প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর অভিযান
নেত্রকোণায় অবৈধ দখলদারমুক্ত হলো কোটি টাকা রাজস্বের হাট
প্রকাশ : ১৩ আগস্ট ২০২৪, ১৪:৪৮ | অনলাইন সংস্করণ
নেত্রকোণা প্রতিনিধি
অবশেষে প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে আজ (১২আগস্ট) সরকারের নিয়ন্ত্রণে এসেছে নেত্রকোণার বারহাট্টা উপজেলার কোটি টাকা রাজস্বের একটি গরুর-হাট। দীর্ঘ ৪০বছর ধরে উপজেলার চিরাম ইউনিয়নের নৈহাটিতে অবৈধভাবে গরুর-হাট বসিয়ে বছরে কোটি টাকা চাঁদা আদায় করে আসছিলেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারজানা আক্তার ববি দিনভর হাটে উপস্থিত থেকে খাস-কালেকশানের মাধ্যমে হাটে সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছেন। এ সময় সেনাবাহিনীর মেজর নাজমুশ সাকিব ও সঙ্গীয় ফোর্স উপস্থিত ছিলেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারজানা আক্তার ববি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা যায়, চিরাম ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও নৈহাটী গ্রামের বাসিন্দা আমিরুল ইসলাম, তার ভাই আলামীন ও তাদের লোকজন স্থানীয় একটি ওয়াকফ এস্টেট ও মাদ্রাসাকে সাহায্যের নামে নৈহাটীবাজারের পাশে চিরাম মৌজার ১০২২, ১৬৫৪ ও ১৮৪৩ নং খতিয়ানের ৪৭৯৪, ৪৭৯৩ ও ৪৭৯৫ নং দাগের ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ৩০-৪০বছর ধরে গরুর হাট পরিচালনা করে আসছিলেন। এ নিয়ে মামলা হলে তারা বাজারটিকে নৈহাটি মৌজায় সরিয়ে নেয় ও টোল কালেকশানের নামে চাঁদা আদায় অব্যাহত রাখেন। প্রশাসনের কাছে অভিযোগ ও আদালতে মামলার পরও তাদের দখলমুক্ত করা যায়নি বাজারটি। প্রতি সোমবার হাট বসে এখানে। প্রতি হাটে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা কালেকশান হয়। এই হিসাবে বছরে দেড় কোটি টাকার বেশী আয় করেছেন তারা।
চিরাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান চৌধুরী বলেন, প্রতি হাটবার উপলক্ষে গরুবোঝাই চার-পাঁচশত ভারী ট্রাক ইউনিয়নের বিভিন্ন সড়ক দিয়ে এখানে আসা যাওয়া করে। এতে সড়কগুলো খুব তাড়াতাড়ি ভেঙ্গে গেছে। ইউনিয়ন পর্যায়ের সড়কগুলো হালকাযান চলাচলের উপযোগী করে তৈরী করা হয়। গরুরহাটের কারণে সরকারের অনেক টাকার ক্ষতি হয়েছে।
স্থানীয় অনেকের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা অনিয়মের প্রতিকারে কার্যকর কোন উদ্যোগ দেখা যায় না। এ ব্যাপারে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে জনমনে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। হাট-বাজারের নীতিমালা প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০ এর ২০ ধারা অনুযায়ী যে কোন ব্যক্তিমালিকানাভূক্ত জমিতে হাট-বাজার গড়ে উঠলে তাহা দায়হীনভাবে সরকারের উপর বর্তাবে বা সরকার ওই হাট-বাজার বাজেয়াপ্ত করতে পারবে। অথচ, নৈহাটী গরুরহাট যুগ যুগ ধরে বেসরকারীভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে। আজ (১২আগস্ট) বাজার সরকারি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ায় প্রশাসন ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তারা।
অভিযুক্ত সাবেক চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম সেনাবাহিনীর হেফজত ও তার ভাই আল-আমীন আতœগোপনে থাকায় তাদের সাথে কথা বলা সম্ভব হয় নাই। তবে, এই হাটের ব্যাপারে অতিতে আল-আমিন বলেছিলেন- ‘গরুর-হাটের অধিকাংশ জায়গা নৈহাটী হেফজুল কোরআন আশরাফিয়া মাদ্রাসার নামে ওয়াক্ফ্ করা। ওয়াক্ফ্ এস্টেটের অনুমোদিত একটি কমিটির মাধ্যমে গরুরহাট পরিচালিত হয়। আমি এই কমিটির একজন সদস্য। কমিটি দায়িত্ব দেওয়ায় আমি গরুর হাট পরিচালনা করি। আয় যা হয়, তার সব ওই মাদ্রাসা ও এতিমখানার খাতে জমা হয়। এ ছাড়া, ওয়াক্ফ্ এস্টেটকে বছর বছর খাজনা পরিশোধ করা হয়। এস্টেটের অফিসার প্রতিবছর আয়-ব্যয়ের হিসাব অডিট করেন। একটি কুচক্রি মহল ওয়াক্ফ্ এস্টেটের সম্পত্তি ভোগ-দখলের জন্য বিভিন্ন অভিযোগে মামলা করে। মামলার রায় ওয়াক্ফ্ এস্টেটের অনুকুলে হয়েছে।’
ইউএনও ফারজানা আক্তার ববি বলেন, সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতার কারণে হাটে সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়েছে। সোনাহিনী ছাড়াও এলাকার জনপ্রতিনিধিগণ সাহায্য করেছেন। নিয়ন্ত্রন ধরে রাখার জন্য সকলের সহায়তা কামনা করেন তিনি।