সীমাহীন দুর্নীতি অনিয়মে অভিযুক্ত মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক মো. বজলুর রশিদ আখন্দকে স্বেচ্ছায় অবসরে পাঠানো হলেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন জেলার মাহবুব কবীর ও সর্বপ্রধান কারারক্ষী আমির হোসেন।
জানাগেছে, দেখাবো আলোর পথ রাখিবো নিরাপদ এমন স্লোগানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েও জেল সুপারের নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট নানা দুর্নীতি অনিয়ম করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটি পরিণত হয় দুর্নীতির অভয়ারণ্যে। যেখানে কারাবন্দীদের প্রতিনিয়ত পোহাতে হত সীমাহীন জুলুম নির্যাতন আর নির্যাতনের স্টিমরোলার। আর এসব নির্যাতন অনিয়মের হাত থেকে রক্ষা পেতে প্রতিনিয়ত হাতিয়ে নেওয়া হতো অগণিত অর্থ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বন্দী জীবন শেষে গণমাধ্যমকে জানান, জেলা কারাগার অভ্যন্তরে অনিয়মের যেন শেষ নাই। সর্বত্র চলছে অনিয়ম আর দুর্নীতি। অনিয়মই যেখানে নিয়ম পরিণত হয়েছে। এ সকল দুর্নীতির মূল হোতা সর্বপ্রধান কারারক্ষী সৈয়দ আমির হোসেন।
নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানায়, কারা অভ্যন্তরে দুর্নীতি অনিয়মের কারণে বন্দীরা সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। মুখ থুবড়ে পড়েছে জেলা কারাগারের স্বাভাবিক কার্যক্রম। জেলা কারাগারের একটি সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতির আদেশে মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক মো. বজলুর রশিদ আখন্দকে সেচ্ছায় অবসরে পাঠানো হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে সিট বাণিজ্য, ওয়ার্ড বাণিজ্য, মোবাইল কল বাণিজ্য, সাক্ষাৎ বাণিজ্য ও হাজতিদের খাবার চড়া দামে কেন্টিনে বিক্রিসহ নানান অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন ওই চক্রটি। এ চক্রের সদস্য জেলা কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক মো. বজলুর রশিদ আখন্দ, জেলার মাহবুব কবির, সুবেদার সৈয়দ আমির হোসেনসহ কারারক্ষীরা। কারাগার তত্ত্বাবধায়কের নিয়ন্ত্রণে কয়েকজন কারারক্ষী মিলে একটি লুটপাটের সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে জেলখানার ভেতর। স্থানীয় কতিপয় সাংবাদিকদের ম্যানেজ করে দীর্ঘদিন ধরে এই লুটপাটের বানিজ্য চলছে। বিজ্ঞ আদালত কর্তৃক সশ্রম কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের কারাগারে পাঠানো হলে এরপর কারাগার তত্ত্বাবধায়ক বজলুর রশিদ আখন্দকে টাকা না দিলে সশ্রমদন্ডপ্রাপ্ত কয়েদিদের কোন কাজ দেয়া হতো না। তাদের কাজ দেয়ার বিনিময়ে নেওয়া হতো বিপুল পরিমাণ টাকা। আর্থিক সঙ্গতি বিবেচনায় কোন কোন ক্ষেত্রে লক্ষ টাকা নজরানা নেওয়ার নজির রয়েছে।
আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে বন্দীরা পরিবার পরিজন কিংবা অতি প্রয়োজনে টেলিফোন করলে প্রতি মিনিটের জন্য ২৫ টাকা দিতে হয় কারাগার সিন্ডিকেট বাহিনীদের। মানিকগঞ্জ কারাগারে মোট ১৪টি ওয়ার্ড রয়েছে। আর এই ১৪টি ওয়ার্ডে ১৪জন ওয়ার্ড ইনচার্জ দায়িত্ব রয়েছে। এদের মাধ্যমে ওয়ার্ড বানিজ্য হয়। মামুন নামের এক কয়েদি জানান, কারাগারের ভিতর মুঠোফোনে একমিনিট কথা বলতে ২৫ টাকা বিল দিতে হয়। এটা অমানবিক।
ইউসুফ নামের হাজতি বলেন, আমি ৮ দিন কারাগারে ছিলাম। ৮ দিনের জন্য সুবেদার আমির আমার কাছ থেকে ২ হাজার টাকা নিয়েছে। এবং ভিতরে রাইটার ১৫০০ টাকা জোর করে নিয়েছে। আমাকে প্রথমে জেলখানার আমদানি রুমে রাখা হয়। আমদানি রুম থেকে ২ হাজার টাকার বিনিময়ে আমাকে বেড দেয়া হয়।
মানিকগঞ্জ কারাগারের সর্ব প্রধান কারারক্ষী সৈয়দ আমির হোসেন বলেন, আমি কারাগারের ভেতরের কোন অনিয়মের সাথে জড়িত নই। আমার জেল সুপারের সাথে সম্পর্ক ভালো তাই আমাদের লোক আমার সাথে ষড়ষন্ত্র করছে। আমি ২১ মাস ধরে মানিকগঞ্জ কারাগারে যোগদান করেছি। আমি কারাগারের ভিতরে নামাজ পড়ার ব্যবস্থা করেছি।
মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক বজলুর রশিদ আখন্দ ও জেলার মাহবুব কবিরের সাথে কারাগারে গিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের কারাগারে পাওয়া যায়নি। তাদের সরকারি মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তারা ফোন রিসিভ করেনি।