ঢাকা ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ৩০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দেশের সর্ববৃহৎ প্রতিমা বিসর্জনে লাখো মানুষের ঢল

'সমুদ্রের বালুকাবেলায় হয়ে উঠেছিল অসাম্প্রদায়িক উৎসব'

'সমুদ্রের বালুকাবেলায় হয়ে উঠেছিল অসাম্প্রদায়িক  উৎসব'

সমুদ্রের পানিতে বিসর্জন হবে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দূর্গোৎসবের প্রতীমা। 'মা দুর্গা'র বিদায়ে হাজির হওয়ার কথা ছিল হিন্দু পূর্ণার্থীদের। কিন্তু দেশের সর্ববৃহৎ বিসর্জনের এই আয়োজনে হাজির হয়েছেন নানা ধর্মের মানুষ। তাও আবার হাজারে হাজার। রোববার বিজয়া দশমীর দিনে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবনী পয়েন্ট হয়ে উঠেছিল উৎসবমুখর এক মিলন মেলার। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এসেছেন বিসর্জনে। এই উৎসবে এসেছেন সকল পেশার মানুষ। আর লাখো পর্যটক এসেছেন দূর্গোপূজার ছুটিতে। সব মিলিয়ে সমুদ্রের বালুকাবেলায় রোববারের বিকেলটা হয়ে উঠেছিল অসাম্প্রদায়িক এক উৎসবের। এ যেন প্রতীমা বিসর্জন নয়, লাখ লাখ মানুষের মিলনমেলা।

বেলা আড়াইটা থেকে সাংস্কৃতিক আয়োজনের মধ্যদিয়ে বিসর্জন অনুষ্ঠানের শুরু হয়। পরে একে একে সবাই শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন। বক্তাগণ কক্সবাজার জেলায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্যের কথা তুলে ধরেন। কক্সবাজারে দূর্গোৎসবকে ঘিরে যে উৎসব মানুষের মাঝে দেখা যায়, তা দেশের কোথাও দেখা যায় না।

বিকাল ৩টার পর থেকে মন্ডপ গুলো থেকে প্রতিমা বিসর্জন মঞ্চে আসতে শুরু করে। ট্রাকের বহর নিয়ে যুবকরা রং ছিটিয়ে বাজনা বাজিয়ে আনন্দ করতে করতে সমুদ্র সৈকতে নিয়ে আসছেন প্রতিমার বহর।

বক্তৃতা পর্ব শেষে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সমুদ্রের লোনাজলে বিসর্জন দেয়া হয় প্রতিমা। একে একে বিসর্জন হচ্ছিল, আর পূৄণার্থীদের মাঝে কান্না, আনন্দ ও উৎসবমুখর পরিবেশ। দেবী দূর্গার বিসর্জনে কেউ কাঁদছিলেন। কেউ আনন্দ করছিলেন।

কক্সবাজার শহরের গোলদীঘির পাড় এলাকার রাণীবালা দাশের চোখে ছিল পানি। তিনি বলেন, মা দূর্গার বিদায়কে কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছি না। দূর্গা মায়ের জন্য আবার আরেকটি বছর অপেক্ষা করতে হবে।

ঢাকার বারিধারা থেকে এসেছেন আবদুল করিম ও মাইমুনা খানম দম্পতি। তারা পূজোর ছুটিতে কক্সবাজার এসেছেন। তারা দূর্গোৎসবের এই আয়োজনে মুগ্ধ। তাদের জীবনে এমন আয়োজন দেখেননি।

রোববার (১৩ অক্টোবর) ছিল হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব দূর্গোপূজা। এদিন প্রতীমা বিসর্জনে সমুদ্র সৈকতে আয়োজন করা হয়েছিল বিসর্জন অনুষ্ঠানের। জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রশাসনিক কর্মকর্তা ছাড়াও জেলার রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন।

বিসর্জন অনুষঠানে বক্তব্য দেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন, পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ, বিএনপির কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবী বিষয়ক সম্পাদক লুৎফুর রহমান কাজল, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শামীম আরা স্বপ্না, সাবেক পৌর মেয়র সরওয়ার কামাল, সদর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ভিপি শহিদুল আলম বাহাদুর, কক্সবাজার প্রেসক্লাব সভাপতি মাহবুবর রহমান প্রমূখ। সভাপতিত্ব করেন জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি উদয় শংকর পাল মিঠু।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো.জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, কক্সবাজারের ৩২১ টি মণ্ডপের মধ্যে সমুদ্র সৈকতে ১৪১ টি বিসর্জন দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, শুরু থেকে আজ রোববার বিসর্জন দেয়া পর্যন্ত কোন অপ্রীকর ঘটনা ঘটেনি। তিনি জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জেলবাসীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

এদিকে বাকি প্রতিমা গুলো জেলার বিভিন্ন উপজেলার নদী-খালে বিসর্জন দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

রামু থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, রামুতে ২৩ টি প্রতিমার মধ্যে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ৬ টি, বাঁকখালি নদীতে ১৬ টি প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়। একটি প্রতিমা রেখে দেয়া হয়েছে। সামনে পূজার দিন ওইটি বিসর্জন দেয়ার কথা রয়েছে।

সমুদ্র সৈকত,প্রতিমা,বিসর্জন
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত