ঢাকা ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

হাজীগঞ্জে বিএনপির দু’গ্রুপের সংঘর্ষ

নামাজে গিয়ে সাইমন মায়ের কোলে ফিরলো রক্তভেজা শরীরে

নামাজে গিয়ে সাইমন মায়ের কোলে ফিরলো রক্তভেজা শরীরে

প্রতিদিনই এশার নামাজ আদায় করতে মসজিদে যাওয়ার সময় বলে যায়। এদিনও মসজিদে গিয়েছে। কিন্তু আমার কাছে বলে যায়নি। তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি এলাকায়। রাত ৮টার পরে লোকজন বাসার সামনে নিয়ে আসে। কিন্তু রুক্তভেজা শরীরে। তার অবস্থাদেখে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। আমার একমাত্র ছেলে। কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন বার বার। বলতে চাইলেন কেন আমার ছেলেকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। এভাবে ১৬ বছর বয়সী কিশোর ছেলে হত্যার বর্ননা দিলেন ২০ সেপ্টেম্বর রাতে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ পৌর এলাকার মকিমাবাদ বিএনপির দু’গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত কিশোর সাইমনের মা বিউটি আক্তার।

রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) রাতে হাজীগঞ্জ পৌর এলাকার মিঠানিয়া ব্রিজ সংলগ্ন একটি ৫ তলা ভবনে সাইমনদের ভাড়া বাসায় কথা হয় তার মা-বাবার সাথে।

এদিন সন্ধ্যা ৬টার দিকে সাইমনের গ্রামের বাড়ী ফরিদগঞ্জ উপজেলার সুবিদপুর ইউনিয়নের দিকদাই গ্রামের সরদার বাড়ীতে তাকে দাফন করা হয়। সেখান থেকেই বাবা-মা বাসায় আসেন। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বাবা-মা খুবই শোকাহত এবং অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। অনেক অনুরোধে কথা বললেন এই প্রতিবেদকের সাথে।

বিউটি আক্তার বলেন, স্বপ্ন ছিলো ছেলে কোরআনের হাফেজ হবে। যে কারণে গত দুই বছর আগে এলাকার সাউদুল কুরআন হিফজ মাদ্রাসায় ভর্তি করাই। সেখানে হিফজ বিভাগে পড়াশুনা করত সাইমন। ঘটনার দিন শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে আমার ছেলে খুব আনন্দ উল্লাস করছিলো। তখন বাসার প্রতিবেশীরা বলছিল সাইমন খুব দুষ্টামি করে, তার কোন বিপদ হতে পারে। কিন্তু এসব আমি কিছুই মনে করিনি। পরক্ষণে সত্যি সত্যি আমি ছেলেকে হারিয়ে ফেললাম। আর কোনদিন সাইমন আমাকে মা বলে ডাকবে না।

তিনি বলেন, সাইমনের বয়স যখন ৯ বছর। তখন তার পিতা সাইফুল ইসলাম আমাদের ছেড়ে চলে যান। তিনি অন্যত্র বিয়ে করেন। আমার সাথে ডিভোর্স হয়। ওই বয়সে সাইমনকে নিয়ে আমি বাপের বাড়িতে চলে আসি। গত ৩ বছর পূর্বে মো. ইউনুছ এর সাথে আমার বিয়ে হয়।

আবারও কান্নাজড়িত কন্ঠে বিউটি বলেন, গত ৭ বছর আমার ছেলের খোঁজ নেয়নি তার জন্মদাতা সাইফুল ইসলাম। আমি মানুষের বাসায় কাজ করে ছেলেকে লালন পালন করেছি। আমার স্বপ্নই ছিলো ছেলে হাফেজ ও আলেম হবে। আমরা সেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার। আমার মা-বাবা নেই। আমরা ৫ বোন। আমার কোন ভাই নেই।

সাইমনের বর্তমান বাবা ইউনুছ বলেন, সাইমুন হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক জামে মসজিদে এশার নামাজ পড়তে আসে। আমিও সেখানে এশার নামাজ আদায় করতে যাই। ৪ রাকাত নামাজ শেষে একজন পরিচিত ব্যাক্তি ফোন দিয়ে জানালো সংঘর্ষে সাইমন আহত হয়েছে। তখন দুই গ্রুপের সংঘর্ষের মাঝে অনেক কষ্ট করে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় পাই। সেখান থেকে কুমিল্লা রেফার করে। রাতেই কুমিল্লা থেকে পাঠায় রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ৭টায় সাইমন মারা যায়। সেখানে হাসপাতালের খরচ আসে সব মিলিয়ে প্রায় ৭২হাজার টাকা। অভাবের সংসারে আমাদের সামর্থ না থাকায় এলাকার লোকজনের সহযোগিতায় হাসপাতালের বিল পরিশোধ করে ঢাকা থেকে চাঁদপুরে আসি।

তিনি আরও বলেন, রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সাইমনের মরদেহ ঢাকার হাসপাতাল থেকে নিয়ে হাজীগঞ্জ থানায় আসলে ময়না তদন্তের জন্য দুপুরে চাঁদপুর মর্গে পাঠায়। ময়না তদন্ত শেষে গ্রামের বাড়ী ফরিদগঞ্জ দিকদাইর সরদার বাড়ীতে নামাজে জানাযা শেষে সাইমনকে দাফন করা হয়।

এদিকে সাইমন হত্যার ঘটনায় জনৈক সাইফুল ইসলাম নামে মামা পরিচয়ের এক ব্যক্তি হাজীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুক। তিনি বলেন, মামলায় ৩০০ থেকে ৪০০জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করা হয়েছে।

নামাজ,রক্তভেজা
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত