এস. আলমের গাড়িতে উঠা নিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদের বিতর্ক
'আমি কোন গাড়িতে উঠেছিলাম সেটা আমি নিজেও জানতাম না'
প্রকাশ : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২০:২৯ | অনলাইন সংস্করণ
স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার
দেশের আলোচিত ব্যবসায়িক গ্রুপ ‘এস আলমের’ গাড়িতে চড়ে সংবর্ধনায় নিতে যাওয়ার বিষয়টি ‘অসাবধানতা ও অনিচ্ছাকৃত ভুল’ ছিল দাবি করে দুঃখপ্রকাশ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমদ।
তিনি বলেন, “আমার পক্ষ থেকে জানতাম যদি যে, এই গাড়িটি একটি নির্ধারিত কোম্পানি বা তার, তাহলে হয়তো আমি সাবধানতা অবলম্বন করতাম। তারপরেও আমার এই অসাবধানতা এবং অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য যদি দেশবাসির মনে কষ্ট দিয়ে থাকি, অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে থাকি সে জন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করছি।”
সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে গুলশানে নিজের বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে গত ২৮ অগাস্টের ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, “গাড়ি সংক্রান্ত যে সংবাদটা প্রকাশিত হয়েছে, তাতে জনমনে কিছু বিভ্রান্তির সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। তারপরেও একটি পুরাতন গাড়ি আমার ছোট ভাই নিয়ে গেছে, সে খুব আনন্দিত যে আমি তার গাড়িতে আমি উঠেছি। যদি জানতাম যে, এটা নির্ধারিত কোম্পানির গাড়ি, তাহলে হয়ত আমি সাবধনতা অবলম্বন করতাম।”
ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “গতকালকে কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে যে, আমি দীর্ঘ ১০ বছর পর আমার নিজ জেলা কক্সবাজারে অবতরণ করলে সেখানে আমার দলের পক্ষ থেকে সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে একটি গাড়ি আমি ব্যবহার করেছি, যে গাড়ি একটি কোম্পানির, যা সংবাদ লেখা হয়েছে এস আলম কোম্পানির।”তাঁর ভাষ্য মতে, “আমি কোন গাড়িতে উঠেছি সেটা আমি নিজেও জানতাম না। সেইদিন কক্সবাজার বিমান বন্দরে নামার পরে কিছু গাড়ি দেখেছি ভেতরে। আমাদের নেতাকর্মীরা বলল যে, এটাতে উঠেন, এই গাড়িতে আমি উঠেছি। তা সেই গাড়িটি কার, সেই মুহূর্তে আমি চিন্তাভাবনার মধ্যে ছিলাম না। আমি তখন অনেকটা আবেগাপ্লুত ছিলাম, আমার দেশবাসীর ভালোবাসায় সিক্ত হচ্ছিলাম এবং মনের মধ্যে মা-বাবার কবর জিয়ারতের বাসনায় মগ্ন ছিলাম। তখন আমার মনের অবস্থা ছিল না যে, আমি কোন গাড়িতে কার গাড়িতে উঠছি।”
তিনি আরও বলেন, “সংবাদটি প্রকাশ হওয়ার পরে আমি খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করলাম, আমি জানতে পারলাম, গাড়িটি আমার এলাকার এক ছোট ভাইয়ের, যে উক্ত কোম্পানিতে (এস আলম) বিভিন্ন জমি-জমা দেখাশোনার কাজ করে এবং কোম্পানি থেকে তাকে বিভিন্ন সময়ে ব্যবহারের জন্য গাড়িটি দেয়া হয়। সেও অন্য সকলের মতো আমাকে বরণ করার জন্য এয়ারপোর্টে গেছে .., তার গাড়িতে করেই গেছে। সেও জানত না যে, আমি তার গাড়িতে উঠব। আমিও জানতাম না যে, আমি কার গাড়িতে উঠব। এটা জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ ঠিক করেছে।”কক্সবাজারের রাজনীতির প্রাণপুরুষ সালাহউদ্দিন বলেন, “ব্যক্তিগত পর্যায়ে যা কিছু, এগুলো পরিহার করলে আমার মনে হয় ভালো হয়। তারপরও আমার অসাবধনতার জন্য আমি আবারো দুঃখ প্রকাশ করছি।”একটি গণমাধ্যমে গাড়িচালক আপনার পরিচিত বলে যে বক্তব্য দিয়েছেন, সে বিষয়ে সাংবাকিরা দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, “এই কথা আমি ওই পত্রিকার রিপোর্টারকে বলিনি। এটা কিভাবে লিখেছেন আমি জানি না। এটা মিস কোট করা হয়েছে।”
তাঁর মতে, “ওইখানে একটা মাইক্রোবাস ছিল, যার ড্রাইভার আমার এলাকার ছিল। আমি মনে হয় ওই গাড়িতে উঠতে ছেয়েছিলাম যে আমার পরিচিত। মাইক্রোবাসের উপরে হুড খোলা নেই বলে আমাকে সেই গাড়িতে উঠতে তারা দেয়নি। হয়তবা এগুলো বলতে গিয়ে পত্রিকার রিপোর্টার আমার বক্তব্য মিস কোট করেছেন।”দীর্ঘ ১০ বছর দুই মাস ১৪ দিন পর কক্সবাজার আসেন ‘আবেগাপ্লুত’ সালাহউদ্দিন আহমদ। ওইদিন হাজার হাজার নেতা-কর্মী ও সাধারণ জনতা তাঁকে বরণ করতে কক্সবাজার বিমান বন্দরে আসেন। তিনি একটি কালো রঙয়ের গাড়িতে চড়ে কক্সবাজার থেকে পেকুয়া পর্যন্ত যান। পথে পথে তাঁকে লাখো জনতা সংবর্ধিত করে।সেদিনের সেই ঘটনাকে ভিন্নখাতে মোড় দিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদকে বহনকারি গাড়ি নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিক ও আরেকটি অনলাইন প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, সালাহউদ্দিন আহমদ দেশের এই মুহুর্তের আলোচিত শিল্প গ্রুপ এস আলমের মালিকানাধীন গাড়িতে চড়ে সংবর্ধনা নিতে গেছেন! যা দেশের আপামর জনতার মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। সেই বিভ্রান্তি দূর করতে সালাহউদ্দিন আহমদ সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে তাঁর রাজধানীর গুলশানের বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন ডাকেন।