মাছ চাষ সম্প্রসারণে কাজ করছে চুয়াডাঙ্গার ওয়েভ ফাউন্ডেশন             

প্রকাশ : ২৫ আগস্ট ২০২৪, ১৫:৫৫ | অনলাইন সংস্করণ

  চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি

পুষ্টি চাহিদা মেটানো ও মাছ চাষ সম্প্রসারণে পিকেএসএফের অর্থায়নে এবং জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের সহযোগীতায় কাজ করছে চুয়াডাঙ্গার ওয়েভ ফাউন্ডেশন। জেলার সদর উপজেলার বেগমপুর, দামুড়হুদা উপজেলার দামুড়হুদা সদর, কার্পাসডাঙ্গা, পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়ন ও আলমডাঙ্গা উপজেলার আঁইলহাস ইউনিয়নের পুরুষ-মহিলাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ সম্প্রসারণে কাজ করা হচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গা ওয়েভ ফাউন্ডেশনের মৎস্য বিভাগের মতে, পিকেএসফের অর্থ সহায়তায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট ৮১টি প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। উন্নত ব্যবস্থাপনায় মাছ চাষ বিষয়ক দক্ষতা উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণ ৩টি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। মাছ চাষের জন্য উপযোগী করতে ৭৫ জন পুরুষ উপকারভোগীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এ জেলার ৩টি উপজেলা ও ১৫টি ইউনিয়নে মাছ চাষ বাড়ানোর জন্য কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

জি-৩ জাতের রুই মাছ চাষ ১০টি, উন্নত চাইনিজ কার্প জাতের মাছ চাষ সম্প্রসারণ ৫টি, আধা-নিবিড় পদ্ধতিতে দেশী প্রজাতির পাবদা-কার্প মাছের মিশ্র চাষ ১০টি, আধা-নিবিড় পদ্ধতিতে কার্প ফ্যাটেনিং মাছ চাষ ৫টি, উত্তম ব্যবস্থাপনায় অফ-ফ্লেভার মুক্ত পাঙ্গাস ও তেলাপিয়া মাছ চাষ ১০টি, হাজামজা ও পরিত্যক্ত পুকুর সংস্কার করে মাছ চাষ ৫টি, প্রাকৃতিক খাদ্য নির্ভর মাছ চাষ ২টি, মাছের পোনা চাষে উদ্যোক্তা তৈরী ১০টি, নিবিড় পদ্ধতিতে ট্যাংকে উচ্চমূল্যের মাছ চাষ ২টি, অণুপুষ্টিসম্পন্ন দেশী ছোট প্রজাতির মাছ (এসআইএস) চাষ ৫টি, পুষ্টিসংবেদনশীল মলা মাছের ব্রুড ব্যাংক ৫টি, উত্তম ব্যবস্থাপনায় সদস্য পর্যায়ে উৎপাদিত মাছ বিক্রি করার জন্য ১টি কেন্দ্র ও ১টি অক্সিজেনেটেড ভ্যানে মাছের পোনা পরিবহন করা হচ্ছে।

পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা পুরনের জন্য ওয়েভ ফাউন্ডেশন আমাকে প্রশিক্ষণ দিয়ে ট্যাংকিতে মাছ চাষের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। মাছ বড় করে সে গুলো ধরে আমরা রান্না করে খাচ্ছি। গত প্রায় দু’বছর থেকে আমাদের পরিবারে মাছ কিনে খেতে হচ্ছেনা।

চুয়াডাঙ্গা জুড়ানপুর গ্রামের ট্যাংকে মৎস্য চাষী জমির উদ্দিন জানান, তিনি ওয়েভ ফাউন্ডেশনের সহযোগীতায় ৭০ বিঘা পরিমান পুকুরে মাছ চাষ করছেন। তার পুকুরে মলা মাছের ব্রুড ব্যাংক আছে। ওই পুকুরে উৎপাদিত মলা মাছ তিনি ওয়েভ ফাউন্ডেশনের কাছেই বিক্রি করছেন। এখানকার মাছ অন্যান্য পুকুরেও ছাড়া হচ্ছে। বৃষ্টি ঠিকমত না হওয়ায় স্যালো মেশিন চালিয়ে পুকুরে পানি সরবরাহ ঠিক রাখতে হচ্ছে। সে জন্য উৎপাদিত মাছের দাম বেড়ে গেছে।

শেখ সাদি নামের আরেক মৎস্য চাষী জানান, ওয়েভ ফাউন্ডেশন তাদেরকে মাছ কিনে দিয়ে সহযোগীতা করছে। এই মাছ আমরা আমাদের পুকুরে চাষ করবো।

রবকুল মন্ডল নামের মৎস্য চাষী বলেন, ওয়েভ ফাউন্ডেশনের মৎস্য খাতের আওতায় আমরা মলা মাছের ব্রুড ব্যাংক স্থাপন করেছি। নদীনালা শুকিয়ে যাওয়ার কারনে মলা মাছ অনেকটা বিলুপ্তির পথে। তাই মলা মাছ চাষ সম্প্রসারণের জন্য আমরা চাষী পর্যায়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে মলা মাছ চাষের আওতায় আনার চেষ্টা করছি।

চুয়াডাঙ্গা জেলায় বার্ষিক মাছের চাহিদা ২৫ হাজার ২৪৫ মেট্রিক টন। উৎপাদন হয় ২৩ হাজার ৭৬০ মেট্রিক টন। মাছ উৎপাদনে কিছুটা ঘাটতি আছে। চলতি বছর প্রচন্ড তাপদাহের কারনে মাছ চাষের ওপর কিছুটা প্রভাব পড়েছে। আমাদের যে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল সেটা অর্জনে কিছুটা ব্যাহত হবে। তবে আধুনিক প্রযুক্তি ও চাষীদের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে মাছ চাষ কিভাবে বাড়ানো যায়, সে ব্যাপারে আমরা মাঠ পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছি এবং পরামর্শ দিচ্ছি। বৃষ্টিপাত এ বছর দেরীতে শুরু হয়েছে। তবে বৃষ্টিপাত বাড়ার সাথে সাথে পুকুরে মাছের পোনা উৎপাদন ও মাছ উৎপাদনে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তা দেব। সেই সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তির সম্প্রারণ ঘটাবো। এর ফলে মাছের উৎপাদন বাড়বে।