সাবেক এমপি বদিকে জেল গেইটে সাড়ে ৫ ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ
নিজেকেই আঁড়ালের চেষ্টা, এড়িয়ে যান নানা প্রশ্ন
প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৩৫ | অনলাইন সংস্করণ
স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার
‘ইয়াবা গডফাদার’ খ্যাত কক্সবাজার–৪ আসনের সাবেক এমপি, আ. লীগ নেতা ও হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি কারাঅন্তরীন আবদুর রহমান বদিকে জেল গেইটে সাড়ে ৫ ঘন্টা জেরা করেছে পুলিশ।
গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০ টার থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কক্সবাজার জেলা কারাগারের একটি কক্ষে আদালতের নির্দেশে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা, টেকনাফ মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জীবন রায় চৌধুরী। কক্সবাজার জেলা কারাগারের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এই বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা, টেকনাফ মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জীবন রায় চৌধুরী জেল গেইটে সাবেক সাংসদ বদিকে জিজ্ঞাসাবাদের সত্যাতা নিশ্চিত করে বলেন, গত ১৮ আগস্ট টেকনাফ মডেল থানায় কক্সবাজার জেলা বিএনপির অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ দায়েরকৃত হত্যাচেষ্টা মামলায় সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদি কারা অন্তরীন রয়েছে। ওই মামলায় গত ২০ আগস্ট চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ এলাকা থেকে বদিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। ওই মামলায় সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে পুলিশের পক্ষ থেকে ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। গত ২৮ আগস্ট সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হামীমুন তানজীম রিমান্ড আবেদনের শুনানি শেষে জেল গেইটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন বিচারক। আদালতের নির্দেশে তাকে গতকাল বুধবার জেল গেইটে সাড়ে ৫ ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা জীবন রায় চৌধুরী বলেন, সাবেক সাংসদ বদিকে সাড়ে ৫ ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদে নানা প্রশ্ন এড়িয়ে যান। তবে হামলায় অংশ নেয়া অস্ত্রধারীদের ছবি দেখে তাদের পরিচয় শনাক্ত করে দেন বদি।
ওই সময় বদি দাবি করেন, 'আমি (বদি) হামলার ঘটনার সময় এলাকায় ছিলাম না। সারাদিন টেকনাফে থাকলেও ওই দিন বিকেলে ঢাকা চলে যান বলে দাবি করেন বদি।
এদিকে টেকনাফে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর, লুটপাট ও হামলার অভিযোগে আবদুর রহমান বদিকে প্রধান আসামি করে ১৮ আগস্ট টেকনাফ মডেল থানায় ৩৩ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। এ মামলায় টেকনাফের সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর আহমেদকেও আসামি করা হয়েছে। কক্সবাজার জেলা বিএনপির অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বাদী হয়ে মামলাটি করেন। পরে তাকে ২০ আগস্ট চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ এলাকা থেকে বদিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
কড়া নিরাপত্তায় বদিকে কক্সবাজার আদালত প্রাঙ্গণে নিয়ে আসে র্যাব। তার আগে থেকে আদালত প্রাঙ্গণে ভিড় করেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার কয়েক শ’ মানুষ। তাঁরা স্লোগানে বদির ফাঁসি দাবি করেন এবং মাদকমুক্ত টেকনাফ গড়ার প্রত্যাশার কথা জানান।
পরদিন ২১ আগস্ট বদিকে বহন করা গাড়ি আদালত প্রাঙ্গণে পৌঁছালে ক্ষুব্ধ লোকজনের কেউ কেউ ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে তেড়ে গিয়ে বদিকে ঘুষি মারার চেষ্টা করলে সেনাবাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। এরপর বদিকে আদালতের কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়।
বদিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করে টেকনাফ থানা-পুলিশ। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হামীমুন তানজীম রিমান্ড আবেদনের শুনানি পরবর্তী সময় হবে জানিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
তথ্যমতে, আবদুর রহমান বদি ২০০২ সালে টেকনাফ পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৮ সালে তিনি কক্সবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি জয়ী হন। তাঁর দুই ভাইসহ ২৬ জন নিকটাত্মীয় জেলার তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী।
এ নিয়ে সারা দেশে সমালোচনার মুখে ২০১৮ সালে ওই আসনে বদিকে বাদ দিয়ে তাঁর স্ত্রী শাহীন আক্তারকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। ২০২৪ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও মনোনয়ন পান শাহীন আক্তার।