উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন, প্রতি দুইমাস অন্তর অন্তর সম্প্রীতি সমাবেশ, সৌহার্দ্যপুর্ণ সহবস্থানে স্থানীয় পর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টি, দেশি বিদেশি ষড়যন্ত্রের বিষয়ে সতর্ক থাকার বিষয়সহ পার্বত্য চট্টগ্রামের চলমান পরিস্থিতি উত্তোরনে বিষয়ে তিন উপদেষ্টার উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বেলা ১২টা থেকে দুপুর ২ টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত রাঙামাটি জেলার সেনানিবাসের প্রান্তিক হলে এ বৈঠক অনুষ্টিত হয়।
এতে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় উপদেষ্টা হাসান আরিফ, স্বরাস্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো: জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব:), পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা, পুলিশের আইজিপি মো. ময়নুল ইসলাম, চট্টগ্রাম ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মো. মাইনুর রহমান, রাঙামাটি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শওকত ওসমান, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান, পুলিশ সুপার ড. এস এম ফরহাদ হোসেনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, এবং বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় উপদেষ্টা হাসান আরিফ বলেন, বর্তমান সরকারের কর্মকান্ডকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে দেশের ভেতর ও বাইরে থেকে নানামুখি ষড়যন্ত্র চলছে। সে ষড়যন্ত্রের আঁচ লেগেছে পার্বত্য চট্টগ্রামেও। এখানকার জনগণের সম্প্রীতি নষ্ট করতে একটি গোষ্ঠী উঠে পড়ে লেগেছে। এজন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে গত কয়েকদিনে যেসব অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে, এর পেছনে যারা দায়ি তাদেরকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।
একই সময়ে স্বরাস্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো: জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব:) বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামকে অশান্ত করার পরিকল্পনা অনেকেরই রয়েছে। নানাভাবে পরিস্থিতির সংকট করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাদের কোনভাইবেই ছাড় দেওয়া হবে না। যদি কেউ আইনশৃঙ্খলা অবনতি ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার পাঁয়তারা করে তাদের হাত ভেঙ্গে দেওয়া হবে।
বৈঠকের বিভিন্ন সুত্রে থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে, পার্বত্য অঞ্চলকে অশান্ত করে বর্তমান উপদেষ্টা সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে পতিত সরকার বা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই এই গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে, সহিংসতার ঘটনায় নিজেদের সম্পৃত্ততা নেই বলে দাবি করেছেন আঞ্চলিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ভেঙ্গে পুনর্গঠন, সেনা ক্যাম্প বৃদ্ধি, যতদ্রুত সম্ভব আইনশৃঙ্খলা অবস্থার উন্নতির কথা উঠে এসেছে বৈঠকে।
এদিকে, শনিবার সকাল থেকে পরিবহন শ্রমিক ও মালিক সংগঠনের ডাকা অবরোধে পণ্য ও যাত্রীবাহিসহ সবধরণের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। শহরে এখনো জেলা প্রশাসনের জারি করা ১৪৪ ধারা বলবৎ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে দোকানপাট। সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে সতর্কাবস্থায় অবস্থান করছে।
গত ২০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সকাল ১০টায় খাগড়াছড়ি ঘটনার প্রতিবাদে রাঙামাটি শহরে পাহাড়ী ছাত্র সংগঠনের বিক্ষোভ চলাকালীন দোকানপাট হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে বাঙালীদের সাথে সংঘর্ষে ১ জন নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শুক্রবার দুপুর ১টা থেকে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে।