এ পর্যন্ত কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্স থেকে পাওয়া মোট কত টাকা জমা হলো, পাশাপাশি এসব টাকা কোন কোন খাতে খরচ হয় তা নিয়ে স্থানীয় মানুষজনের আগ্রহ বরাবরই। কারন, এ মসজিদের আয়-ব্যায়ের হিসাব কখনো প্রকাশ হয়নি জনসম্মুখে।
দানবাক্সে প্রতিবার পাওয়া সোনা-রূপার অলঙ্কার ও বৈদেশিক মুদ্রার পরিমান কত তাও জানা যায়নি কখনো। এছাড়াও, মসজিদের ব্যাংক একাউন্টে এখন পর্যন্ত সর্বমোট কত টাকা জমা আছে, সেটি প্রকাশ করেনি মসজিদ কর্তৃপক্ষ।
দানবাক্স ছাড়াও প্রতিদিন এ মসজিদে গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগীসহ নানা ধরনের সমগ্রী দান করেন স্থানীয় ও দূর-দূরান্ত থেকে আসা মানুষজন। কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী সপ্তাহে একদিন এসকল সামগ্রী বিক্রি করে মসজিদের ব্যাংক একাউন্টে জমা করা হয়। তবে, এযাবতকাল কত টাকার দান সামগ্রী বিক্রয় করা হয়েছে তা জানা নেই কারোরই।
তবে, কিছুদিন আগে অডিট করে আয়-ব্যয়ের হিসাব জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে, এমনটি সাংবাদিকদের জানিয়েছিলো কর্তৃপক্ষ। সে বিষয় আলোর মুখ দেখেনি পরবর্তীতে।
ইতিমধ্যে দেশের অন্যতম আয়কারী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত পেয়েছে কিশোরগঞ্জের এতিয্যবাহী এ পাগলা মসজিদ। তিন মাস পর পর এ মসজিদের দানবাক্স খুললেই পাওয়া যায় কয়েক কোটি টাকাসহ সোনা-রূপার অলঙ্কার ও বৈদেশিক মুদ্রা।
প্রতিবার দানবাক্স খুললে টাকা গণনা করতে সকাল থেকে রাত হয়ে যায়। সবশেষে ঐদিন কত পাওয়া গেলো তা দেশ-বিদেশের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচার করা হয় দেদারসে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও আগ্রহী মানুষজনের এ বিষয়টি প্রচারনার কোন খামতি রাখেননা। সকলের আগ্রহ থাকে কত পরিমান টাকা পাওয়া গেলো তা নিয়ে।
গেলো তিন-চার বছর ধরে, তিন মাস পর পর এ মসজিদের দানবাক্স খুললেই পাওয়া যায় কয়েক কোটি টাকা। এর আগে দানবাক্সে টাকা পাওয়া গেলেও তার পরিমান এত ছিলোনা। সর্বশেষ গত ১৭ আগস্ট ৩ মাস ২৬ দিন পর পাগলা মসজিদের নয়টি দানবাক্স খুলে ২৮ বস্তা টাকা পাওয়া যায়। দিনভর গণনা শেষে সেই টাকার পরিমাণ ৭ কোটি ২২ লাখ ১৩ হাজার ৪৬ টাকা। এর আগে গত ২০ এপ্রিল পাগলা মসজিদের দানবাক্স থেকে পাওয়া যায় রেকর্ড ৭ কোটি ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ টাকা।
জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জানান, "আগে মসজিদের দান থেকে পাওয়া এসব অর্থ সংশ্লিষ্ট মসজিদ-মাদরাসাসহ বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানার পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা হতো। ইতিমধ্যে মসজিদটির জায়গায় আন্তর্জাতিক মানের দৃষ্টিনন্দন ইসলামিক কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দ্রুতই এর কাজ শুরু হবে। যার নামকরণ হবে পাগলা মসজিদ ইসলামিক কমপ্লেক্স। এটি নির্মাণে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা। সেখানে ৩০ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন। তাই এখন অন্য কোথাও এ টাকা খরচ করা হচ্ছেনা। ব্যাংকে মসজিদের একাউন্টে জমা হচ্ছে টাকা।"
এদিকে, ভারত থে নেমে আসা ঢল ও অতি বৃষ্টিতে বর্তমানে ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লাসহ দেশের অন্তত ১২ জেলায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় গত দু'দিন ধরে ফেসবুকের শত শত পোস্টে অনেকে লিখছেন "পাগলা মসজিদের দানবাক্সে সবশেষ পাওয়া টাকা বন্যার্তদের দান করার জন্য।"
এরই মধ্যে আবার ফেসবুকের বিভিন্ন পোস্টে লিখতে শুরু হয়, "মসজিদের দান বাক্সের অর্থ বন্যার্তদের মধ্যে অনুদান হিসেবে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।"
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুই ধরনের পোস্ট ভাইরাল হলেও মূলত পাগলা মসজিদ থেকে বন্যার্তদের জন্য টাকা অনুদানের বিষয়টি নিতান্তই গুজব। মসজিদ পরিচালনা কমিটি আদৌ এ সংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্তই নেয়নি বলে জানা গেছে।
পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, "পাগলা মসজিদের ফান্ড থেকে বন্যা কবলিতদের মাঝে অনুদান দেয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যা ছড়িয়েছে, সেটি গুজব।"
যোগাযোগ করা হলে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল কালাম আজাদ বলেন, মসজিদ পরিচালনার জন্য ৩০ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি রয়েছে। সব শেষ মসজিদের দানবাক্স থেকে টাকা পাওয়ার পর কমিটির কোনো মিটিং হয়নি। আর দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে মিটিংয়ের কোনো সুযোগ নেই। কাজেই কমিটির সভায় বন্যার্তদের জন্য মসজিদের টাকা অনুদান দেয়ার বিষয়টি সত্য নয়।