কক্সবাজারের তিন জনপ্রতিনিধি সহ চারজন যৌথ বাহিনীর জালে

প্রকাশ : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৯:০৮ | অনলাইন সংস্করণ

  স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার

কক্সবাজারে পৃথক অভিযানে তিন জনপ্রতিনিধিসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথবাহিনী। রবিবার রাতে ও সোমবার   র‌্যাব, বিজিবি ও পুলিশ এ পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করেন। এর মধ্যে দুইজন বর্তমান ও অপরজন সাবেক জনপ্রতিনিধি। অন্যজন সাবেক জনপ্রতিনিধির সেকেন্ড ইন কমান্ড।  ওই সময় একজনের কাছ থেকে একটি দেশীয় তৈরি অস্ত্র সহ বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম  উদ্ধার করা হয় বলে জানা গেছে।  অপরদিকে যৌথ বাহিনীর হাতে আটক পিএমখালী ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্দুল্লাহকে কক্সবাজার সদর মডেল থানার প্রাঙ্গন থেকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালিয়ে তার সমর্থকরা। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. জসীম উদ্দিন চৌধুরী এইসব তথ্যের সত্যতা  নিশ্চিত করেছেন। 

তিনি বলেন, যৌথ অভিযানে আটক কাউন্সিলর সাহাব উদ্দিন সিকদারকে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় ছাত্র- জনতার উপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় দায়েরকৃত একটি হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে চালান দেয়া হয়েছে। একই সাথে মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদনও করেছে। পরবর্তীতে তার দেয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে ঘটনায় জড়িত অপরদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে এর মধ্যে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সাহাব উদ্দিন সিকদারকে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় দায়েরকৃত একটি হত্যা মামলার গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে তোলা  হলেও অপর দুইজনকে আদালতে আনা হয়নি। কক্সবাজার আদালতের দায়িত্বশীল পুলিশ পরিদর্শক (কোট ইন্সপেক্টর) মো. গোলাম জিলানী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

র‍্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (ল অ্যান্ড মিডিয়া) মো. আবুল কালাম চৌধুরীর প্রেরিত ক্ষুদ্রে বার্তায় বলা হয়, শাহাব উদ্দিন সিকদারের বিরুদ্ধে হত‍্যাচেষ্টা, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, ভূমিদখল, অর্থ আত্মসাতের মামলাসহ শতাধিক অভিযোগ রয়েছে। উক্ত অভিযোগের ভিত্তিতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে ম্যাজিস্ট্রেট, র‍্যাব ও পুলিশ এর সমন্বয়ে গঠিত যৌথ একটি টিম অভিযান পরিচালনা করে দক্ষিণ রুমালিয়ারছড়া নিজ বাড়ি থেকে তাকে আটক করা হয়। পরে তার পৃথক দুটি বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়।

যৌথ বাহিনীর পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অভিযানে শাহাব উদ্দিন সিকদারের বাড়িতে অবৈধ অস্ত্র পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে যৌথ বাহিনীর টিম পৌঁছানোর পূর্বেই অবৈধ অস্ত্র সরিয়ে ফেলা হয়েছে। 
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সরকার পতনের পর আটক শাহাব উদ্দিনের তারবড় ভাই বিএনপি নেতা ইমরান শিকদার এর ছত্রছায়ায় এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। অভিযানে হতায়াতের ঘটনা ঘটেনি বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। থানা থেকে পিএমখালির চেয়ারম্যানকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা  যৌথ বাহিনীর হাতে আটক হওয়া কক্সবাজার সদরের পিএমখালি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল্লাহকে কক্সবাজার সদর মডেল থানা থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। সোমবার দুপুর পৌনে তিনটার দিকে চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহকে সদর থানা হেফাজতে নিয়ে আসা হলে হাজারো কর্মীসমর্থক এসে সদর থানা থেকে তাকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এসময় পুলিশ এবং আব্দুল্লাহর কর্মীসমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। 

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)  মুহাম্মদ ফয়জুল আজীম নোমান বলেন, পিএমখালি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল্লাহকে যৌথ বাহিনী আটক করে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় সোপর্দ করার জন্য নিয়ে আসলে পুলিশের গাড়ি থেকে নামানোর সময় আব্দুল্লাহর সন্ত্রাসী বাহিনী তাকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। পরে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। এসময় কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়। ওসি বলেন, সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে যারাই এ ঘটনার সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অপর অভিযানে কুতুবদিয়ার উত্তর ধুরুং ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজদৌল্লাহ ও তার সহযোগী মো. কাইছারকে গ্রেফতার করেছে যৌথ বাহিনী। ওই সময় তাদের কাছ থেকে একটি দেশি অস্ত্রসহ বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় কুতুবদিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরমান হোসাইন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রেফতারকৃত মো. কাইছার সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজদৌল্লাহ ডান হাত হিসাবে পরিচিত। 

এই বিষয়ে সন্ধ্যায় যোগাযোগ করা হলে কুতুবদিয়া আদালতের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. রেহান বলেন,  সন্ধ্যা পর্যন্ত এই নামের কোন আসামি আদালতে আনা হয়নি।