চাঁদপুরে ৮ দিনের মাথায় ওসি আলমগীর হোসেনকে বদলি

নতুন ওসি বাহার মিয়া

প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪:২৮ | অনলাইন সংস্করণ

  চাঁদপুর প্রতিনিধি

চাঁদপুর শহরের সদর মডেল থানায় মতলব উত্তর থানা থেকে এসে যোগদান করেন অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আলমগীর হোসেন রনি নামক একজন পুলিশ ইন্সিপেক্টর। পুলিশ ইন্সিপেক্টর পদমর্যাদার ন্যায় পরায়ন সাহসি এ মডেল থানার আলমগীর হোসেনকে দায়িত্ব পালন অবস্থায় পড়তে হয়েছে, ছাত্রদের তোপের মুখে। 
এ বিষয়ে  মামলা দায়ের করেন হামলা ও মারধরের শিকার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আবদুল সামাদ।

তিনি সহ উপ-পরিদর্শন (এসআই) আব্দুর সামাদ তোপের মূখে পড়ে মডেল থানায় একটি হট্রগোলের ঘটনায় মারাত্বক ভাবে আহত হন। সদ্য যোগদানকৃত মডেল থানার ওসি আলমগীর হোসেন রনি আহত অবস্থায় মাত্র ৮দিনের মাথায় গত ১২ সেপ্টোম্বর চাঁদপুর সদর মডেল থানা থেকে তাকে অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হয়। 

পরবর্তীতে ওসি আলমগীর হোসেন রনির স্থলে গত ১৫ সেপ্টোম্বর তারিখে পুলিশ ইন্সিপেক্টর পদমর্যাদার মো: বাহার মিয়া চাঁদপুর সদর মডেল থানায় যোগদান করেন। তিনি এক সময় চাঁদপুর শহরের নতুন বাজার পুলিশ ফাঁড়িতে দায়িত্ব পালন করেছেন বলে পুলিশ অফিস সূত্রে জানা গেছে। বর্তমানে তিনি চট্রগ্রাম বিভাগীয় একটি স্থানে কর্মরত ছিলেন। 

সেখান থেকে তাকে চাঁদপুরে বদলীন করা হয়। পুলিশ অফিস সূত্রে জানা গেছে এ কর্মকর্তা ও এক জন ন্যায় পরায়ন সাহসি ও বিচক্ষন পুলিশ ইন্সিপেক্টর হওয়ায় তাকে চাঁদপুর সদর মডেল থানার মত জন গুরুত্বপূর্ন এ থানায় তাকে দায়িত্ব অর্পন করেন চাঁদপুরের যোগ্য পুলিশ সুপার।

যে কারনে ৮দিনের মাথায় ওসি রদবদল হয়:

শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে থানায় জ্ঞান হারিয়ে পড়েন চাঁদপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলমগীর হোসেন রনি।
ঘটনার সূত্রপাত সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) এক মামলার তদন্ত নিয়ে। এদিন দুপুরে মামলাটির তদন্তে গিয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থীর দ্বারা লাঞ্চিত হন চাঁদপুর সদর মডেল থানার এসআই আব্দুর সামাদ।
শহরের কোড়ালিয়ায় সেই ঘটনা কোনমতে নিয়ন্ত্রণে আনেন পুলিশ সদস্যরা। পরদিন মঙ্গলবার (১০সেপ্টেম্বর) দুপুরে মিছিলসহ থানায় প্রবেশ করে প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী। থানায় ঢুকে এসআই সামাদকে বেধড়ক মারধর করতে শুরু করে শিক্ষার্থীরা।
সে সময় থানায় উপস্থিত অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকেন। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যান সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলমগীর হোসেন রনি।

মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের ওয়াট স্টপ সেন্টারে ভর্তি থাকা আহত এসআই সামাদ উপরোক্ত ঘটনাটি জানান।

তিনি বলেন, ‘ওরা আমার সন্তানের চেয়েও বয়সে ছোট। আমিতো থানায় অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্তে গিয়েছিলাম। উভয় পক্ষ যেন এলাকায় আইন শৃঙ্খলার অবনতি না করে, সেজন্যই ঊর্দ্ধতনের নির্দেশে দায়িত্ব পালন করতে গিয়েছিলাম। আমার সাথে কেনো ওরা এমন আচরণ করলো বুঝতে পারছি না। এই ন্যাক্কারজনক অপমান আমি সইবো কীভাবে?’

চাঁদপুর সদর থানার পুলিশ সূত্র জানায়, কোড়ালিয়ার পাটোয়ারী স্কুল সংলগ্নের হারুন ছৈয়ালের স্ত্রী মাছুয়া বেগম (৪২) নামে এক নারী যৌন নিপীড়ন ও পথরোধ করে টানা হেঁচড়া করে আঘাত প্রদানসহ হুমকি ধামকির অভিযোগ আনেন একই এলাকার নয়ন বেপারী (৩০) ও ফয়সাল (৪৫) গংদের বিরুদ্ধে। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতেই সঙ্গীয় ফোর্সসহ তদন্তে যান এসআই সামাদ। আর এরপরই এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটে পুলিশ সদস্যের সাথে।
এদিকে হসপিটালে ভর্তি জ্ঞান হারানো চাঁদপুর সদর মডেল থানার ওসি মো. আলমগীর হোসেন রনি বলেন, ‘মানুষ আইনের কাছে আসে বিচার চাইতে। আমরা যাব কোথায়? কতটা অসহায় অবস্থায় আমাদের পুলিশের! পুলিশ স্বাভাবিক আইনী কার্যক্রম পর্যন্ত করতে পারছে না! আমরা এর বিচার চাই।’

বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীদের একাংশ এসআই সামাদের কাছে লাঞ্ছিতের ঘটনায় ভুল হয়েছে জানিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশের ঊর্দ্ধতনের কয়েকজন দফায় দফায় থানায় আলোচনা করছেন।

এদিকে, পুলিশ সদস্যদের শারিরীক অবস্থা প্রসঙ্গে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের ওয়ান স্টপ সার্ভিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র নার্স ফেরদৌসি জাহান লাভলী বলেন, ‘আমরা রোগীদের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রেখেছি। চিকিৎসকরাও নিয়মিত তাদেরকে চেকআপসহ মনিটরিং করছেন।’

চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক সৈয়দ আহমেদ কাজল বলেন, ‘টেনশন ও উচ্চ রক্তচাপের কারণে ওসি সাহেব দুর্বল হয়ে পড়েন। তার ডায়বেটিস সমস্যাও রয়েছে। মাথা ঘুরে থানায় পড়ে যাওয়ার পর স্ট্রোকের রোগী হিসেবেই তাকে দ্রæত হাসপাতালে আনা হয়। আমরা এখন পর্যন্ত উনাকে শারিরীক পর্যবেক্ষণে রেখেছি।’

এ ঘটনায় চাঁদপুর শহরের আওয়ামী লীগ নেত্রী মাসুমা বেগমের মেয়ে ফাতেমাকে ইভটিজিংয়ের ঘটনা কেন্দ্র করে সংঘবদ্ধ ছাত্রদের থানায় হামলা এবং পুলিশ কর্মকর্তাকে মারধরে ঘটনায় ১০জনকে নামীয় এবং অজ্ঞাতনামা ৮০-১০০জনকে আসামী করে মামলা করা হয়েছে।
বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে থানায় মামলাটি দায়ের করেন হামলা ও মারধরের শিকার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আবদুল সামাদ।

মামলার আসামীরা হলেন-শহরের কোড়ালিয়া রোডের হারুন ছৈয়ালের মেয়ে ফাতেমা আক্তার (২২), তার মা মাসুমা বেগম (৪২), একই এলাকার তাহসিন হোসেন (১৮), আল-আমিন (২৮), ট্রাক রোডের মো. রাকিব ভূঁইয়া (২৩), আরফিন আলিফ (২০), মো. সাফায়াত (২২), সৈয়দ সাকিবুল ইসলাম (২৩), রিফাত (১৯) ও মো. আরাফাত (১৯)।

চাঁদপুরের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায় বলেন, ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।