরীফ (১৮), জোবায়ের আহমেদ (২০), আশরাফুল, সাগর, সিফাতের নাম জানা গেছে।
এছাড়াও রোববার দুপুরে আন্দোলনকারীরা ফতুল্লা মডেল থানায় ভাংচুর করার চেষ্টা করলে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এসময় বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। পুলিশের গুলিতে আন্দোলনকারীদের অনেকেই গুলিবিদ্ধ হয়েছে। তবে তাৎক্ষণিক তাদের নাম পরিচয় জানা যায়নি।
এদিকে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্র চাষাঢ়ায় আন্দোলনরত ছাত্ররা অবস্থান নেয়। এসময় ছাত্রদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে যোগ দেন জনতা। দুপুর ১২টার দিকে শহরের চাষাঢ়াস্থ নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবে ভাংচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। পাশের পুলিশ বক্সেও ভাংচুর চালানো হয়। এরপর পাশর্^বর্তী আজগর পেট্রোল পাম্পে থাকা শীতল পরিবহনের ২টি এসি বাসে ভাংচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা পানি ঢেলে সেই আগুন নিভিয়ে দেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কোন ধরনের নাশকতা না করার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ জানান।
বিকেল সাড়ে ৪ টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত চাষাঢ়া বিজয়স্তম্ভ মোড় ছিল আন্দোলনকারীদের নিয়ন্ত্রণে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ‘উই ওয়ান জাস্টিস’, ‘শহীদ হওয়া শিক্ষার্থীদের রক্ত বৃথা যেতে দিব না’ ‘লেগেছে রে লেগেছে রক্তে আগুন লেগেছে’ সহ বিভিন্ন ¯েøাগানের প্রকম্পিত করে তোলে চাষাঢ়া এলাকা। চাষাঢ়ায় প্রবেশের বিভিন্ন সড়কে বাশের ব্যারিকেড দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানায়, দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরবো না। আমাদের ভাইদের রক্ত বৃথা যাবে না। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করছি। এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল মোড়েও শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়েছে। তবে সেখানে কোন ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি।
নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের চিকিৎসা তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল বাশার জানান, অত্র হাসপাতালে জরুরী বিভাগে শতাধিক ব্যাক্তিকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে যাদের সকলেই ছররা গুলিতে বিদ্ধ হয়েছেন। গুলিবিদ্ধদের মধ্যে অনেককে ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। বাকীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। অত্র হাসপাতালে কেউ মারা যায়নি।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কার্যালয়ের কার্যালয়ের সামনে বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। সেই সাথে সেনাবাহিনীর সহায়তা চাওয়া হয়েছে।