মাতামুহুরীর তীর সংরক্ষণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগ

প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২০:১৩ | অনলাইন সংস্করণ

  চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি

কক্সবাজারের চকরিয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধিনে মাতামুহুরী নদীর তীর সংরক্ষণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। পাউবোর সংশ্লিষ্টদের গাফিলতির সুযোগ নিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন নিন্মমানের কাজ করায় কাজ করার মাত্র দুইমাসের ব্যবধানে নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ডাম্পিং করা বেশিরভাগ সিমেন্ট মিশ্রিত বালুর বস্তা। ফলে তীর সংরক্ষণ কাজের সুফল নিয়ে চরম অনিশ্চিতায় দিন কাটাচ্ছেন নদীর তীরবর্তী জনপদের বাসিন্দারা।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা অভিযোগ তুলেছেন, নিন্মমানের কাজের ফলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বরাদ্দের ৮০ লাখ টাকা পানিতে তলিয়ে যাবার উপক্রম হয়েছে। 

জানা গেছে, চলতি ২০২৪ সালের জুন মাসে চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের বাঘগুজারা রাবার ড্যাম লাগোয়া মুন্সিঘোনা এলাকায় চারশত মিটার এলাকায় মাতামুহুরী নদী তীর সংরক্ষণ কাজ শেষ করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৬ হাজার বস্তা সিমেন্ট মিশ্রিত বালুর ব্যাগ ডাম্পিং করার মাধ্যমে মাতামুহুরী নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ করা হয়। আর এ কাজে বান্দরবান পানি উন্নয়ন বোর্ড বরাদ্দ দেয় প্রায় ৮০ লাখ টাকা। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইতোমধ্যে কাজ বুঝিয়ে দিয়ে পাউবো থেকে কয়েক দফায় বিল উত্তোলন করে নিয়েছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু আগস্ট মাসে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে নেমে আসা দু'দফা পাহাড়ি ঢলের পানিতে নীচে নেমে গেছে ডাম্পিং করা বেশিরভাগ সিমেন্ট মিশ্রিত বালু ভর্তি বস্তা। এ অবস্থায় অবশিষ্ট থাকা অংশের কাজও নদীগর্ভে তলিয়ে যাবার উপক্রম হয়েছে বলে জানিয়েছেন এলাকার লোকজন। 

স্থানীয় লোকজন জানান, কক্সবাজারের ঠিকাদার দুর্গা দাশের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ঘরনার একটি সিন্ডিকেট  ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের বাঘগুজারা রাবার ড্যাম লাগোয়া মুন্সিঘোনা এলাকায় মাতামুহুরী নদীর তীর সংরক্ষণ কাজটি বাস্তবায়ন করেছেন। ২০২৪ সালের মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে সিমেন্ট বালু মিশ্রিত বস্তা নদীতে ডাম্পিং করা শুরু করে ঠিকাদারের লোকজন। 

স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন আওয়ামী লীগের ঘরনার হওয়ায় তাঁরা কাজের শুরুতে অনিয়মের আশ্রয় নিলেও ভয়ে বাঁধা দিতে সাহস করেননি এলাকাবাসী। পক্ষান্তরে ঠিকাদার দুর্গা দাশ স্থানীয় জনগনকে ভীতিতে রেখে কাজটি উঠিয়ে নিতে বরইতলী মুন্সিঘোনা এলাকার কতিপয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ব্যবহার করে। 

এ সুযোগে কন্টাকে কাজের দায়িত্ব পেয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা তীর সংরক্ষণ কাজের সন্নিকট এরিয়ায় সেলো মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে তা বস্তা ভর্তি করে ফের একই এলাকায় ডাম্পিং করে। অন্যদিকে সিমেন্ট বালু ভর্তি বস্তা ডাম্পিং করার আগে সেখানে জিও ট্রেক্টাইলের উপরিভাগে কংক্রিট দেওয়া হয়নি। 

বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ছালেকুজ্জামান বলেন, মাতামুহুরী নদীর তীর সংরক্ষণ কাজে ডাম্পিং করা বালু একই স্থান থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। আবার ডাম্পিংয়ের আগে নদীর তলদেশে বালু ভর্তি বস্তা এলোপাতাড়ি না ফেলার কারণে তীরে ডাম্পিং করা বালুর বস্তা পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ক্ষতিগ্রস্ত পয়েন্টে পুনরায় কাজ করে না দিলে নদী তীরে অবশিষ্ট থাকা বালু ভর্তি বস্তাসমুহ নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঠিকাদার দুর্গা দাশ বলেন, মাতামুহুরী নদীর তীর সংরক্ষণ কাজে হয়তো কিছুটা অনিয়ম হয়েছে। তিনি তিনি উল্টো প্রশ্ন করে বলেন, মাতামুহুরী নদীর তীর সংরক্ষণ কাজে আমরা অনিয়ম করেছি, তখন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা কোথায় ছিলেন। কাজ তদারকি ও কাজ বুঝে নয়ার দায়িত্বতো ওনাদেরই ছিল।

এ ব্যাপারে বান্দরবান পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অরূপ চক্রবর্তী বলেন, পাহাড়ি ঢলের প্রবল চাপে ডাম্পিং করা সিমেন্ট বালু ভর্তি কিছু বস্তা সরে গেছে এটা সত্য। আমরা ইতোমধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ দিয়ে নির্দেশনা দিয়েছি নদীতে নেমে যাওয়া বালু ভর্তি বস্তাসমুহ পুনরায় ডাম্পিং করার জন্য। 

তিনি আরো বলেন, ঠিকাদার অবশ্যই কাজটি করে দেবেন। যেহেতু তাদের সিকিউরিটি মানি এখনো আমাদের কাছে সংরক্ষিত আছে। একবছর পর্যন্ত এ কাজের মেয়াদ রয়েছে।