কক্সবাজারে শারদীয়া দূর্গা পূজা ঘিরে চার স্তরের নিরাপত্তা বলয়
প্রকাশ : ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১৮:৪১ | অনলাইন সংস্করণ
এএইচ সেলিম উল্লাহ, কক্সবাজার
দেশের সব অঞ্চলের সাথে পর্যটন রাজধানী কক্সবাজারেও শুরু হয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বৃহত্তর ধর্মীয় উৎসব শারদীয়া দূর্গা পূজা। বুধবার বোধনের মধ্যদিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। আনুষ্ঠানিকতা শুরুর আগে মঙ্গলবার রাতে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেছেন কক্সবাজার জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ নেতারা।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের নেতারা মতবিনিময়কালে বলেছেন, ৫ আগষ্টের পর দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংখ্যালঘুদের উপর হামলা ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেও কক্সবাজারে তেমন একটি ঘটনাও ঘটেনি। তাদের মতে, কক্সবাজারই দেশের একমাত্র জেলা যেখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি কখনোই বিনষ্ট হয় না। জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাবেক পৌর কাউন্সিলর উদয় শংকর পাল মিঠু এমনটাই দাবি করেছেন। তিনি বলেন, কক্সবাজারকে দেখেই দেশের বাকি ৬৩ জেলা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির শিক্ষা নেবে।
এবার কক্সবাজার জেলায় ৩২১টি মন্ডপে হবে দূর্গোৎসব। আগামি ১৩ অক্টোবর কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বিশাল প্রান্তরে বর্ণাঢ্য বিসর্জনের মধ্যদিয়ে এই উৎসব শেষ হবে।
দূর্গোৎসবকে ঘিরে জেলা শহর ও জেলাজুড়ে নিরাপত্তাবলয় তৈরি করা হয়েছে। সব ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে হার্ডলাইনে থাকছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। তাৎক্ষণিক সমস্যা সমাধান ও অভিযোগ গ্রহণ করার জন্য খোলা হয়েছে ১৪টি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। এরমধ্যে জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশ, কোস্টগার্ড এবং ৯ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের প্রধান করে কন্ট্রোল রুমের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
জেলা পুলিশের ৭৫০ জন সদস্য পূজায় আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে সার্বক্ষনিক নিয়োজিত থাকবে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) জসিম উদ্দিন চৌধুরী। ইতোমধ্যে সকল স্তরের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে জেলা প্রশাসকের প্রস্তুতি সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মুহাম্মদ সালাহউদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, দুর্গাপূজায় প্রতিটি উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। মাঠে ৪ স্তরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশ, সাদা পোশাকের পুলিশ তৎপর থাকবে।
তিনি জানান, ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে বিসর্জনের দিন বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হবে। সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণকেও আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, আমরা ৪ স্তরের নিরাপত্তা জোরদার করেছি। ৭৫০ জন পুলিশ সদস্য সার্বক্ষণিক মাঠে-মন্ডপে নিয়োজিত থাকবে। সাদা পোশাকের পুলিশ থাকবে মাঠে। এছাড়াও পুলিশ-র্যাব ইতোমধ্যে বিভিন্ন মন্ডপ পরিদর্শন করেছেন।
এদিকে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি উদয় শংকর পাল মিঠু বলেন, আমাদের শারদীয় উৎসব আনন্দঘন করতে প্রশাসন প্রস্তুতি শেষ করেছে। আমরা প্রশাসনের প্রস্তুতি নিয়ে খুশি এবং সন্তুষ্ট।
তিনি জানান, জেলায় এবার ৩২১টি মন্ডপে পূজা হবে। এরমধ্যে প্রতিমা পূজা ১৫১টি ও ঘট পূজা ১৭০টি। উপজেলাভিত্তিক মন্ডপের সংখ্যা হলো সদর উপজেলায় প্রতিমা ১৩৮টি, ঘট পূজা ১১টি। ঈদগাও উপজেলায় প্রতিমা ১৭টি, ঘট পূজা ১৫টি। মহেশখালী উপজেলায় প্রতিমা একটি, ঘট পূজা ৩৩টি। রামু উপজেলায় প্রতিমা ২৩টি, ঘট পূজা ১৩টি। চকরিয়ায় প্রতিমা পূজা ৪৬টি, ঘট পূজা ৪৩টি। কুতুবদিয়ায় প্রতিমা পূজা ১৪টি, ঘট পূজা ৮টি। উখিয়ায় প্রতিমা পূজা আটটি, ঘট পূজাও আটটি। টেকনাফে প্রতিমা পূজা হচ্ছে ছয়টি মন্ডপে।
এদিকে সাংবাদিকদের মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহবুবর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মমতাজ উদ্দিন বাহারী, জেলা উদযাপন পরিষদের সমন্বয়ক দুলাল চক্রবর্তী, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক দীপক শর্মা দীপু, সিনিয়র সহ-সভাপতি রতন দাশ, সাবেক পৌর কাউন্সিলর রাজবিহারী দাশ প্রমূখ।
উদয় শংকর পাল মিঠু বলেন, অতীতে যারা ধর্মীয় পরিচয়ে একটি দলের লেজুড়বৃত্তি করেছেন তারা ভালো করেননি। পেকুয়া ও নাছিরনগরের ঘটনায় ইচ্ছাকৃতভাবে বিরোধী মতের রাজনৈতিক দলের নেতাদের আসামি করা হয়েছে, যা আমরা কখনোই চাইনি। এদিকে গতকাল বুধবার রামু উপজেলার শারদীয়া দূর্গা পূজার মণ্ডপ পরিদর্শন করেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ ( প্রশাসন ও অর্থ) মো. মাজমুস সাকিব, রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমন কান্তি চৌধুরী, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. ফরিদ উদ্দিন।
রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমন কান্তি চৌধুরী বলেন, পুরো উপজেলাজুড়ে মণ্ডপ ঘিরে ব্যাপক নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পোশাকধারীর পাশাপাশি সাদা পোশাকে টহল টিম সার্বক্ষণিক মাঠে রয়েছে।