স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা রুস্তমের অস্ত্রবাজি, সেই অস্ত্র জমা দিল স্ত্রী
প্রকাশ : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২০:৪১ | অনলাইন সংস্করণ
এএইচ সেলিম উল্লাহ, কক্সবাজার
'আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা-২০১৬’ অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি নিজের লাইসেন্সের বিপরীতে নেওয়া অস্ত্র শুধু আত্মরক্ষার জন্য বহন ও ব্যবহার করতে পারবেন। অন্যের ভীতি বা বিরক্তি তৈরি হতে পারে এমন ক্ষেত্রে অস্ত্র প্রদর্শন করা যাবে না। এটা করলে তার অস্ত্রের লাইসেন্স তাৎক্ষণিকভাবে বাতিলযোগ্য হবে লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে স্পষ্ট উল্লেখ থাকলেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে কক্সবাজার শহরে আ.লীগের বিভিন্ন মিছিল মিটিং প্রকাশ্যে ব্যবহৃত স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা রুস্তম আলী চৌধুরী সেই অস্ত্র সহ ২৮টি অস্ত্র জমা দিয়েছেন।
সোমবার রাত ৮ টা পর্যন্ত কক্সবাজারে ২৮ টি অস্ত্র জমা পড়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল গনি ওসমানী।
তিনি জানিয়েছেন, ২৫ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ এক ঘোষণায় ‘২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বেসামরিক জনগণকে দেওয়া সকল ধরনের আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করে। একই সঙ্গে ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সকল বৈধ লাইসেন্স গ্রহীতার স্থায়ী ঠিকানার থানায় অথবা বর্তমান বসবাসের ঠিকানার নিকটস্থ থানায় লাইসেন্স গ্রহীতা নিজে বা মনোনীত প্রতিনিধির মাধ্যমে অস্ত্র জমা দিতে বলা হয়। তার আলোকে গতকাল সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৮ টি অস্ত্র জমা পড়েছে।
তিনি আরো বলেন, কক্সবাজারে লাইসেন্সধারী ২৭৯টি আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। আজ মঙ্গলবার শেষ দিনে বাকি অস্ত্র, গোলাবারুদগুলো জমা হতে পারে বলে মন্তব্য করেন।
সূত্র মতে, কক্সবাজারে গত ১৬ জুলাই থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র -জনতার আন্দোলন শুরু হয়। ছাত্র- জনতার আন্দোলন দমাতে কক্সবাজার শহরে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দেয়া হয়। ইতিমধ্যে আলোকিত বাংলাদেশ এর প্রতিবেদকের হাতে কয়েকটি ভিডিও এসেছে। এর মধ্যে যুবলীগ নেতা মারুফ হোসেন প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিচ্ছে। অপর একটি ভিডিতে দেখা গেছে, কক্সবাজার জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা রুস্তম আলী চৌধুরী মিছিল থেকে অস্ত্র উঁচিয়ে মহড়া দিচ্ছেন। ওই মিছিলের ভিডিওতে দেখা গেছে, কক্সবাজার জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সামনে, পেছনে আ.লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া আরো কয়েকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, হেলমেট পরিহিত কালো টি-শার্ট পরিহিত যুবক ভারি অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেন। ইতিমধ্যে কক্সবাজার জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা রুস্তম আলী চৌধুরী ও যুবলীগ নেতা মারুফ হোসেনের অস্ত্রবাজির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরালও হয়। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর অস্ত্রবাজসহ আ.লীগ নেতারা আত্নগোপনে চলে যান।
দীর্ঘ এক মাসের অধিক সময় পার হলেও একজন অস্ত্রবাজকে গ্রেফতার করতে না পারায় ছাত্র -জনতার মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। অনেকেই পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র -জনতার আন্দোলন দমাতে আ.লীগের একাধিক মিছিল মিটিং এ স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা রুস্তম আলী চৌধুরী অধিকাংশ সময় প্রকাশ্যে অস্ত্রবাজি করে থাকেন। অনেকটা পুলিশের উপস্থিতিতে সে অস্ত্রবাজি করেন। তার অস্ত্রবাজি প্রত্যক্ষ করে ওই সময়ে আ.লীগের শীর্ষ নেতা তার প্রশংসা করেন।
সোমবার রাতে যোগাযোগ করা হলে 'আগ্নেয়াস্ত্র তদারক কর্মকর্তা, কক্সবাজার সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই), মাসুম ফরহাদ বলেন, সোমবার দুপুরে রুস্তম আলী চৌধুরীর পক্ষে তার স্ত্রী সহ একজন যুবক এসে অস্ত্র, গোলাবারুদ জমা দিয়েছে।
গতকাল রাতে যোগাযোগ করা হলে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র -জনতার আন্দোলন দমাতে ব্যাবহত অস্ত্রবাজির ঘটনায় ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। তাদের শনাক্তের কাজ চলমান রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া সেই রুস্তম আলী চৌধুরী অস্ত্রটি সোমবার জমা দিয়েছে।
সোমবার রাত ৯ টা পর্যন্ত এই প্রসঙ্গে বক্তব্য নেয়ার জন্য অভিযুক্ত স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা রুস্তম আলী চৌধুরীর ব্যক্তিগত নাম্বারে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তাকে না পাওয়ায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।