ঢাকা ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ৩১ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শেরপুরে পাহাড়ি ঢলে ঘরবাড়ি হারিয়ে দিশেহারা হতদরিদ্র গারো সম্প্রদায়

শেরপুরে পাহাড়ি ঢলে ঘরবাড়ি হারিয়ে দিশেহারা হতদরিদ্র গারো সম্প্রদায়

ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্ত ঘেষা শেরপুরের নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী উপজেলার পাহাড়ি জনপদে ঢলের পানিতে সৃষ্ট বন্যায় পাহাড়ি আদিবাসী গারো সম্প্রদায়ের মাটির তৈরি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে তারা।

দিন এনে দিন খাওয়া এসব আদিবাসী গারো সম্প্রদায়ের হতদরিদ্র মানুষ তাদের পেটের ক্ষুধার চেয়ে মাথা গোজার ঠাই নিয়ে বেশি চিন্তিত। বিশেষ করে ঝিনাইগাতী উপজেলার মরিয়মনগর আদিবাসী গ্রামের প্রায় শতাধিক গারো সম্প্রদায়ের মাটির তৈরি কাঁচা ঘর ভেঙে পড়েছে। এখন তাদের খোলা আকাশের নিচে ঠাই নেয়া ছাড়া কোন পথ নেই।

জানা গেছে, গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে নেমে আসা ভোগাই, চেল্লাখালি ও মহারশি নদী দিয়ে প্রবাহিত পাহাড়ি ঢলের স্রোতের কারণে ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে। বিশেষ করে আদিবাসী গারো সম্প্রদায়দের গ্রামের উপর দিয়ে ঢল নেমে যাওয়ার সময় তাদের কাঁচা ঘরবাড়িগুলো মাটির সাথে মিশে যায়। রোববার থেকে উজানের পানি নেমে আসায় সে ধ্বংসস্তূপের চিত্র ভেসে উঠছে।

উপজেলার গারো অধ্যুষিত মরিয়মনগর, দুধনই, ভাটপাড়া, বারোয়ামারী, ধানশাইল, বাঁকাকুড়া, গজারীকুড়া গ্রামের গারো জনগোষ্ঠীর মাটির ঘরগুলো ক্ষতির শিকার হয়েছে সবচেয়ে বেশি।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গ্রামগুলোর মধ্যে বেশি ক্ষয়ক্ষতির শিকার ভাটপাড়া। গ্রামটির ৩৭টি পরিবারের সবগুলো ঘর নুইয়ে পড়েছে। একেকটি পরিবারের ঘরের সংখ্যা দুই থেকে তিনটি। হঠাৎ করে মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে অনেক মানুষ পড়েছেন চরম বিপদে।

পার্শ্ববর্তী দুধনই, মরিয়মনগর, গজারীকুড়া, বারোয়ামারীতেও একই চিত্র। বারোয়ামারীর যুথিকা রাকসাম, আধুনিকা ম্রং, বণিকা চিরান, লুটিস চিরান, কবিতা ম্রং, সলিন ম্রং, মহিমা চিরান, নির্দেশ চিরান, আলফন্স চিরান প্রমুখের বাড়ি বন্যার পানিতে মাটির ঘরগুলো একেবারে শুয়ে পড়েছে। এছাড়াও অনেকের ঘর ভেঙেছে আংশিকভাবে। অনেকের পুকুর ডুবে গেছে।

ধানশাইল, বাঁকাকুড়ার প্রায় ১০টি গারো পরিবারের ঘর ধসে পড়েছে। তবে ঘরগুলো ধসে পড়ার আগেই মানুষ ঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। এতে মানুষের হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

ভাটপাড়ার বাসিন্দা সৌহার্দ্য চিরান বলেন, ‘উজানের ঢলে মাত্র দুই ঘণ্টার ব্যবধানে ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। আমার গ্রামের শুধুমাত্র কয়েকটি পাকা ঘর বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেয়েছে। ঘর হারিয়ে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছে আশেপাশের আত্মীয়-স্বজন, পরিচিতজনদের বাড়িতে।’

একই গ্রামের ফুলমনি ম্রং বলেন, ‘আমাদের ঘরবাড়ি সব ভাইঙ্গা নিয়ে গেছে। খাওয়ার সমস্যা হচ্ছে। গত দুইদিন ধরে কোন কিছু খাইতে পারি না। আমরা এখন নিরুপায়।’

ষাটোর্ধ্ব মিটিলা চিসিম বলেন, ‘দুইদিন ধরে খাওয়া-দাওয়া নাই। কাপড়-চোপড় নাই। সব তলায় গ্যাছে। কেউ আঙ্গরে খবর নেয় নাই।’

দুধনই গ্রামের মৃন্ময় চিরান জানান, তাঁর গ্রামের প্রায় ৮-১০টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বৃষ্টির মধ্যে রাতে অনেকেই তার বাড়িতে আশ্রয় নেন। ঘর হারানো লোকগুলো রীতিমত নির্বাক হয়ে গেছে।

পাহাড়ি নদী মহারশি ও সোমেশ্বরীর পানি বিপদসীমার উর্ধ্বে প্রবাহিত হওয়ায় এ বন্যার সৃষ্টি হয়। শেরপুরের সীমান্তবর্তী উপজেলা ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী ও শ্রীবরদীর কমপক্ষে ১৮টি ইউনিয়নের অধিকাংশ রাস্তাঘাট, বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলের মাঠ তলিয়ে গেছে। অসংখ্য বাড়িঘর পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে

এদিকে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি পুনঃনির্মাণ বা পুনর্বাসনের বিষয়ে শেরপুরের জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান জানায়, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ির তালিকা তৈরির কাজ চলছে। পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেয়া হবে।

এদিকে হতদরিদ্র আদিবাসী গারোদের বাড়িঘর বিধ্বস্তের বিষয়ে সরকারের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছেন জেলার সচেতন মহল।

শেরপুর,গারো,সম্প্রদায়ের
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত