ঢাকা ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সবারই গন্তব্য যেন ইনানী বিচ

সৈকত প্রেমীদের প্রশান্তির নতুন ঠিকানা মেরিন ড্রাইভ

সৈকত প্রেমীদের প্রশান্তির নতুন ঠিকানা মেরিন ড্রাইভ

ভ্রমণবিলাসীরা জাগতিক ব্যস্ততা দূরে রেখে সবসময় খুঁজে বেড়ান প্রশান্তি। আর সেই আশায় ছুটে যান এমন কোনো এক গন্তব্যে যেখানে মিলবে মানসিক তৃপ্তি। প্রশান্তিময় এমন আনন্দ উপভোগের জন্য বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার আবারও ভ্রমণপিপাসুদের পদচারণে মুখরিত হয়ে উঠেছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন গুলোতে ঢল নামতে শুরু করেছে পর্যটকদের। আকাশপথে, ট্রেনে ও সড়কপথেও আসছে পর্যটকের দল। সবারই যেন গন্তব্য কক্সবাজারের ইনানী সৈকত।

পর্যটন সমৃদ্ধ দেশগুলোতে গুরুত্ব দেওয়া হয় পর্যটকদের স্বাচ্ছন্দকে এবং সেভাবেই তৈরি করা হয় অবকাশকেন্দ্রের পরিবেশ। নানা প্রতিবন্ধকতা থাকলেও যুগের সাথে এখানকার পর্যটন সংশ্লিষ্ট উদ্যোগ হচ্ছে দিন দিন বিকশিত।

দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশ থাইল্যান্ডের ফুকেটে বিশ্বের নানাপ্রান্ত থেকে লাখো মানুষ ঘুরতে এসে মুগ্ধতা পায় সৈকত লাগোয়া রিসোর্ট-বিচ ভিলাতে অবস্থান করে।

রাজধানী ঢাকার শান্তিনগর বাজার রোড এলাকার ব্যবসায়ী মোহাম্মদ জিয়াউল হাসান বৃদ্ধ মা-বাবাসহ পরিবারের ৮ সদস্য নিয়ে বেড়াতে এসেছেন কক্সবাজার সৈকতে। তিনি উঠেছেন মেরিন ড্রাইভের ইনানী সৈকত এলাকার 'দি ওয়েভ রিসোর্টস' নামের একটি রিসোর্টে। কক্সবাজারের শহরকেন্দ্রিক সৈকতের হৈ- হুল্লোড় বাদ দিয়ে নির্জন ইনানী সৈকতের মজাই অন্য রকমের, মন্তব্য জিয়াউলের।

পাহাড় ও সমুদ্রঘেঁষা বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘ সড়ক হল কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ। এ সড়কের পাশে উখিয়ার জালিয়াপালং ইউনিয়নের ইনানীতে গড়ে উঠা ‘দি ওয়েভ রিসোর্ট’ যেনো ফুকেটের কোনো নান্দনিক রিসোর্টের প্রতিচ্ছবি।

এক দশমিক ২৫ একর জায়গা নিয়ে গড়ে উঠা রিসোর্টটি সামনে রয়েছে চোখ জুড়ানো বালুকাবেলা, সম্মুখে তিন তলার নয়নাভিরাম অভ্যর্থনা ভবন পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলে দেখা মিলবে সারি সারি ছোট ঘর।

এই ঘরগুলো একেকটি ভিলা, যেগুলোতে রয়েছে আধুনিক সব সুযোগ সুবিধা। এছাড়াও পরিবার নিয়ে একসাথে রাত্রিযাপনে রয়েছে বিশেষ স্যুইট ভিলা।

অতিথিদের রুচিসম্মত খাবার সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি নিয়ে বাংলা খাবার ও সামুদ্রিক খাবার (সীফুড এন্ড বিবিকিউ) পরিবেশনে দুটি ভিন্ন রেস্টুরেন্ট কম্পোনেন্ট রাখা হয়েছে বিলাসবহুল এই রিসোর্টে।

কনফারেন্স রুমের পরিসরটাও আধুনিকতায় মোড়ানো, কর্পোরেট সহ যেকোনো সভা এখানে অনায়াসে করা যাবে বিদ্যমান সব প্রযুক্তি নির্ভর পরিসেবায়।

দি ওয়েভ রিসোর্ট মহাব্যবস্থাপক মাইনুল হোসেন খান বলেন, 'আবহাওয়া ভালো থাকায় এই সপ্তাহের ছুটির দিনে প্রচুর পর্যটকের সমাগম ঘটেছে। আমাদের হোটেলের ৬ টি ফ্যামেলী স্যুইট ও ২৪ টি ডিলাক্স রুমের রয়েছে। এর অধিকাংশ রুমই দু-তিন দিনের জন্য আগে থেকেই ভাড়া হয়ে গেছে। পর্যটকের আনাগোনা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সৈকতে নিরাপত্তাব্যবস্থাও জোরদার করেছে ট্যুরিস্ট পুলিশ ছাড়াও জেলা পুলিশ। ফলে ইনানী সৈকতে বেড়েছে আগের তুলনায় অনেক বেশি পর্যটকদের নিরাপত্তা।

ঢাকা মিরপুর থেকে পরিবার নিয়ে বেড়াতে এসেছেন ব্যবসায়ী শামসুদ্দিন সুমন। কথা বলে বোঝা গেলো হোটেল গুলোর চাইতে ইনানীতে অবস্থিত রিসোর্টের পরিবেশ তাঁর ভ্রমণকে প্রাণবন্ত করে তুলেছে।

তিনি বলেন, " অতীতে ব্যবসায়িক প্রয়োজনে আমার থাইল্যান্ড যাওয়া হয়েছে। দেশেও যে সেখানকার মতো নান্দনিকতা আরো সুন্দরভাবে পরিবার সহ উপভোগ করতে পারবো, সেটি দি ওয়েভে না এলে বুঝতে পারতাম না।"

থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা সহ বিভিন্ন দেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ৪৩ জনের দক্ষ এবং অভিজ্ঞ সহকর্মীগণের মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করছেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা (মেজর) তানভীর মাহমুদ।

প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা স্বপ্নবিলাসী এই পর্যটন উদ্যোক্তার প্রত্যাশা অচিরেই সাশ্রয়ী মূল্যে মানসম্মত সেবার প্রত্যয়ে পথচলা তার এই প্রতিষ্ঠান পাবে জনপ্রিয়তা।

তানভীর বলেন, " পর্যটকদের সুন্দর সময় কাটানোর পরিবেশ নির্বিঘ্ন করতে রিসোর্টটি গড়ে তুলেছি। একজন পর্যটক চান তার ভ্রমণকালীন মূহুর্তগুলো হবে নিজের মতো, আশা করি যে কেউ এখানে আসলে সে ইচ্ছের প্রতিফলন ঘটাতে পারবে।"

ইকো সিস্টেম, ভৌগোলিক অবস্থান সহ নানা বিষয়ের গুরুত্ব বিবেচনায় সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে এই রিসোর্ট পূর্ণতা পেয়েছে উল্লেখ করে তিনি জানান, " সম্ভাবনাময় পর্যটনশিল্পের অংশীদার হিসেবে পর্যটকদের চাহিদাকে প্রাধান্য দিবে। সে লক্ষ্যেই আমাদের যাত্রা এবং ভবিষ্যতেও আশা করি ভালো কিছু হবে।"

চলতি বছরের ৮ এপ্রিল থেকে যাত্রা করা এই রিসোর্টে চলতি মাসে ( অফ সিজন) চলছে ৭৬% পর্যন্ত বিশেষ ছাড়, রুম প্রতি প্রতিদিনের ভাড়া শুরু মাত্র ( অফ সিজনে) তিন হাজার পাঁচশত টাকা থেকে শুরু।

কক্সবাজার শহর থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরে ইনানী সৈকতের কাছেই নৌ বাহিনীর জেটি (যা সিজনে সেন্টমার্টিন এ ভ্রমণে জাহাজ জেটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়) সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত দি ওয়েভ রিসোর্টে সিএনজি, টমটম,কার বা টুরিস্ট জীপ যোগে আসা যাবে অনায়াসে।

কক্সবাজারের পর্যটন ব্যবসায়ীরা বলেন, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এমনিতেই পর্যটকের সংখ্যা বেড়ে যায়। কিন্তু জুলাই-আগস্টে দেশের পটপরিবর্তনের কারণে পর্যটন ব্যবসা স্থবির হয়ে পড়েছিল। এবারের বর্ষা মৌসুমটি গেছে ভারি বর্ষণের মধ্য দিয়ে। গত দুই সপ্তাহের টানা ভারি বর্ষণসহ দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণেও পর্যটকদের সময় গেছে অত্যন্ত নিরানন্দে। এ সময়ে পর্যটকের তেমন ভিড় ছিল না। যারা এসেছিল তারাও ফিরেছে অনেকটা অতৃপ্তি নিয়ে।

পর্যটন ব্যবসায়ীরা আরও জানান, সৈকতে আগের তুলনায় তৎপরতাও বাড়িয়েছে উদ্ধারকারী লাইফগার্ড কর্তৃপক্ষ। সৈকতে উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নিয়োজিত থাকে পর্যটকদের সেবায়।'

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তানভীর হোসেন জানান, বর্ষা মৌসুম এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। এ কারণে সাগরের পানি এখনো একটু উত্তাল। যার কারনে ভাটার সময় হোটেল কতৃপক্ষের নিষেধ সত্ত্বেও সমুদ্র সৈকতে পর্যটক দম্পতি গোসলে নেমে নাফি শাহরিয়ার (৩০) নামক এক পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। এসময় তার স্ত্রীকে জীবিত উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে।

শুক্রবার দুপুর ২ টায় কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের ইনানী সৈকতে পর্যটকের মুত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর হোসেন জানান, মৃত অবস্থায় উদ্ধার পর্যটক নাফি শাহরিয়ার ঢাকার বংশাল থানার ১২/৮ বিকে গাঙ্গুলি এলাকার নুর মোহাম্মদের ছেলে। তিনি দেশী-বিদেশী সকল পর্যটকদের ভাটা সময় সমুদ্রে গোসল করতে সমুদ্রে না নামার জন্য এবং গোসলের সময় সকল পর্যটককে সর্তকতা অবলম্বনের জন্য অনুরোধ জানান।

জালিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসএস সৈয়দ আলম জানান, দেশের একমাত্র পাথরের বীচ ইনানী সৈকতে সৌন্দর্য দেখার জন্য প্রতিদিন প্রচুর পর্যটক আসেন, এই রকম এক পর্যটক দম্পতি ২০ সেপ্টেম্বর দুপুরেও স্বামী-স্ত্রী মিলে ভাটার সময় ভুলে সাগরে গোসলে করতে যান। গোসলের এক পর্যায়ে ভাটার স্রোতের টানে স্বামী-স্ত্রী দুইজনেই ভেসে যেতে থাকেন। এতে তাদের শোর-চিৎকারে ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্থানীয়রা ও দি ওয়েভ রিসোর্টস এর সিকিউরিটি সেলের লোকজন স্ত্রীকে উদ্ধার করতে সক্ষম হলেও স্বামী নাফি ভেসে গিয়ে নিখোঁজ হন।

ইনানী পুলিশ ফাঁড়ি আইসি মো. শাহজাহান জানান, সমুদ্র পর্যটক নিখোঁজের খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক বিচ কর্মি ও ট্যুরিস্ট পুলিশ সদস্যরা নিখোঁজ পর্যটকের সন্ধানে সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্ট উদ্ধার তৎপরতা চালায়। এক পর্যায় বিকাল পৌনে ৫ টার দিকে বীচ কর্মী ও দি ওয়েভ রিসোর্টস এর সিকিউরিটি সেলের সদস্যদের সহযোগিতায় নিখোঁজ পর্যটকের মৃতদেহটি ইনানী বীচ থেকে উদ্ধার করে উখিয়া থানার পুলিশ।

ভ্রমণ,কক্সবাজার,মেরিন ড্রাইভ
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত