বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চাঁদপুরের গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থী আকবরের চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন চাঁদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আব্দুর রকিব। পুলিশ সুপারের নির্দেশে আকবরকে ফরিদগঞ্জ থানার ওসি তার বাড়ি থেকে এনে অ্যাম্বুলেন্স যোগে ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে পাঠান। এখন ঢাকা রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতাল গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থী আকবরের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
গত ৪ আগস্ট সিলেটে কলেজ ক্যাম্পাস এলাকায় আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলছিল। তখন বুক, পিঠ ও হাতসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলি লাগে আকবরের।
রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) চাঁদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আব্দুর রকিবের সাথে কথা হলে তিনি জানান, গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থী আকবরকে ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে পাঠানোর পর সেখানে তাকে উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে তিনি খোজ খবর রেখেছেন।
চাঁদপুরের পুলিশ সুপারের নির্দেশে শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাতে আকবরকে চাঁদপুর পুলিশ লাইনের একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময় পুলিশের ছোড়া গুলিতে বুক, হাত, পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছররা গুলি লাগে সিলেট মদনমোহন সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আকবর হোসেনের। ওই সময়ে আহত অবস্থায় তাকে সিলেট সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য বলা হলেও অর্থাভাবে চিকিৎসা সেবাবঞ্চিত হয় আকবর। গত একমাস ধরে গুলির ক্ষত নিয়ে বাড়িতে বিছানায় পড়ে থাকলেও পঙ্গু বাবা ছেলের চিকিৎসা না করাতে পেরে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল।
এ খবরটি বিভিন্ন গণমাধ্যমে ’অর্থাভাবে চিকিৎসা বঞ্চিত গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থী আকবর শিরোনামে খবর প্রকাশ হয়। এটি চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব এ’নজর কাড়ে। তিনি তাৎক্ষনিক গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থী আকবরের চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহন করে একটি মানবিক কাজ করে প্রশংসার দাবীদার হয়েছে।
আকবর হোসেনের মা ফেরদৌসী বেগম জানান, পুলিশ আমাদের বাড়িতে গিয়ে আকবরের চিকিৎসার খোঁজ খবর নেয়। এরপর আমাদের ঢাকা যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে আসতে বলেন। এরপর সবাই মিলে থানায় আসি। আমার ছেলেকে ঢাকায় পাঠায়।
আকবর হোসেন জানান, আন্দোলনে পুলিশ গুলি করলেও আজ পুলিশই আমাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠাচ্ছে। এতে আমি খুব খুশি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হানিফ সরকার বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ আকবর হোসেনের চিকিৎসা হীনতার সংবাদ পুলিশ সুপারের নজরে আসে। তার নির্দেশে থানা পুলিশ আকবরের বাড়িতে গিয়ে তার বিষয়ে খোঁজ-খবর নেন এবং চিকিৎসাহীনতার বিষয়টি নিশ্চিত হন।
আহত আকবর হোসেনের বাবা রওশন আলী বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুরুত্বর আহত ছেলেকে স্থানীয়দের সহযোগিতায় কোনোমতে চিকিৎসা করালেও পুরো সুস্থকরে তুলতে পারিনি। গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর পুলিশ আকবর হোসেনের উন্নত চিকিৎসার জন্য উদ্যোগ নিয়ে ঢাকায় পুলিশ হাসপাতালে পাঠায়।