আঙুর চাষে বাণিজ্যিকভাবে সফল চাঁদপুরের কামরুজ্জামান

প্রকাশ : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:২০ | অনলাইন সংস্করণ

  শওকত আলী, চাঁদপুর

এই প্রথমবার চাঁদপুরের মাটি আঙুর চাষের জন্য উপযোগী বলে প্রমাণিত হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলার এক তরুণ উদ্যোক্তা আঙুরের চাষ করে বাণিজ্যিকভাবে সফলতার স্বপ্ন বুনেছেন। উদ্যোক্তাদের দাবি, চাঁদপুরের মাটিতে আঙুর চাষ করে সফল হওয়া শতভাগ সম্ভব।  

চাঁদপুর শহরতলীর কাছেই কল্যাণপুর ইউনিয়নে কালিভাংতি এলাকায় আঙুর চাষ করে বাণিজ্যিকভাবে সফলতার পথে এগিয়ে যাচ্ছেন উদ্যোক্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান প্রধানিয়া। বাণিজ্যিকভাবে ফলনের লক্ষ্যে এই উদ্যোক্তা ২০ শতক জমিতে আঙুর চাষ শুরু করেছেন।

জেলা শহর চাঁদপুরে বানিজ্যিকভাবে এই প্রথমবারের মত আঙুর চাষ হতে যাচ্ছে বলে কৃষিবিদ ও ফল চাষাবাদকৃত এলাকাবাসীর নিকট থেকে এ তথ্য নিশ্চিত হয়ে বলা যেতে পারে এলাকাবাসী গর্বিত। আগামীতে আরও নতুন উদ্যোক্তা রসালো এ ফল চাষে আগ্রহী হয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করে বেকারত্ব দূর হবে বলে আশা করছে সুধিজন ও সচেতনমহল।  আমাদের দেশে এটি বিদেশি ফল হলেও অনেক জনপ্রিয়, এর চাহিদাও রয়েছে অনেক। 

জানা যায়, দেশের অনেক জেলায় আঙুর চাষ করে সফলতা আসেনি। তবে চাঁদপুরের মাটিতে আঙুর চাষ করে সফল হওয়া সম্ভব হয়েছে। এর মধ্যে জেলা সদরে এটি চাষের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী বলে দাবি করছেন স্থানীয়রা। সদর উপজেলার চাঁদপুর-মতলব সড়কের পাশেই দেখা মিলছে ভিনদেশি এই রসালো ফল। থোকায় থোকায় ঝুলছে এ আঙুর ফল। ক্ষেতের বাঁশের মাচায় ঝুলে থাকা সবুজ আঙুর দূর থেকে পথচারীদের নজর কাড়ছে এবং মনের মধ্যেও আনন্দ দিচ্ছে।
বাংলাদেশে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে আঙুর গাছ ছাটাই করলে মার্চ-এপ্রিলে ফল পাওয়া যায়। এরপর শীতের সময়ে এ আঙুর ফলের ফলন আসে। সাধারণত আঙুর চাষের জন্য এমন জায়গা দরকার, যেখানে পরিমিত বৃষ্টি হবে কিন্তু মাটিতে পানি জমে থাকবে না। আবহাওয়া হতে হবে শুষ্ক, উষ্ণ, আদ্রতাপূর্ন ও পরিবেশ।

আঙুর পাকার সময় বৃষ্টি হলে আঙুরের গুণাগুণসহ আকৃতি নষ্ট হয়ে যায়। পাখিতে খেয়ে ফেলায় সতর্ক থাকতে হয়। পরিমিত সার ও যথাযথ পরিচর্যার মাধ্যমে একটি আঙুর গাছই বছরের পর বছর ফলন দিতে পারে এবং দিয়ে যায় বলে বিশেজ্ঞরা জানিয়েছেন। সেখানে ফলন পেতে বছর-বছর নতুন করে গাছ লাগাতে হয় না। জেলায় প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে আঙুর চাষের খবর শুনে এ ফলবাগানে ভিড় করছেন অনেকেই। এ দেশের যুব সমাজকে বেকারত্ব দূর করতে এ ফল চাষাবাদে তরুণদের স্বপ্ন দেখাচ্ছে, মোহাম্মদ কামরুজ্জামান ।

উদ্যোক্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ‘২০২১ সালে করোনা কমতে শুরু করলে আঙুর চাষ নিয়ে কাজ শুরু করি। আমার প্রজেক্টটি ৬ মাস আগে শুরু করেছি। প্রথমে ছাদ বাগান থেকে কিছু জাত নিয়ে চাষ শুরু করি। ২০২৩ সাল থেকে ফলনে বেশ ভালো ফলাফল পাই।

এই উদ্যোক্তা বলেন, বাগানে ৪৪টি জাতের মধ্যে ১২০টি মাতৃগাছে ফুল ফুটতে শুরু করেছে। কিছু গাছে ফল শোভা পাচ্ছে। এখানে ৬ মাস যাবত পরিচর্যা করা হচ্ছে। এতে আমার প্রায় ১৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। গ্রিন লং, একেলো, বাইকো নুর, লোরাস, ভেলেজ, ডিকসন, সুপার নোভা, নারু সিডলেস জাতের আঙুর চাষ করা হচ্ছে আমার এ বাগানে।

দর্শনার্থী মো. তানভীর হোসেন ও আমির হোসেন সরকার বলেন, চাঁদপুরে আঙুরের বড় বাগান আর কোথায়ও নেই। তাই বাগানটি দেখতে এসেছি। আমরা উদ্বুদ্ধ হচ্ছি, যাতে বাগান করতে পারি। যদিও আমরা আঙিনা এবং ছাদে চারা রোপণ করে সফলতা পাইনি। এখানকার দৃশ্য দেখে আবারও উৎসাহ পাচ্ছি। তার কাছ থেকে বিভিন্ন পরামর্শ এবং আঙুরের চারা নিচ্ছি।

কল্যাণপুর ও আশিকাটি ইউনিয়নের কৃষি কর্মকর্তা আনিসুল ইসলাম ও সাদিকা বেগম বলেন, দোআঁশযুক্ত লালমাটি, জৈব সার সমৃদ্ধ কাঁকর জাতীয় মাটি এবং পাহাড়ের পাললিক মাটিতে আঙুর চাষ ভালো হয়। জমি অবশ্যই উঁচু হতে হবে। যেখানে পানি দাঁড়িয়ে থাকবে না। প্রচুর সূর্যের আলো পড়বে এমন জায়গা নির্বাচন করতে হবে। আমাদের পক্ষ থেকে পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হচ্ছে।’

চাঁদপুর কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. সাফায়েত আহম্মদ সিদ্দিকী বলেন, চাঁদপুরে আগে আঙুর চাষ হতো না। যেগুলো হতো, তা পরীক্ষামূলক। এবার জেলায় প্রথমবারের মতো মিষ্টি আঙুর চাষ শুরু করেছেন মোহাম্মদ কামরুজ্জামান। তার আঙুর চাষের বিষয়টি আমরা অবগত আছি। এ আঙুর চাষের ক্ষেত্রে আমাদের পক্ষ থেকে সরকারের পক্ষ থেকে আমরা সকল ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত আছি। আমরা চাই এ  আঙুর চাষে মোহাম্মদ কামরুজ্জামান সফল হওয়ার পথে। তাকে দেখে আরো নতুন-নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হউক এটা আমাদের সকলের প্রতি প্রত্যাশা।