শহীদদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে : সমন্বয়ক কাদের
প্রকাশ : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৯:২০ | অনলাইন সংস্করণ
চাঁদপুর প্রতিনিধি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আবদুল কাদের বলেছেন, ছাত্র-জনতা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশকে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করেছিলেন। আমাদের অর্ধেক দায়িত্ব পালন হয়েছে। আমাদের বাকি দায়িত্ব অর্থাৎ যে দায়িত্বের স্বপ্ন নিয়ে আমাদের ভাইয়ের শহীদ হয়েছে, আমাদের অসংখ্য ভাই হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে। যারা স্বপ্ন দেখেছিল এদেশ একদিন ফ্যাসিবাদমুক্ত হবে। এদেশে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত হবে। এদেশের সরকার হবে জনতার সরকার। মানুষের বাক স্বাধীনতা থাকবে। এদেশের পুলিশ প্রশাসন কোন সরকারের পেটুয়া বাহিনী হিসেবে কাজ করবে না। এদেশের মানুষের বিচার বিভাগের প্রতি আস্তা থাকবে। এসব স্বপ্ন নিয়ে আমাদের যে ভাইয়েরা শহীদ হয়েছেন, তার ধারবাহিকতা আমাদের রক্ষা করতে হবে।
বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আয়োজনে চাঁদপুর শহরের হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে গণঅভ্যুত্থানের প্রেরণায় শহীদ পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ এবং দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ছাত্র-নাগরিকের মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমরা আগেও বলেছি আন্দোলন ও দেশ রক্ষার সময় নিজেদের মধ্যে ভেদাবেদ সৃষ্টি করিনাই। কখনো ভাবিনি দেশ স্বাধীন হলে আমরা কি পাব। ভেবেছি দেশ স্বাধীন হলে আমি কথা বলতে পারব। আমার মা, বোন, ভাই শান্তিতে ঘরে বসবাস করতে পারবে। তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, আপনারা দেখেছেন নোয়খালীতে ভিন্ন মতের লোককে ভোট দেয়ার কারণে তৎকালীন সরকারি দলের বাহিনী কিভাবে গণধর্ষণ করেছিলো। আমরা শুধুমাত্র ধৈর্য্য ধরেছিলাম। আমরা সুযোগ পেয়েছি এবং সেটার জবাব দিয়েছি। আমাদের লক্ষ্য শুধুমাত্র ফ্যাসিবাদি হাসিনাকে বিতাড়িত করা নয়, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে তারা যে ফ্যাসিবাদি কাঠামো তৈরী করেছে, তা ভেঙে চুরমার করে দেয়া।
এই সমন্বয়ক বলেন, আমরা একটি স্বাধীন বাংলাদেশ চাই, যে বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদি কাঠামো, ফ্যাসিবাদি ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দাঁড়াতে পারবে না। আমরা কাঠামোগত পদ্ধতিতে চলতে চাই। যেখানে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত হবে। যেখানে মানুষের ভোটাধিকার থাকবে এবং যে যার মত করে মতামত প্রকাশ করতে পারবে।
ছাত্রদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সাংগ্রামী বন্ধুরা আপনারা মানুষদেরকে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। আমি যখন শহীদ ভাইয়ের কবরের কাছে দাঁড়াই, আমি প্রতিবার নতুন করে শপথ করি, আপরা যে দায়িত্ব আমাদের কাদে দিয়েগেছেন, সে দায়িত্ব আমরা নিষ্ঠার সাথে পালন করবো। বার বার আমি শপথ করছি,্ আপনারাও শপথ করুন যে স্বপ্ন নিয়ে আমাদের ভাইয়েরা আমাদের ওপর দায়িত্ব দিয়েগেছে, সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন না হওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকবো। নিজেদের মধ্যে দলাদলি এবং বিশৃঙ্খলা করবো না।
আবদুল কাদির বলেন, আমরা যখন আন্দোলন করেছি তখন কোন বড় ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আন্দোলন করিনি। নিজেদের দায়িত্ববোধ থেকে আন্দোলন করেছি। কারো দিক নির্দেশনার জন্য আমরা অপেক্ষা করিনি। দেশ গঠনের লক্ষ্যে আমরা আবারও নিজ দায়িত্বে ঝাঁপিয়ে পড়বো। কোন ভাই কিংবা নেতার জন্য অপেক্ষ করবো না। আমরা দেশের বন্ধু হয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করতে চাই।
আরও বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সুমাইয়া আক্তার, হামজা মাহবুব, মো. মহিউদ্দিন, আলী আহম্মেদ আরাফ, খালেদ হাসান, তাসনিয়া নাওরীন ও জিয়া উদ্দিন আয়ান।
বক্তারা বলেন, বর্তমান অন্তবর্তী সরকার ছাত্র জনতার সরকার। বিভিন্ন জায়গায় সমন্নয়কের নাম করে যে চাঁদাবাজি হয় তারা আসলে ভুয়া সমন্বয়ক। আমরা তাদেরকে আইনের আওতায় আনব।
তারা চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিককে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি স্বৈরাচারের দেওয়া অনেক মামলা হামলায় জর্জরিত ছিলেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের কারনেই আপনি বিভিন্ন হয়রানি থেকে মুক্তি পেয়েছেন। আপনাকে ছাত্র জনতার মন বুঝতে হবে। তাদের সাথে পরামর্শ করে সামনে এগিয়ে যাবেন। স্বৈরাচার আন্দোলনে শুধু ছাত্ররাই আন্দোলন করে না ছাত্রীরাও আমাদের সাথে সমানভাবে অংশ নিয়েছে। স্বৈরাচারের পুলিশ আমাদের উপর গুলি চালিয়েছে নির্বিচারে। আমাদের ভাইদের মেরেছে। এর মধ্যে চাঁদপুরেরই একুশ জনের মত শহীদ হয়েছেন। এই চাঁদপুর থেকে ভারতে যে ইলিশ যায় তা বন্ধ করেদেন।
চাঁদপুরের সমন্বয়ক নাদিম পাটওয়ারী, জোবায়ের হোসেন, আব্দুল রহমান, হাসান মাহমুদসহ অন্যান্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।