নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং বিভাগে কর্মরত থাকা আবুল হাসান স্বজন নিহতের ঘটনায় মামলা করা হয়েছে।
শনিবার (১৭ আগস্ট) রাতে আবুল হাসানের ভাই আবুল বাশার অনিক বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় এই মামলা দায়ের করেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, আওয়ামী লীগ দলীয় প্রধান ও সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল এবং সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জোনায়েদ আহমেদ পলক পরস্পর পরামর্শ করে ২নম্বর আসামী ওবায়দুল কাদেরকে নির্দেশ প্রদান করে সারা দেশের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ ও সন্ত্রাসীদের প্রকাশ্য নির্দেশ করে প্রতিটি পাড়া মহল্লায়, ওয়ার্ড ইউনিয়ন, থানা, মহানগর ও জেলায় ছাত্র জনতার যৌক্তিক আন্দোলনকে প্রতিহত ও নিমূল করার নির্দেশ প্রদান করেন।
সেই সাথে তাদের নির্দেশে গত ৫ আগস্ট দুপুরে আওয়ামীলীগ দলীয় সাবেক এমপি একেএম শামীম ওসমান, জাতীয় পার্টি দলীয় সাবেক এমপি একেএম সেলিম ওসমান, জেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারী আবুল হাসনাত মোঃ শহিদ, প্রয়াত এমপি নাসিম ওসমানের পুত্র আজমেরী ওসমান, শামীম ওসমানের পুত্র অয়ন ওসমান, মহানগর আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম, জেলা আওয়ামীলীগের নেতা নাসির উদ্দিন ওরফে টুন্ডা নাসির, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও শামীম ওসমানের চাচাতো শ্যালক এহসানুল হক নিপু, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ, শামীম ওসমানের শ্যালক নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক তানভীর আহাম্মেদ টিটু, নাসিকের ১৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও মহানগর শ্রমিকলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান মুন্না, নাসিকের ১৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-১ আব্দুল করিম বাবু, বান্টি, নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম রাফেল, নাসিকের ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ এবং সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের সভাপতি মতিউর রহমান মতি, নাসিকের ৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রুহুল আমিন, গোগনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফজর আলী, বন্দরের ছাত্রলীগ নেতা খান মাসুদ, তামাকপট্টি এলাকার শীর্ষ মাদক স¤্রাট জাতীয় পার্টির নেতা বিটু, কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাতীয় পার্টি নেতা দেলোয়ার প্রধান, মদনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুস সালাম, বাংলাদেশ ইয়ার্ন মার্চেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি লিটন সাহা, মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলী রেজা উজ্জ্বল, নাসিকের ১৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আওয়ামীলীগ নেতা মনির হোসেন, শহরের আমলাপাড়া এলাকার বাসিন্দা সুজিত সাহা, কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি এম সাইফউল্লাহ বাদল, বক্তাবলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী, বক্তাবলী পূর্ব গোপালনগর এলাকার বাসিন্দা মৃত আফসার আলীর পুত্র মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, আমলপাড়া এলাকার মোঃ রিফাত, ইসদাইর বুড়ির দোকান এলাকার বাসিন্দা আজমেরী ওসমানের ক্যাডার নাসির, আমলপাড়া বড়বাড়ি এলাকার মৃত বাবুল মিয়ার পুত্র শ্যামল, বন্দরের ফুলহর এলাকার ছাত্রলীগ নেতা অহিদুজ্জামান অহিদ, বন্দর তিনগাও উত্তরপাড়া এলাকার আমির মিয়ার পুত্র শুভ, বন্দর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাতীয় পার্টি নেতা এহসান উদ্দিন আহম্মেদ, কাঁচপুর এলাকার হোসেনের পুত্র ফয়সাল, দক্ষিণ লক্ষণখোলার শ্যামল দাসের পুত্র নির্ঝর দাস, নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি টিপু সুলতান, আজমেরী ওসমানের বন্ধু রামু সাহা, নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মহসিন, শামীম ওসমানের বিয়াই ফয়েজ উদ্দিন লাভলুর পুত্র মিনহাজুল বিকি, নগর খানপুরের সেলিম মিয়ার পুত্র রিয়েল, গোগনগর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের আজমীরের পুত্র বাপ্পিসহ অজ্ঞাত আরো ১৫০/২০০ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী প্রত্যেকের হাতে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র, রিভলবার, পিস্তল, কাটা রাইফেল, রামদা, চাকু, চাপাতি, হকিস্টিক সহ অন্যান্য অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সারা নারায়ণগঞ্জে প্রধান প্রধান সড়কপ্রদক্ষিণ করে আকাশে অস্ত্র দিয়ে ফাঁকা গুলি ও অন্যান্য সন্ত্রাসীদের হাতে থাকা ককটেল বোমা বিস্ফোরণ করে জনতাকে ভীতি প্রদর্শন করে রাজপথ থেকে বিতাড়িত করার চেষ্টা করে এবং চেষ্টাপর্যায়ে উক্ত সশস্ত্র মিছিল চাষাড়া গোল চত্বরে উপস্থিত হয়ে পূর্ব দিকে মিশনপাড়া মুখী রাস্তা ছাত্র ও জনতার অবস্থান দেখতে পেয়ে ক্ষীপ্ত ৬ ও ৭নং আসামীর নির্দেশে তাহাদের সঙ্গী আসামীগণ গত ৫ আগস্ট সোমবার আনুমানিক দুপুর ১টা ২০ মিনিটের দিকে তাদের আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে এলোপাথারি গুলি বর্ষণ করে মিশনপাড়া দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় সন্ত্রাসী অয়ন ওসমান তার হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে আমার ভাই আবুল হাসান স্বজনকে লক্ষ্য করে গুলি করিলে তা আমার ভাইয়ের বুকে গুলি বিদ্ধ হলে আমার ভাই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সন্ত্রাসী বৃষ্টির মত গুলি করিলে বিক্ষোভ কারী ছাত্র জনতার শরীরে বিভিন্ন জায়গায় গুলি বিশ হয় ও উক্ত গুলি বিদ্ধ ছাত্র জনতাকে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতাল ও নারায়ণগঞ্জ ভিক্টোরিয়া হাসাপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা করা হয়।
অভিযোগে আর বলা হয়, আমার গুলিবিদ্ধ ভাই স্বজনের সাঙ্গে থাকা সম্রাট হোসেন সুজন, শাহিন আহম্মেদ, ফয়েজ উল্লাহ সজল সহ অন্যরা তাকে ধরাধনি করে নারায়ণগঞ্জ ভিক্টোরিয়া হাসপাতারে নিয়ে গেলে তাহার অবস্থা খারাপ দেখে কর্তব্যরত ডাক্তার গুলিবিদ্ধ স্বজনকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বললে আমরা দ্রুত এম্বুলেন্স যোগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরী বিভাগে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করানো হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজের কর্তব্যরত ডাক্তার প্রাণপণ চেষ্টা করে চিকিৎসা করানোর পরও গুলিবিদ্ধ স্বজনকে গত ৬ আগষ্ট মঙ্গলবার ৫টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার কারনে মৃত্যুবরণ করেন। ডাক্তার গুলিবিদ্ধ ও চিকিৎসারত স্বজনকে মৃত ঘোষণা করিলে তাহার লাশ আমাদের গ্রামের নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানায় কুশিয়ারায় এনে দাফন করি। উক্ত হত্যা মানতবতা বিরোধী গণহত্যার শামিল। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ও পুলিশ ব্যবস্থা অপর্যাপ্ত থাকার কারণে ও আমাদের পরিবার শোকে শোকাহত থাকার কারণে মামলা দায়েরে বিলম্ব হলো।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সাত্তার মামলা দায়েরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
প্রসঙ্গত, আবুল হাসান স্বজন বন্দর উপজেলার বন্দর ইউনিয়নের কুশিয়ারা এলাকায় বেড়ে উঠেছে। পড়াশোনা করেছে হাজী আব্দুল মালেক উচ্চ বিদ্যালয়ে। নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং বিভাগে কাজ করতেন। স্বজন গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ শহরের মিশনপাড়া ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের গুলিতে আহত হন। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।