পাবনার কাজিরহাট-আরিচা নৌরুটের যাত্রী পারাপারে স্পিডবোট আড়াই মাস বন্ধ রয়েছে। স্পিডবোট বন্ধ থাকায় যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দ্রুত সময়ে পাবনা থেকে ঢাকা যাতায়াতে সাধারণ যাত্রীরা এই বাহন ব্যবহার করতেন। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর স্পিডবোটের সাথে যুক্ত মালিক, চালক ও কর্মচারীদের খোঁজ নেই। পাবনা- মানিকগঞ্জের অওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদের নিয়ন্ত্রণে কতিপয় ব্যবসায়ীরা এই বোটগুলো পরিচালনা করতেন। এখন সেই বোট গুলো যমুনার চরে নদীর নালায় পড়ে আছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডবি¬উটিএ) বোটগুলোর রুট পারমিট বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, নতুন করে রুট পারমিট প্রক্রিয়া শেষ হলেই স্পিডবোট চালু হবে।
পাবনা থেকে সড়ক পথে যমুনা সেতু হয়ে রাজধানীতে যেতে সময় লাগে ৫ থেকে ৭ ঘন্টা। যানজট থাকলে ১০/১২ ঘন্টা পর্যন্ত সময় লেগে যায়। অথচ পাবনা থেকে কাজিরহাট ফেরি ঘাট থেকে স্পিড বোটে যমুনা নদী পার হয়ে মানিকগঞ্জের আরিচা দিয়ে ঢাকা যাতায়াতে সময় লাগে সর্বোচ্চ ৪ থেকে সাড়ে ৪ ঘন্টা। স্পিডবোট বন্ধ থাকায় যাত্রীরা দ্রুত ঢাকা যাতায়াত করতে পারছে না। এই রুটে দুই পারের অওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদের নিয়ন্ত্রনে ১৮ ও ১২ আসনের শতাধকি স্পিডবোট চলাচল করত। ৫ আগস্টের পর সবাই পলাতক থাকায় তা এখন বন্ধ।
কাজির হাট ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, স্পিডবোট বন্ধ থাকায় যাত্রী, ঘাটের দোকানদার, সিএনজি চালক, স্পিডবোডের চালক কর্মচারীরা বেকার বসে কষ্টে দিন পার করছে। স্পিডবোট চালক বরকত জানান দুই মাসের বেশি সময় ধরে স্পিডবোট চলাচল বন্ধ আছে। আমরা ৫০/৬০ জন চালক বেকার হয়ে বসে আছি। কাজ না থাকায় সংসার চালানো বিপদ হয়ে পড়েছে। এই পথে নিয়মিত যাতায়াত করেন সরকারি চাকুরীজীবী আশরাফুল আলম তিনি বলেন, আমি ঢাকায় চাকরি করি। বিভিন্ন সময় জরুরি কাজে পাবনায় বাড়িতে যাতায়াত করতে হয়। তাই সময় বাঁচাতে কুইক সার্ভিস বা স্পিডবোট ব্যবহার করতাম যাতায়াত করার জন্য। গত ৫ আগস্টের পর থেকে এই সার্ভিস বন্ধ থাকায় অসুবিধায় পড়েছি।
কাজিরহাট স্পিডবোট ঘাটের চায়ের দোকানদার আব্দুল হোসেন বলেন, ৫ আগস্ট এর পরের দিন থেকে এই পথে যাত্রী পারাপার খুবই কম। অল্প কিছু যাত্রী আসে, তারা লঞ্চ দিয়ে পার হয়। তাই যাত্রী নাই ব্যবসা নাই। বেচা বিক্রি কমে গেছে। যখন স্পিডবোট চলতো তখন দিনে ৫/৭ হাজার টাকা বিক্রি হতো। আর এখন বিক্রি হয় দিনে পাঁচশ-হাজার টাকা। দোকান নিয়ে টিকে থাকা মুশকিল হয়ে পড়েছে। স্পিডবোট তারাতারি চালু হলে হাঁফ ছেড়ে বাঁচতাম।
ঘাটের সিএনজি চালক মোহাম্মদ আলী বলেন, স্পিডবোট বন্ধ থাকায় যাত্রী কমে গেছে। আমাদের টিপও কমে গেছে। সারাদিন ১/২টি টিপ ভাগে পড়ে। এতে কিছুই হয় না।
কাজিরহাট ঘাট এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রইচ উদ্দিন জানান, এই ঘাটে বিগত দিনে দুই পারের কতিপয় আওয়ামী লীগ নেতা স্পিডবোটগুলো নিয়ন্ত্রন করতো। গত ৫ আগস্ট এর পর তারা জনরোষের ভয়ে স্পিডবোট ফেলে আত্মগোপনে আছে। এখন বিআইডাব্লিউটিএ স্পিডবোট গুলোর রুট পারমিট বাতিল করার উদ্যোগ নিয়েছে।
বিআইডবি্লউটিএ নগরবাড়ি কাজিরহাট কার্যালয়ের পোর্ট অফিসার মো. আব্দুল ওয়াকিল জানান, দুইমাসের বেশি সময় যাত্রী চলাচলে দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে সংশ্লিষ্ট বোট মালিক ও ইজারাদারের রুট পারমিট বাতিলের কথা লোক মারফত তাদের জানানো হয়েছে। কিন্তু তারাকেউ সাড়া দেন নাই। এখন নতুন করে দ্রুত রুট পারমিট দেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। খুব অল্পসময়ে স্পিডবোট চলাচল করতে পারবে।