ভেঙে গেছে বাঁধ: বন্যা আতঙ্কে তিস্তাপাড়ের মানুষ

প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২৪, ১৪:১০ | অনলাইন সংস্করণ

  রংপুর ব্যুরো

ভারতের সিকিমে পাহাড় ধসের কারণে তিস্তা নদীর ওপরে নির্মিত জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের একটি বাঁধ ভেঙে গেছে। ফলে বৃহত্তর রংপুরের ৫ জেলার বাসিন্দারা বন্যার শঙ্কা করছেন। তবে পশ্চিমবঙ্গের গজলডোবা বাঁধে পানির চাপ বাড়লেও তিস্তায় বন্যার শঙ্কা নেই। তিস্তাপাড়ের বাসিন্দাদের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

শুক্রবার (২৩ আগস্ট) দুপুর ১২টায় তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে নদীর পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫১ দশমিক ৪০ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার ৭৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার)। এর আগে, বৃহস্পতিবার সকালে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।

এদিকে তিস্তার মূল নদীতে পানি না থাকলেও বেশ কয়েকটি তীরে পানি বেড়েছে। মূলত ওইসব তীর থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করেছে কয়েকটি চক্র। যার ফলে ওইসব স্থানে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। গত দুই দিনে তিস্তা নদীর ডান তীর লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়া গাছ ইউনিয়নের হরিনচড়া গ্রামে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে।

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলা, কাউনিয়া পীরগাছা, গাইবান্ধার সুন্দরগ্জ্ঞ উপজেলা, কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলায় তিস্তার পানি প্রবেশ করেছে। ওই সব উপজেলার বাসিন্দারা বিশেষ করে তিস্তা পাড়ে লোকজন ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন ।

এতে ভাঙন হুমকিতে রয়েছে শতাধিক পরিবার। নদীগর্ভে চলে গেছে তিনশ বিঘা জমির ধান-সবজিসহ ফসলের খেত। তিস্তা পাড়ে লোকজন ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। এসব স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো লোকজনের দেখা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগও করছেন স্থানীয় লোকজন।

জানা গেছে, গত দুই দিন ধরে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভারতের বাঁধ ভেঙে যাওয়ার কারণে তিস্তাপাড়ের হাজারও মানুষ আতঙ্কে দিন পার করছেন। উজানের ঢল যে কোনো সময় তিস্তায় প্রবেশ করে বন্যার সৃষ্টি হতে পারে—এমন শঙ্কায় নির্ঘুম রাত পার করছেন তারা।

তিস্তাপাড়ের শাহিন বলেন, গত দুই দিনে তিস্তার পানি একটু একটু করে বাড়ছে। অনেকে বলছেন, ভারতের বাঁধ ভেঙে তিস্তা নদীতে বন্যা শুরু হবে। তাই দুই দিন ধরে আতঙ্কে আছি। অনেক উঠতি ফসলি নিয়েও চিন্তায় আছি।

এ বিষয়ে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা বলেন, তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার নিচে রয়েছে। তিস্তাপাড়ের মানুষদের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই প্রতিবাদ করছেন। তিস্তার পানি বৃদ্ধি হওয়ার এখন কোনো সম্ভাবনাই নেই।

হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য জাকির হোসেন বলেন, তিস্তার পানি বৃদ্ধির ফলে কিছু কিছু এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। তবে পানি বিপৎসীমার অনেক নিচে রয়েছে। আপাতত সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছি।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, তিস্তার পানি বাড়লেও বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি নাও হতে পারে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড সতর্ক আছে।
তিনি আরও  বলেন তিস্তা অববাহিকায় আপাতত ইন্ডিয়ার মধ্যে সবগুলো স্টেশন বিপদসীমার নিচে প্রবাহিত হচ্ছে। সামনে ৫ থেকে ৬ দিন বন্যা হওয়ার মত বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা কম তিস্তা অববাহিকায়। সিকিম অঞ্চলে তেমন কোন বড় ধরনের বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। তাই গজলডোভা ব্যারাজ খুলে দিয়েছে বা খুলে দিবে এরকম কোন গুজেবে কান দেওয়ার কিছু নাই। ধরলার নদীর জন্য এই একই কথা প্রযোজ্য।