কক্সবাজারে আদালত ঘেরাও করলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন
জামিনপ্রাপ্ত আ.লীগ নেতা রাশেদ শ্যোন অ্যারেস্ট
প্রকাশ : ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:২৩ | অনলাইন সংস্করণ
স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার
কক্সবাজারে গণ-আন্দোলনে হত্যা ও হামলার তিন মামলায় জামিন প্রাপ্ত জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মাসেদুল হক রাশেদকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়েছেন। মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) দিনে জামিন প্রাপ্তির পর রাতে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখিয়ে তাকে মুক্তি দেয়া হয়নি। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম কারাগারে রয়েছেন। কক্সবাজার জেলা কারাগারের জেল সুপার মো. শাহ আলম খান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, একটি হত্যা ও দুটি হামলার মামলায় ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে কারাগারে রয়েছেন মাসেদুল হক রাশেদ। তিনটি মামলায় মঙ্গলবার জামিন পান তিনি। জামিনের পর কারামুক্তির প্রক্রিয়া চলা অবস্থায় ১০ অক্টোবর দায়েরকৃত গত ১৬ জুলাই কক্সবাজার কলেজের সামনে আন্দোলনকারীদের উপর হামলার রাশেদকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়। যার কারণে আর কারামুক্তি দেয়া যায়নি।
অন্যদিকে মাসেদুল হক রাশেদসহ ৩১ আসামীকে জামিনের প্রতিবাদে ফ্যাসিস্টদের দোসর বিচারকদের অপসারণ ও জামিনে সহায়তাকারী বিএনপি-জামায়াতের কতিপয় আইনজীবীর শাস্তি দাবি, ছাত্র জনতার ঘোষিত ৫ দফা দাবি বাস্তবায়নের দাবিতে কক্সবাজারে আদালত ঘেরাও এবং ছাত্র জনতার গণ জমায়েত করে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। কক্সবাজার জেলা শাখার ব্যানারে বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কক্সবাজার আদালত চত্বরে এ গণ জমায়েত অনুষ্ঠিত হয়।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন কক্সবাজার জেলা শাখার নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে তাদের ৫ দফা দাবি বাস্তবায়নের আহ্বান জানান। আদালত ঘেরাও চলাকালে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে তাদের দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান।
এসময় সমন্বয়করা বক্তব্য রাখেন। একই সাথে এসব কর্মসুচীর সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন আইনজীবীরাও।
তারা বলেন, এখনো শহীদ ছাত্র-জনতার রক্তের দাগ শুকায়নি। কিন্তু আপনারা বিএনপি-জামায়াতের আইনজীবীরা স্বেরাচারের দোসর খুনি-হামলাকারীদের জামিন করাচ্ছেন৷ এই বেঈমানী ছাত্ররা মেনে নেবে না। একই সাথে খুনি ও দোসরদের জামিন মঞ্জুরকারী বিচারকদের ক্ষমা হবে না। তাদেরকে অতিসত্বর অপসারণ করতে হবে।
উক্ত গণ-জমায়েত ও বিক্ষোভ সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সমন্বয়ক সাহিদুল ওযাহিদ সাহেদ, রবিউল হোসেন, তাজদিজুর রেজা, জোনায়েদ হোসেন, সাগর ইসলাম, জিনিয়া শারমিন রিয়া, একরামুল হক, নবী জালাল, রিযাদ মনি।
আইনজীবীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, এড. তাহের সিকদার, এড. মুহাম্মদ।আবু সিদ্দিক ওসমানী, আবিদুর রহমান, সম্যক দৃষ্টি বড়ুয়া, ইসমাইল হোসেন, ফয়সাল মোশাররফ ও মিজান ভুট্টো।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচার হাসিনার পতনের পর দায়েরকৃত মামলায় গ্রেফতারকৃত আওয়ামী দোসরদের পক্ষে জামিনে তদবির করছে বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবীরা। এ নিয়ে কক্সবাজার জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে পুলিশ সদর দপ্তরে একটি গোপন প্রতিবেদন দিয়েছেন।
পুলিশের পাঠানো ওই প্রতিবেদনে বিএনপি-জামায়াতপন্থী কক্সবাজার আদালতে কর্মরত শীর্ষ ৮ জন আইনজীবীর নাম উল্লেখ রয়েছে। এবং দোসরদের পক্ষে বিএনপি-জামায়াতপন্থী আরো ১৫-২০ জন আইনজীবী আসামিদের পক্ষে লড়ছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। পুলিশের এই প্রতিবেদনটি বিএনপির নীতিনির্ধারক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে পৌঁছেছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। তারেক রহমান বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজনকে দায়িত্ব দিয়েছেন বলে ওই সূত্রটি দাবি করেছেন।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের সূত্রমতে, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচার হাসিনার পতনের পর সোমবার পর্যন্ত কক্সবাজারে ২২টি মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্য একটি মামলার বাদি পুলিশ। অন্য মামলার বাদি বিএনপির নেতাকর্মী ও ছাত্রদের পক্ষের লোকজন। ওই ২২টি মামলায় এজাহারনামীয় ৭২৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। এবং সন্দিগ্ধ আসামি ২১৩২ জন। ইতিমধ্যে পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে এজাহারনামীয়সহ অর্ধশতাধিক আসামিকে গ্রেফতার করেছেন। এর মধ্যে অধিকাংশ আসামী বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবীদের লড়াইয়ে মুখে জামিন বেরিয়ে এসেছেন।
এমন অভিযোগ উঠেছে, থানা থেকে আদালতের হাজতখানায় না ঢুকার আগেই জামিনমুক্ত হয়েছে। এই নিয়ে বিএনপির তৃনমুল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। অনেকেই বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
আদালতের একটি সূত্রমতে, গত ৫ আগস্ট থেকে আওয়ামী ৫৪ জন দোসরদের গ্রেফতার করেছেন আইনশৃঙ্খলাবাহী। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পর্যন্ত ৩১ জন জামিন পেয়েছে। অধিকাংশই জামিন শুনানিতে অংশ নিয়েছে বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবী। অপর একটি সূত বলছে, বিভিন্ন থানায় দায়েরকৃত এজাহারনামীয় কিছু সংখ্যক আসামিও বিএনপি -জামাতপন্থী আইনজীবীদের সহযোগিতায় কৌশলে জামিন নিয়েছেন গত কয়েকদিনে।
গতকাল বুধবার আন্দোলন চলাকালে কক্সবাজারের সিনিয়র আইনজীবী রমিজ আহমদ বলেন, ছাত্ররা যে আন্দোলন করছে তা যুক্তিসঙ্গত, ন্যায়সঙ্গত ও আইনসঙ্গত মনে করি। বাংলাদেশের নতুন প্রেক্ষাপটে আমরা আশা করেছিলাম যারা ফ্যাসিবাদের দোসর, অন্যায় করেছে, দেশের ক্ষতি করেছে তাদের পক্ষে কেউ থাকবে না। কিন্তু তাদের জামিনের পক্ষে বিএনপি জামায়াতের যারাই ছিল তারাই দোসর বলে মনে করি। বিএনপি জামায়াতে এখনো আওয়ামী পেতাত্মা লুকিয়ে আছে।
তিনটি হত্যা মামলায় রাশেদের জামিন বিষয়ে বলেন, এটা জামিন অযোগ্য ছিল। হাইকোর্ট বিভাগ সিদ্ধান্ত দিলে মনে করতাম সঠিক ছিল। সেশনকোর্টে জামিন দেয়ার কথা না। ফ্যাসিবাদের পক্ষে কাজ না করার জন্য বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতা যে ম্যাসেজ দিতে চায় তার জন্য আজকের ঘেরাও কর্মসূচি দরকার ছিল। এজন্য আইনজীবী সমাজকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান। জেলা ভিত্তিক যে মামলাগুলো আছে সেগুলোতে যাতে শক্ত ভূমিকা রাখা যায় সেজন্য আইনজীবী সমিতিসহ আইনজীবীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া দরকার।
আ.লীগ নেতা রাশেকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা, কক্সবাজার সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক( এসআই) মো. নুর মোহাম্মদ বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা শাহেদ বাবুর দায়েরকৃত মামলায় আ.লীগ নেতা
মাসেদুল হক রাশেদকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়েছেন।