ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নাশকতার ছক

১৫ আগস্ট ঘিরে কক্সবাজারে সক্রিয় হচ্ছে আওয়ামী লীগ

মাঠে থাকার ঘোষণা বিএনপি'র
১৫ আগস্ট ঘিরে কক্সবাজারে সক্রিয় হচ্ছে আওয়ামী লীগ

১৫ আগস্টকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করতে নানা কৌশলে সক্রিয় হয়ে উঠছেন আত্নগোপনে থাকা আওয়ামী লীগ ও তাঁর সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। ইতিমধ্যে আত্নগোপনে থাকা শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দরা মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের সক্রিয় করতে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলে নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। যার ফলে কক্সবাজারের শান্ত পরিবেশ অশান্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে ১৫ আগস্টকে কেন্দ্র করে নাশকতা ঠেকানো সহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি ও তাঁর সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। বুধবার (১৪ আগষ্ট) ও বৃহস্পতিবার (১৫ আগষ্ট) বিএনপি তথা সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের মাঠে থাকার কঠোর নির্দেশনা দিয়ে দুইদিনের কর্মসূচি ঘোষনা করেছে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে কক্সবাজার জেলা বিএনপি কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি সফল করার লক্ষে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বলে জানিয়েছেন একাধিক নেতৃবৃন্দ।

অন্যদিকে মঙ্গলবার থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে সপ্তাহব্যাপী 'রেজিস্ট্যান্স উইক' শুরু হয়েছে।

গেল ৫ আগস্ট হাসিনার পতনের পর আত্নগোপনে চলে গেছেন অনেক আ.লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতারা। গত কয়েকদিনে কিছু সংখ্যাক নেতাকর্মী এলাকায় ফিরেছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। আত্নগোপন থেকে এলাকায় ফিরে আসা নেতাকর্মী নানা কৌশলে ১৫ আগস্ট মাঠে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির লক্ষে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। সোম ও মঙ্গলবার কক্সবাজার শহরের আলোচিত অনেক নেতাকর্মীদের আনাগোনা করতে দেখা গেছে। এর মধ্যে গত ১৮ জুলাই কক্সবাজার শহরে প্রকাশ্যে ছাত্র- জনতার উপর অস্ত্রবাজ নেতাও রয়েছে। এমনকি ৩ আগস্ট কক্সবাজার জেলা বিএনপি কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগকারী চক্রটিও মাঠে ফিরেছে। তারা নতুন করে মাঠে নামার হুংকার দিচ্ছে নানা কৌশলে।

মঙ্গলবার দুপুরে উখিয়া উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক আহবায়ক আরাফাত হোসেন চৌধুরী বলেন, কেন্দ্রীয় ঘোষিত কর্মসূচির আলোকে ১৪ ও ১৫ আগস্ট মাঠে থাকব। ঘোষিত কর্মসূচির আলোকে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ পালন করব। যদি ১৫ আগস্টের নামে আ.লীগ যদি মাঠে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করে তা কঠোর ভাবে প্রতিহত করা হবে বলে হুশিয়ারি দেন তিনি।

কক্সবাজার জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক জিসান উদ্দিন বলেন, শুধু ১৫ আগস্ট নয়, কোনোভাবেই স্বৈরাচার আওয়ামী লীগকে নতুন করে কক্সবাজারে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সুযোগ দেয়া হবে না। কেন্দ্রীয়ভাবে ঘোষিত কর্মসূচি পালনে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, নতুন সরকারকে যাতে কেউ নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বিতর্কিত করতে না পারে সেজন্য জেলা জুড়ে যুবদলের নেতৃবৃন্দ সজাগ রয়েছে।

কক্সবাজার জেলা বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রাশেদুল হক রাশেল বলেন, স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটিয়ে গঠিত নতুন সরকারকে যাতে কেউ নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বিতর্কিত করতে না পারে, সেজন্য বিএনপি নেতাকর্মীরা সজাগ রয়েছে। শান্ত কক্সবাজারে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে দেয়া হবে না বলে হুশিয়ারি দেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, বুধ ও বৃহস্পতিবার কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি পালনে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।

কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী বলেন, খুনি হাসিনার বিচারের দাবীতে বুধ ও বৃহস্পতিবার দুই দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। তার আলোকে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। এসময় তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের সজাগ থাকার আহবান জানিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে মঙ্গলবার কয়েকদফা কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিগত মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সংযোগ না পাওয়ায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

মঙ্গলবার বিকেলে কয়েকদফা কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মাহফুজুল ইসলাম ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. রফিকুল ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি তার মুঠোফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। এমনকি এসপিকে তার হোয়াটসঅ্যাপ এসএমএস দেয়ার পরও সাড়া পাওয়া যায়নি।

বিএনপির ঘোষিত কর্মসূচিতে যেসব দাবি রয়েছে-

বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় দেশপ্রেমিক চৌকস সেনা কর্মকর্তাদের বর্বরোচিত হত্যা, হেফাজতের আলেমদের উপর সংঘটিত নিষ্ঠুরতম গণহত্যা, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনিকে নির্মমভাবে হত্যা, বিগত ১৭ বছর ধরে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে লড়াই করা ইলিয়াস আলীসহ বিএনপি ও সমমনা বিরোধী রাজনৈতিক দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে গুম-খুন-হত্যা-নির্যাতন-নিপীড়ন এবং সর্বশেষ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার উপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে শত শত প্রাণ কেড়ে নেয়ার সরাসরি নির্দেশদাতা স্বৈরাচারী খুনী হাসিনার বিচারের দাবি।

.বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচিঃ

মঙ্গলবার থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে সপ্তাহব্যাপী "রেজিস্ট্যান্স উইক" শুরু হয়েছে। কর্মসূচির অংশ হিসেবে সারাদেশে যেসকল স্থানে আমাদের জাতীয় বীরেরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন, সেসব পয়েন্ট অভিমুখে ‘রোডমার্চ’ কর্মসূচি পালিত। রোডমার্চে সংশ্লিষ্ট স্থানে জড়ো হয়ে আমরা ❝এক মিনিট নিরবতা পালন করবো এবং শহীদদের স্মরণে দোয়া ও প্রার্থনা করবো❞।

দাবি সমূহঃ

১. ফ্যাসিবাদী কাঠামোকে ব্যবহার করে ফ্যাসিস্ট হাসিনা এবং তার দল ও সরকার‍ যে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, সেগুলোর দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে।

২. সংখ্যালঘুদের উপর আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী মহাজোটের শরিক দলগুলোর পরিকল্পিত হত্যা, ডাকাতি ও লুণ্ঠনের মাধ্যমে গণ-অভ্যুত্থানকে বিতর্কিত করার প্রচেষ্টায় অংশগ্রহণকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে এবং সংখ্যালঘুদের ন্যায্য দাবি মেনে নিতে হবে।

৩. প্রশাসন ও বিচার বিভাগে যারা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হামলা, মামলা, এবং হত্যাযজ্ঞকে বৈধতা দিয়েছে এবং ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বারংবার কায়েমের চেষ্টা করছে, তাদের দ্রুততম সময়ে অপসারণ ও নূতন সরকারে তাদের নিয়োগ বাতিল করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

৪. প্রশাসন ও বিচার বিভাগে যারা এতদিন বৈষম্যের শিকার হয়েছে, তাদের জন্য দ্রুততম সময়ে সুযোগের সমতা নিশ্চিত করতে হবে।

১৫ আগস্ট,আওয়ামী লীগ
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত