বরগুনায় উপকর কমিশনারের বিরুদ্ধে ৫০ লক্ষ টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগ

প্রকাশ : ১৮ আগস্ট ২০২৪, ১৬:৫৬ | অনলাইন সংস্করণ

  বরগুনা প্রতিনিধি

বরগুনায় উপকর কমিশনার প্রীতিশ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও বরগুনার সাবেক পৌর মেয়র মোঃ শাহাদাত হোসেন।

শনিবার বেলা সাড়ে ১২টায় বরগুনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সাবেক পৌর মেয়র শাহাদাত হোসেন জানান, আমি বরগুনায় আল-মামুন এন্টারপ্রাইজ লিঃ এর মাধ্যমে ঠিকাদারী ব্যবসা ও ঠিকাদারী কাজের জন্য পাথরঘাটার বাইনচটকী গ্রামে ওয়াপদার বেড়িবাঁধের বাইরে অনাবাদি জমিতে ২টি কোম্পানীর নামে ব্রিকফিল্ড চালিয়ে ইট এবং খোলা বাজার হইতে রড, সিমেন্ট ও অন্যান্য মালামাল ক্রয় করে মালামালগুলো পরিবহনের জন্য ১৪টি খোলা ট্রাক ২৪ মাসের কিস্তিতে এবং ২টি ট্রলার ক্রয় করে ঠিকাদারী কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছি।

কোম্পানী যে অর্থ বছরে নিবন্ধিত হয়েছে, সেই অর্থ বছর থেকে প্রতি বছর আমাদের প্রতিষ্ঠান আইন মোতাবেক আয়কর রিটার্ন দাখিল করি। যা সংশ্লিষ্ট আয়কর অফিস গ্রহন করে দীর্ঘদিন যাবৎ নিয়মিতভাবে আমাদের প্রতিষ্ঠান হতে দাখিলকৃত আয়কর রিটার্ন সম্পন্ন হয়েছে এবং আমাদের প্রতিষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠানের পরিচালকদের নিকট আয়কর বাবদ কোন অর্থ পাওনা নাই মর্মে প্রতি অর্থ বছরে প্রত্যয়নপত্র দিয়েছে । গত ২১ এপ্রিল বরগুনা উপ-কর কমিশনারের কার্যালয়, সার্কেল-১৫, কর অঞ্চল, বরিশাল, জানানো হয়  ২০১৯-২০২০ইং হইতে ২০২৩-২০২৪ইং অর্থ বছর পর্যন্ত আমাদের প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তির রিটার্ন সঠিকভাবে দাখিল করা হয়নি। যার ব্যাখ্যা ২৯ এপ্রিল তার দপ্তরে দাখিল করতে হবে। অন্যথায় আয়কর আইন-২০২৩ এর ২১২ ধারা মোতাবেক আয়কর মামলা করবর্ষ ২০১৯-২০২০ হতে ২০২৩-২০২৪ইং অর্থ বছর পর্যন্ত পুনঃ উন্মোচন করা হবে। পত্রটি প্রাপ্তির পর আমি এবং আমাদের প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য পরিচালকগণ নির্ধারিত তারিখে আলাদা আলাদাভাবে ব্যাখ্যা দাখিলের জন্য ৩ মাস সময় চেয়ে আবেদন করি। যা উপ-কর কমিশনার প্রীতিশ বিশ্বাস নিজে করে রাখেন। ঐদিনই তার অফিসের উজ্জ্বলনামক এক পরিদর্শক জনাব  সাহেব আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আসেন এবং কোম্পানীর ম্যানেজার মোঃ লুৎফর রহমান এবং হিসাব রক্ষক মাহবুবুল আলমের উপস্থিতিতে উপ-কর কমিশনার প্রীতিশ বিশ্বাসের বরাত দিয়ে ২৫ লক্ষ টাকা ঘুষ দাবী করেন।

তিনি আরও জানান, উপ-কর কমিশনার প্রীতিশ বিশ্বাস ইতোমধ্যে বরগুনার অনেক ব্যবসায়ীকে একইভাবে চিঠি দিয়ে তাদের কাছ থেকে কোন কোন ক্ষেত্রে ৫ লক্ষ, ১০ লক্ষ এবং সর্বোচ্চ কারো নিকট থেকে ১৫ লক্ষ টাকা নিয়ে বিষয়গুলি নিষ্পত্তি করেছেন। 

২৯ এপ্রিল সরাসরি আমাদের কোম্পানীর অফিসের ম্যানেজার মোঃ লুৎফর রহমান এবং হিসাব রক্ষক মাহবুবুল আলমকে নিয়ে আমি উপ-কর কমিশনার প্রীতিশ বিশ্বাসের অফিস কক্ষে গেলে উনি উল্লেখ করেন যে, আমার অফিস পরিদর্শক উজ্জল সাহেব আপনার নিকট যেভাবে আলোচনা করেছেন, সেইভাবে আপনি কাজ করেন, নইলে সমস্যায় পরবেন। এরপর আমি তার রুম থেকে যখন বের হয়ে আসি তখন চিৎকার দিয়ে বলে আসি যে, যেহেতু আমি ঠিকাদারী কাজ করি, সেহেতু আমাদের আয়ের চেয়ে অনেক বেশি আয়কর, বিল পরিশোধ কালে সংশ্লিষ্ট অফিস কর্তন করে রাখে। যেমন আমাদের বরাদ্ধকৃত কাজগুলিতে ব্যবসার পরিমান সামান্য। তার মধ্যে কর্মচারীর বেতনসহ সাইট ওভারহেড খরচ অনেক। অথচ আমাদের বিল হতে যথানিয়মে সরকার আয়কর কর্তন করে রাখে। সেক্ষেত্রে একমাত্র খোলা বাজার দিয়ে মালামাল ক্রয় করে সীমিত ব্যবসা করি। যা ব্যাংকের সুদ পরিশোধ করে আমাদের সামান্য কিছু ব্যবসা থাকে।

যেহেতু আমি উপ-কর কমিশনার প্রীতিশ বিশ্বাসকে ২৫ লক্ষ টাকা ঘুষ প্রদান করতে রাজি হইনি, বরগুনার উপ-কর কমিশনার প্রীতিশ বিশ্বাস সুকৌশলে বিভাগীয় কর কমিশানারকে প্রভাবিত করে বরিশাল উপ-কর কমিশনার লিংকন রায়ের মাধ্যমে তার কার্যালয় ১০ জুন ২০২১-২০২২ করবর্ষের আয়কর মামলা শুনানীর জন্য ২৩ জুন নির্ধারন করেন। নির্ধারিত তারিখে আমাদের আইনজীবি ও কোম্পানীর ম্যানেজার মোঃ লুৎফর রহমানের মাধ্যমে তাদের চাহিদা অনুযায়ী যাবতীয় কাগজপত্রসহ কোম্পানীর নির্বাহী পরিচালক স্বাক্ষরিত লিখিত ব্যাখ্যা দাখিল করি। লিখিত ব্যাখ্যা ও চাহিদা মোতাবেক সকল কাগজপত্র দাখিলের পর উপ-কর কমিশনার লিংকন রায় আমাদের কোম্পানীর ম্যানেজার জনাব মোঃ লুৎফর রহমানকে ডেকে এইমর্মে হুশিয়ারী দেন যে, বিষয়টি কমিশনার স্যার অবগত আছেন। সুতরাং কমিশনার স্যারসহ আমাদের অফিসে ৫০ লক্ষ টাকা দেয়া না হলে বিষয়টি নিষ্পত্তি হবে না। যা আপনার কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ শাহাদাত হোসেনকে অবহিত করবেন।

বিষয়টি আমাকে অবহিত করলে আমি ম্যানেজার মোঃ লুৎফরকে বলি যে, আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ নিয়মিতভাবে আমাদের সম্পদের চেয়েও বেশি কর দিয়ে আসতেছি এবং ইতিপূর্বে আমি, আমার স্ত্রী মোসাঃ হেনারা বেগম, আমার মেয়ে মহাসিনা মিতু শ্রেষ্ঠ করদাতা নির্বাচিত হইয়াছে। সুতরাং উনারা যেভাবেই ভয় দেখাকনা কেন, আমাদের কিছুই করতে পারবে না।প্রায় ২ মাস অতিবাহিত হলেও কর অফিস থেকে আমাদের বিষয়টি সুরাহা করেনি। 

পুনরায় হয়রানি তথা তাদের পুরানো উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য বরগুনা উপ-কর কমিশনারের কার্যালয়, সার্কেল-১৫ এপ্রিল আমার নামে, আমার স্ত্রী মোসাঃ হেনারা বেগম, আমার একমাত্র ছেলে মোঃ নাসির আল-মামুন, আমার একমাত্র মেয়ে মহাসিনা মিতু এর নামে এইমর্মে চিঠি ইস্যু করেন যে, ২০২৩-২০২৪ করবর্ষে আয়কর আইন ২০২৩ এর ১৮০ ধারায় দাখিলকৃত রির্টানটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক নিরীক্ষার জন্য নির্বাচিত হওয়ার কারন অবহিত করেন।

উপ-কর কমিশনার প্রীতিশ বিশ্বাস বরগুনা যোগদান করার পরে ইতিমধ্যে বরগুনার সকল শ্রেনীর  ব্যবসায়ীদেরকে অযথা হয়রানী ও ভয় দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। পাশাপাশি কর কমিশানার, বরিশালের বরাত দিয়েও অনেক টাকা সুকৌশলে আদায় করেছেন।