শেরপুরে ভারী বৃষ্টিপাত ও বন্যায় নিহত ৪

প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০:০১ | অনলাইন সংস্করণ

  শেরপুর প্রতিনিধি

শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী, শ্রীবরর্দীও নালিতাবাড়ী উপজেলায় অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে উপজেলা পরিষদ চত্বর, সদর বাজারসহ ১০০টিরও অধিক গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় পানিতে প্রাণ হারানো চার জনের মধ্যে দুইজনের নাম পরিচয় জানা গেছে।

তারা হলেন- নালিতাবাড়ী উপজেলার খলিশাকুড়া গ্রামের ইদ্রিস আলী(৬০), বাঘবেড় গ্রামের মানিক মিয়ার স্ত্রী অমিজা খাতুন (৪৫) অপর দুই জনের নাম পরিচয় এখনও জানা যায়নি।

এছাড়াও নিখোঁজ রয়েছেন তিনজন। তারা হলেন- নালিতাবাড়ী উপজেলার অভয়নগর এলাকার বাছের আলীর ছেলে  আবুল হাতেম ও আলমগীর হোসেন, নামা বাতকুচি গ্রামের জহুরা খাতুন।

নালিতাবাড়ী থানার  ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছানোয়ার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আমরা দুইজনের পরিচয় শনাক্ত করতে পেরেছি। বাকি দুই জনের পরিচয় জানা যায়নি।

৫অক্টোবর শুক্রবার মহারশি ও সোমেশ্বরী নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েন হাজার হাজার মানুষ। পাহাড়ি ঢলে মাছের খামারের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

উপজেলা ও জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) রাত থেকে অতিবৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢলে ঝিনাইগাতী,শ্রীবরর্দীও  নালিতাবাড়ী উপজেলার মহারশি, সোমেশ্বরীও ভোগাই নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। নদীর পানি দু’কোল উপচে ঝিনাইগাতী সদর ইউনিয়নের ঝিনাইগাতী বাজার, রামেরকুড়া, খৈলকুড়া, দীঘিরপাড়, বনকালি, চতল, আহম্মদনগর, বৈরাগীরপাড়া, সুরিহারা, কালীনগর; ধানশাইল ইউনিয়নের বাগেরভিটা, দক্ষিণ দাড়িয়ারপাড় ও কান্দুলী; নলকুড়া ইউনিয়নের শালচূড়া, হলদীগ্রাম; গৌরীপুর ইউনিয়নের গৌরীপুর এবং হাতীবান্ধা ইউনিয়নের দুটি গ্রামসহ অন্তত শতাদিক গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়।

এসব এলাকার আমন ধান ও সবজি পানিতে নিমজ্জিত হয় এবং মাছের খামার ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঢলের পানির প্রবল চাপে অনেক কাঁচা সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে ঝিনাইগাতী সদর বাজারের অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ আছে এবং নালিতাবাড়ী থেকে ঢাকা ও শেরপুর যোগাযোগ এর মহা সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

পাউবোর শেরপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নকিবুজ্জামান বলেন, ঝিনাইগাতী সদর ইউনিয়নের খৈলকুড়া, দীঘিরপাড় ও পূর্ব দীঘিরপাড় এলাকায় মহারশি নদীর বাঁধের প্রায় ১৫০ মিটার অংশ ভেঙে যাওয়ায় পানি প্রবল বেগে উপজেলা পরিষদ চত্বর ও ঝিনাইগাতী সদর বাজারে ঢুকে পড়ে। পানি কমে গেলে জরুরি ভিত্তিতে বাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামত করা হবে। 

ঝিনাইগাতী সদর ইউপি চেয়ারম্যান শাহাদৎ হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার রাত থেকে শনিবার  ভোর পর্যন্ত অতিবর্ষণ হওয়ায় মহারশি নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এতে নদীর পাড়ের বাঁধ ভেঙে ঝিনাইগাতী বাজারসহ বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়। এ কারণে ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন দিলদার বলেন, উপজেলার ৪ হাজার ৩০০ হেক্টর জমির আমন আবাদ সম্পূর্ণ ও ১০০ হেক্টর জমির সবজি আবাদ পাহাড়ি ঢলের পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। পানি সরে গেলে ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ পাওয়া যাবে। উপজেলা মৎস্য কার্যালয়ের ক্ষেত্র সহকারী মো. গোলাপ হোসেন বলেন, ঢলের পানিতে উপজেলার ১০০টিরও অধিক মৎস্য খামারের মাছ ভেসে গেছে। এতে প্রাথমিক হিসেবে খামারের অবকাঠামোসহ প্রায়  ৬০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। 

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আশরাফুল আলম রাসেল পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, পাহাড়ি ঢলের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। প্রয়োজনে পানিবন্দি মানুষকে ত্রাণসহায়তা দেওয়া হবে। 

ইতিমধ্যে বিভিন্ন বেসরকারী সংগঠন ত্রান সহযোগিতা ও উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে এছাড়াও সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে।