রংপুরে একই দিনে ৪ নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ
প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২৪, ১৮:০৫ | অনলাইন সংস্করণ
রংপুর ব্যুরো
রংপুর নগরীর রংপুর নবজাতক, শিশু ও প্রসূতি সেবা হাসপাতালে একইদিনে ৪ নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।
শুক্রবার সকালে হাসপাতালের এনআইসিইউতে চিকিৎসাধীন সুমাইয়া আক্তার, ববিতা রানী, জবা রানীর নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে এক নবজাতকের মৃত্যু হয়। রাতে এক ভুক্তভোগী থানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে। পুলিশ রাতেই হাসপাতালের সহকারী ব্যবস্থাপক আশরাফুল আলমকে আটক করে থানায় নিয়ে গেছে। এ নিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে চিকিৎসক, ব্যবস্থাপকসহ হাসপাতাল ছেড়ে পালিয়ে গেছে।
শুক্রবার (২৩ আগস্ট) রাত ১১টার দিকে এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারগুলো হাসপাতাল চত্বরে বিক্ষোভ করে সংশ্লিষ্টদের বিচার দাবি করেন। এত কম সময়ের ব্যবধানে এতগুলো নবজাতকের মৃত্যুর এ ঘটনাটি ঘটেছে নগরীর রংপুর নবজাতক শিশু ও প্রসূতি সেবা হাসপাতালে। মারা যাওয়া নবজাতকদের বয়স ৪ থেকে ১২ দিন।
ভুক্তভোগী পরিবারগুলো জানায়, ওই নবজাতকগুলোকে ভর্তির পর থেকে হাসপাতালের কোনো শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখতে আসেননি। প্রয়োজন মাফিক কোনো চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বরং শিশু মারা যাওয়ার পরেও টাকার লোভে এনআইসিইউতে রেখে বিল বাড়ানো হয়েছে। পরে অভিভাবকদের রোষানলে পড়ে নবজাতকগুলো মারা যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে কর্তৃপক্ষ।
পরিবারগুলোর অভিযোগ, চিকিৎসাজনিত অবহেলার কারণে ২৪ ঘণ্টার ভেতর চার নবজাতকের মৃত্যু হলেও এর দায় এড়িয়ে উল্টো ব্যবসায়িক মনোভাব দেখায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অসহায় পরিবারগুলোকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে হাজার হাজার টাকার রশিদ ধরিয়ে দিয়ে বিল পরিশোধের চাপ দিতে থাকেন তারা। এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বাকবিতন্ডায় জড়ান ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর সদস্যরা। বিষয়টি জানাজানি হলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদকর্মীরা সেখানে উপস্থিত হন।
মারা যাওয়া এক নবজাতকের অভিভাবক আশিকুর রহমান জানান, কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তার স্ত্রী। পরে মেডিকেলে সিজারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করানো হয়। সন্তান জন্ম নেওয়ার পরপরই চিকিৎসকরা এনআইসিইউতে নিতে বলে। কিন্তু মেডিকেলের এনআইসিইউতে সিট না থাকায় এক দালাল তার সন্তানকে নবজাতক শিশু ও প্রসূতি সেবা হাসপাতালে ভর্তি করাতে প্রলুব্ধ করেন। পরে সন্তানকে সুস্থ করতে এই হাসপাতালে ভর্তি করেন তিনি। কিন্তু ভর্তির চারদিন হয়ে গেলেও কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দেখা মেলেনি ওই হাসপাতালে। ভালো নার্সও পাওয়া যায়নি সেখানে। আয়ারাই নার্সের কাজ করেন।
আশিকুর রহমান বলেন, চিকিৎসকের কথা জিজ্ঞাসা করলেই আসছে, কিছুক্ষণ পর আসবে, আজকে আসবে না, কালকে আসবে- এসব বলে কাটিয়ে দিচ্ছিল তারা। এভাবে চারদিন অতিবাহিত হলেও চিকিৎসকের দেখা পাওয়া যায়নি। শেষমেষ আমার সন্তানকে তারা মেরেই ফেললো। আমি এই হাসপাতালের সঙ্গে জড়িত সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। একই অভিযোগ অন্য অভিভাবকদেরও।
হাসপাতালের সহকারী ব্যবস্থাপক আশরাফুল আলম বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে এক নবজাতকের মৃত্যু হয়। এরপর শুক্রবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আরো তিন নবজাতক শিশু মারা যায়। যাদের তত্ত্বাবধায়নে এসব নবজাতকের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার কথা ছিল, তাদের কেউ হাসপাতালে ছিল না বলে অভিভাবকরা দাবি করছেন। কিন্তু আমার জানা মতে, চিকিৎসার কোনো কমতি হয়নি।
এ ব্যাপারে রংপুর মেট্রোপলিটন কোতয়ালী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) শাহ আলম সরদার বলেন, শুক্রবার রাতে এক ভুক্তভোগী থানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে। আমরা তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।