সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার নিমগাছী বহুমুখী হাই স্কুলে সহকারি প্রধান শিক্ষক কে এম ইউনুছ রবিনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে বসানো হয়েছে। এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে ওই স্কুলের শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকমন্ডলী। ওই শিক্ষকের নিয়োগ বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ক্ষমতার প্রভাব খাঁটিয়ে ওই শিক্ষককে সহকারি প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। তিনি সোনাখাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু হেনা মোস্তফা কামাল রিপেনের চাচাতো ভাই এবং ওই স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ছিলেন। সে সময় ক্ষমতার দাপটে আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে তাকে সহকারি প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। এ নিয়োগের প্রতিবাদে প্রায় প্রতিদিনই বিক্ষোভ করছে বিদ্যালয়ের হাজারও শিক্ষার্থী। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ২৫ সেপ্টেম্বর প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান পদত্যাগ করেন। এরআগে তার বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর বিপুল টাকা দুর্নীতির অভিযোগ করেন শিক্ষক-কর্মচারিরা। তার পদত্যাগের পর ২৬ সেপ্টেম্বর সহকারি প্রধান শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেয়া হয়। রোববার শিক্ষার্থীরা স্কুলের প্রধান ফটকের সামনে দাড়িয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে এবং এ বিক্ষোভের মুখে গত চারদিনে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারেন নি ওই শিক্ষক।
অনেক শিক্ষার্থী সাংবাদিকদের জানায়, আমরা ওই নিয়োগ বাতিলের দাবী করছি। কারণ রবিন স্যার পদত্যাগী প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতির সহযোগী। তাকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে চাই না। এছাড়া অনেক অভিভাবক জানান, আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ক্ষমতার দাপটে ওই শিক্ষককে অবৈধভাবে সহকারি প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। এ নিয়োগ নিয়ে সমালোচনা থাকলেও ইউএনও মদোহয় সেই শিক্ষকেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। ওই স্কুলের অনেক শিক্ষক ও কর্মচারীরা বলেন, আমরা ২৬ সেপ্টেম্বর শিক্ষক-কর্মচারি সভা ও রেজুলেশন করে ইউনুছ রবিনের বিরুদ্ধে অনাস্থা নিয়ে এসেছি। ২৩ জন শিক্ষক-কর্মচারির মধ্যে ২১ জনই এতে স্বাক্ষর করেছে। আমাদের দাবী তাকে বাদ দিয়ে সিনিয়র যে কোন শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক করা হোক। ২০২২ সালে চেয়ারম্যান আবু হেনা মোস্তাফা কামাল রিপন অবৈধভাবে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হন। এ নিয়ে রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডে নাজমুল ইসলাম স্বপন নামে এক অভিভাবক পিটিশন দায়ের করেন। ক্ষমতার প্রভাবে জোরপ‚র্বক পিটিশনটি নিস্পত্তি করিয়ে বোর্ড থেকে কমিটির অনুমোদন নেয়া হয় এবং একই বছরের ১৭ এপ্রিল আব্দুল মান্নান নামে একজন অভিভাবক বাদী হয়ে আদালতে ওই কমিটিকে অবৈধ দাবী করে মামলা দায়ের করেন। এ মামলা উপেক্ষা করে ওই ম্যানেজিং কমিটি সহকারি প্রধান শিক্ষকসহ বেশ কয়েকটি পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করে। আব্দুল মান্নান নিয়োগ অবৈধ দাবী করে মামলা দায়ের করলে আদালত ৫ মে নিয়োগের উপর স্থিতাদেশ দেন। আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে নিয়োগ বানিজ্যর মাধ্যমে ১ জুলাই নিয়োগ পরীক্ষা, ২ জুলাই নিয়োগ ও ৩ জুলাই ইউনুছ রবিনকে তড়িঘড়ি করে চাকরীতে যোগদান করানো হয়। বাদীর আবেদনের প্রেক্ষিতে ৫ জুলাই ওই নিয়োগে আদালত নিয়োগের উপর পূর্বের স্থিতাবস্থার আদেশ বহাল রাখেন। আদালতকে তোয়াক্কা না করেই তার নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
এসব বিষয়ে কে এম ইউনুছ রবিন সাংবাদিকদের বলেন, সরকারি বিধি অনুযায়ী ইউএনও সাহেব দায়িত্ব অর্পণ করেছেন।
এ দায়িত্ব পেলেও স্কুলে গেলে ঢুকতে দেয়া হয়নি এবং এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ওই স্কুলের সভাপতি মো. নাহিদ হাসান খান আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, প্রধান শিক্ষক না থাকলে নিয়ম অনুযায়ী সহকারি প্রধান শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। অর্থাৎ নীতিমালা অনুযায়ী তিনি দায়িত্ব পালন করবেন। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি এবং তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।