ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চকরিয়া থানায় পদায়ন নিয়ে অসন্তোষ 

কক্সবাজারে কর্মকালীন দানব হয়ে উঠেছিল ওসি মনজুর কাদের 

দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর রায় ঘিরে তার বিরুদ্ধে নানা বির্তকের অভিযোগ 
কক্সবাজারে কর্মকালীন দানব হয়ে উঠেছিল ওসি মনজুর কাদের 

কক্সবাজারের চকরিয়া থানায় পদায়নকৃত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনজুর কাদের ভূইয়াকে ঘিরে নানা বির্তকের অভিযোগ উঠেছে। ২০০৩ সালে বিএনপির আমলে নিয়োগ হলেও স্বৈরাচারী সরকারের আমলে বিএনপি -জামায়াত দমনে 'দানবের ভূমিকায় ছিলেন এই আলোচিত মনজুর কাদের ভূইয়া। কক্সবাজারের ঈদগাঁও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে উপপরিদর্শক (এসআই) থাকাকালীন আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর রায় ঘিরে এই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপি অধ্যুষিত ফেনী এলাকার বাসিন্দা হলেও এই মনজুর কাদের ভূইয়া গোপালী পুলিশের চেয়ে ভয়ংকর ছিল।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কক্সবাজারের চকরিয়া থানায় তার পদায়নের খবর ছড়িয়ে পড়লে ভুক্তভোগীদের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার সৃষ্টি হয় এবং তাকে প্রত্যাহারের দাবি তুলেন অনেকেই।

স্থানীয়দের তথ্য মতে, বর্তমান ঈদগাঁও উপজেলাটি কক্সবাজার সদরের অংশে ছিল। ওই সময়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় তত্বাবধানে চললো ঈদগাঁও তদন্ত কেন্দ্রটি। স্বৈরাচারী সরকারের আমলে দীর্ঘ দিন ঈদগাঁও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের আইসি হিসাবে দায়িত্বে ছিলেন মনজুর কাদের ভূইয়া। ওই সময় তিনি অনেকটা বিএনপি-জামায়াত দমনে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। এমনকি স্বৈরাচারী সরকারের মহলকে খুশি করতে গায়েবী মামলা দেয়া তার নেশায় পরিনত হয়।

বিএনপি-জামায়াতের একাধিক নেতা ও অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ঈদগাঁতে গায়েবী মামলার মাস্টারমাইন্ড হিসেবে পরিচিত এই মনজুর কাদের ভূইয়া। ২০১২-১৪ সাল পর্যন্ত ঈদগাঁও তদন্ত কেন্দ্রের আইসি থাকাকালীন নানা অপকর্মের জন্ম দেন। প্রাপ্ত তথ্য মতে, ২০১৩ সালের শুরুর দিকে আল্লামা সাঈদীর মামলার রায় পরবর্তী বিক্ষোভ দমনে ঈদগাঁও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সামনে রশিদ নামের এক ব্যক্তিকে 'পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জে প্রথমে গুলি করে ও পরে তদন্ত কেন্দ্রের ভিতরে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেন মনজুর কাদের ও তার অপর সহযোগী সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) রূপন চৌধুরী। এ ঘটনায় বিএনপি- জামায়াত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন তিনি।(মামলা নং জিআর ১৬৫/ ২০১৩)। এছাড়া ঈদগাঁওকে ঘটনাস্থল দেখিয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় ডজনখানেক গায়েবী মামলা দায়ের করেন তিনি। তখন ঈদগাঁও বাজারের ব্যবসায়ীস বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোকজনকে গনহারে আটক করে তদন্ত কেন্দ্রে নিয়ে আসতেন। পরে দাবীকৃত পরিমান টাকা না দিলে অকথ্য নির্যাতনের পর গায়েবী মামলায় আটক দেখিয়ে চালান দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।

ওই সময়ে এই ওসি মনজুর কাদের ভূইয়া বিরুদ্ধে ঈদগাঁওর হাজারো সাধারণ জনতাকে আসামী করে গায়েবি মামলা দায়ের করার নজির রয়েছে। এর মধ্যে জি আর ৯৩৬ /২০১২, ৯২১ /১২, ১৫০/২০১৩, ১৫১ /১৩, ৮৮৯/১৩, ১৬৫/১৩ ও জি আর ১১/২০১৪সহ অনেক গায়েবী মামলার নায়ক তিনি।

তার পদায়নের খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় কযেকজন ভুক্তভোগী ঈদগাঁওতে কর্মকালীন সময়ে তার অত্যাচারের বিষয়ে বণর্না দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাকে প্রত্যাহারের দাবি তুলেন। অনেকেই তার বিরুদ্ধে পূর্বের ঘটনায় মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান। অপরদিকে এই আলোচিত মনজুর কাদের ভূইয়া বিরুদ্ধে ঈদগাঁও থাকাকালীন মামলা বাণিজ্য, মানব পাচারকারীদের সাথে সখ্যাতা সহ নানা অভিযোগের পাহাড় রয়েছে।

শুক্রবার দুপুরে অভিযুক্ত চকরিয়া থানায় নিয়োগপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনজুর কাদের ভূইয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেন বলেন, আমি (মনজুর কাদের ভূইয়া) পেশাদারিত্বের সাথে কাজ করেছি। ন্যায় বিচার, অন্যায় ভাবে কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হয়, তাদের সুরক্ষার চেষ্টা করেছি।

এ প্রসঙ্গে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ'র দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, পদায়নের আগে নিজ এলাকা থেকে তার কর্মকাণ্ড ভেরিফিকেশন করা হয়েছে। এই ক্ষেত্রে কোন বিরূপ মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এছাড়া তিনি এই জেলায় ওসি হিসেবে পূর্বে কর্মরত ছিল না। এই বিষয়টি গুরুত্ব বিবেচনা করে তাকে পদায়ন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, পদায়নের পর সকল নতুন ওসিদের কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। জনস্বার্থে এই নির্দেশ মেনে না চললে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রসঙ্গত, ঈদগাঁও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রটি ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি তদন্ত কেন্দ্র থেকে থানায় রুপান্তরিত হয়।

কক্সবাজার
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত