মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান বাস্তবায়নে চাঁদপুরে র্যালী ও সচেতনতামূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (১২ অক্টোবর) বিকেলে শহরের তিন নদীর মোহনা মোলহেডে জেলা প্রশাসন ও জেলা মৎস্য অধিদপ্তর এই সভার আয়োজন করে।
এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন। তিনি বলেন, নিজের বাড়ীতে নিজে যদি নিরাপদ থাকি তাহলে ইলিশের বাড়িতে ইলিশ কেন নিরাপদে থাকবে না। আমাদের দেখাতে হবে ইলিশের বাড়ি চাঁদপুরে ইলিশ নিরাপদ। আইনের প্রয়োগ করতে আমরা চাচ্ছি না। আমরা চাই নিজের সম্পদকে নিজেরা রক্ষা করবেন। ইলিশ মাছ আমাদের জাতীয় সম্পদ। নিজের সম্পদকে কেন ধ্বংস করবেন। ইলিশ যেহেতু রাষ্ট্রের সম্পদ, আপনার স্বার্থ থাকবে রাষ্ট্রের জন্যে। দেশের সম্পদ রক্ষা করার দায়িত্ব সবার।
জেলা প্রশাসক বলেন, ভুল করলে মাফ পাওয়া যায়, কিন্তু অপরাধ করলে মাফ পাওয়া যাবে না। ২২দিন নদীতে মাছ ধরলে তা অপরাধ হবে। চাঁদপুরের সবগুলো বরফ কল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নদীতে যাত্রী পারাপার ছাড়া কোন স্পীডবোট চলবে না। চুরি করে যে মাছ বাজারে বিক্রি করবেন, সে বাজারগুলোতে আমরা মনিটরিং করবো। আমরা মা ইলিশ সংরক্ষণে বেশ ক’টি পদক্ষেপ গ্রহণ করছি। ২২ দিন নদীতে কোন ইলিশ ধরা যাবে না। নদীতে কোন মাছ ধরার নৌকাও যাবে না। সম্মিলিতভাবে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান বাস্তবায়ন করতে হবে।
তিনি মাছ ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে বলেন, চাঁদপুরে ইলিশের দাম কমাতে হবে। সাধারণ মানুষের নাগালে নিয়ে আসতে হবে। ইলিশ মাছ উৎপাদনে কারো কোন বিনিয়োগ করতে হয় না, তাহলে কেন ইলিশের দাম বাড়বে। আপনাদের লোভ কমাতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আব্দুর রকিব, নৌ পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার সৈয়দ মোঃ মোশফিকুর রহমান, ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মোল্লা এমদাদুল্যাহ, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট নদী কেন্দ্র চাঁদপুরের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আমিরুল ইসলাম, কোস্টগার্ড চাঁদপুর স্টেশন কমান্ডার সাব লেফটেন্যান্ট এম ফজলুল হক, সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সাখাওয়াত জামিল সৈকত, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি শাহাদাত হোসেন শান্ত।
বক্তারা বলেন, ইলিশ আমাদের জাতীয় সম্পদ। উৎপাদন বাড়াতে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান সফল করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। একটি মা ইলিশ ১ থেকে ২৩ লাখ ডিম ছাড়ে। এই সময়ে একটি ইলিশ ধরা মানে ৫ লাখ ইলিশ বিনষ্ট করা। শুধুমাত্র প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে এই অভিযান বাস্তবায়ন সম্ভব না। জেলেসহ সকল শ্রেণির লোকদের অভিযান সফল করতে হবে। আপনাদের সতর্ক করার জন্য এই আয়োজন। আইন অমান্য করা যাবে না। যারা আইন অমান্য করবে তারা শাস্তির আওতায় আসবে। জেলেদেরকে যারা নদীতে নামানোর চেষ্টা করবে, তাদের খুঁজে বের করা হবে।
স্বাগত বক্তব্য দেন সভার সভাপতি জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মেহেদী হাসান। জেলেদের পক্ষে বক্তব্য দেন জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক তছলিম বেপারী। সভার সঞ্চালনায় ছিলেন হাইমচর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. মাহবুব রশীদ।
সভায় জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ, নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড, জেলা মৎস্য বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং কয়েক শতাধিক উপস্থিত ছিলেন।
সভা শেষে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে জেলা টাস্কফোর্স কমিটির সকল অংশীজনদের নিয়ে মেঘনা মোহনা থেকে একটি বর্ণাঢ্য নৌ র্যালী বের হয়ে অভয়াশ্রম এলাকা ঘুরে পুনরায় একই স্থানে এসে শেষ হয়।
শনিবার (১২ অক্টোবর) দিনগত রাত ১২টার পর থেকে আগামী ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন মা ইলিশ রক্ষায় পদ্মা-মেঘনা নদীতে ইলিশসহ সব ধরণের মাছ আহরণ নিষিদ্ধ থাকবে।