কালোবাজারি করে রাতারাতি কোটিপতি বনে গেছেন কবির হোসেন। তিনি একসময় সামান্য ফটোকপি দোকানদার ছিলেন। সেই দোকান ছেড়ে সরকারি খাদ্যশস্য কালোবাজারি করে হঠাৎ বিত্তশালী বনে গেছেন কবির হোসেন। আলোচিত কবির হোসেন, মানিকগঞ্জ পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং ওই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি।
তার বর্তমানে মানিকগঞ্জ শহরের রয়েছে দৃশ্যমান একটি সাত তলা আবাসিক ভবন। পল্লী গ্রামে রয়েছে আলিশান ডুপ্লেক্স বাড়ি ও বিলাসবহুল গাড়ি। এছাড়া তার রয়েছে নামে বেনামে বেশকিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
কবির হোসেন মানিকগঞ্জ পৌরসভার পৌলি এলাকার মাইনুদ্দিন আহমেদের ছেলে। এর আগেও তার কালোবাজারি নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের আগে তিনি মানিকগঞ্জ শহরের শহীদ রফিক সড়কের আইনজীবী ভবনের সামনে ভাড়া দোকান নিয়ে ফটোকপির একটি দোকান করতেন।
সেই দোকান ছেড়ে তিনি সরকারি খাদ্য গুদামে খাদ্যশস্য কালোবাজারি করে কোটিপতি বনে যান। পরবর্তীতে কোটি টাকা নজরানা দিয়ে বাগিয়ে নেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ। এতে হয়ে ওঠেন আরো বেপরোয়া। কালোবাজারি, আদম ব্যবসা, মাদক সিন্ডিকেট, হুনডি ব্যবসা, ভূমিদস্যুতা, টেন্ডারবাজি চাঁদাবাজিসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে তৎপরতা চালাতে থাকে। ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের ছত্র ছায়ায় গড়ে তোলেন বিশাল ক্যাডার বাহিনী।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগের পক্ষে তার নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী নিয়ে গত ১৮ জুলাই এবং ৪ আগস্ট আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীদের উপর বর্বরোচিত হামলা চালায়। এরপর ৫ আগষ্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগের পর কবির হোসেনও আত্মগোপনে চলে যায়।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা থাকাকালীন সময়ে কবির তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে অসহায় মানুষের জমি দখল, অবৈধ মাটির ব্যবসা, টেন্ডারবাজি, গ্রাম্য সালিসির নামে চাঁদাবাজিসহ মানুষকে জিম্মি করে চালাতে থাকে নির্যাতনের স্টিম রোলার। তার ক্যাডার বাহিনীর ভয়ে এলাকার লোকজন প্রতিবাদ তো দূরের কথা একটু শব্দটিও মুখে আনতে পারেনি।
ভুক্তভোগী এক আইনজীবী জানান, পৌরসভার কান্দাপৌলি এলাকায় তার ক্রয়কৃত শতাংশ জমি জোরপূর্বক দখল করে নেয় কবির ও তার ক্যাডার বাহিনী। এই ঘটনার প্রতিবাদ করতে গেলে মারপিটের শিকার হন ওই আইনজীবী। তিনি এতটাই ক্ষমতাশালী ছিলেন যে আইনজীবী হয়েও কবিরের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে পারেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রবাসী নারী জানান, কবির শুধু বাংলাদেশ অপরাধ করেননি। তার অপরাধের পরিধি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ব্যক্তি ঘটেছে। জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আপেলের ছোট ভাই তারেকের সহযোগিতায় সে দীর্ঘদিন যাবত মানি লন্ডারিং করে বিপুল অংকের অর্থ কামিয়েছে। বিদেশে তার বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, কাউন্সিলর হওয়ার পরে ৩ বছরে কবির কমপক্ষে দশবার বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। তিনি, গ্রীস, ইতালী, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেছেন। তার বিদেশ ভ্রমণ করার উদ্দেশ্যই হুন্ডি ব্যবসা সক্রিয় রাখা।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা কবির হোসেনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সাতলা বাড়িটি ২৪জনের। এলাকায় সন্ত্রাসী বাহিনী সম্পর্কে তিনি বলেন, তারা আমার ওয়ার্ডের লোক। গাড়ি ঋন করে কিনেছি। খাদ্যশস্যের কালোবাজারি নিয়ে বক্তব্য চাইলে তিনি সরাসরি দেখা করতে বলেন। মোবাইলে এসব কথা হয়না বলে জানান তিনি।
মানিকগঞ্জের বৈষমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমম্বয়ক রমজান মাহমুদ বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি শুন্য থেকে কোটিপতি বনে গেছে। আমরা চাই তাকে আইনের আওতায় আনা হোক। এবং তার ব্যাংক এ্যাকাউন্ট এবং সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হোক।