গ্রাম্য চিকিৎসকের মৃত্যু নিয়ে রহস্য

সড়ক দুর্ঘটনার মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলায়

প্রকাশ : ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ০০:২৬ | অনলাইন সংস্করণ

  চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে আব্দুল হান্নান নামে এক গ্রাম্য চিকিৎসকের মৃত্যু নিয়ে তৈরি হয়েছে রহস্য। নিহেতর পরিবার থেকে থানায় হত্যা মামলা করা হলেও, পুলিশ স্থানীয়রা বলছে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে তার। মামলাটিতে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবিন্দিতে আছে সড়ক দুর্ঘটনার কথা।

জানা গেছে, ১৩ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার নিচ থেকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় আব্দুল হান্নানকে। হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৩দিন পর মারা যান তিনি। আব্দুল হান্নান উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের পাহাড়পুরের সায়েদ আলীর ছেলে। এরপর ১২ অক্টোবর নিহত আব্দুল হান্নানের ভাই আব্দুর রশিদ নাচোল থানায় হত্যা মামলা করেন।

মামলাটিতে ৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতসহ মোট ১৩জনকে আসামি করা হয়। সৃষ্ট রহস্যের অনুসন্ধানে নামে আলোকিত বাংলাদেশ।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ২৮ সেপেটম্বর রাতে মমিনের মোড় থেকে পাহাড়পুরের বাড়ির উদ্দেশ্যে হেঁটে রওনা হন আব্দুল হান্নান। তিনি গ্রাম্য চিকিৎসকের পাশাপাশি কাপড়ের দোকানি ছিলেন। কিছুক্ষণ পরই মোমিনের অদূরেই সাইফুদ্দিনের বাড়ির সামনে গুরতর অবস্থায় দেখা যায় তাকে। ‘বিকট শব্দ’ শুনে ঘর থেকে বের হয়ে ঘটাস্থলে আসেন স্থানীয় বাসিন্দা পানু ইসলাম। তিনি এসে দেখতে পান তিনজন ব্যক্তি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার নিচ থেকে টেনে বের করছেন আব্দুল হান্নানকে। পানু বলেন, দোলনাচালক আব্দুর রাজ্জাক ও দু’জন যাত্রী আব্দুল হান্নানকে অটোরিকশার নিচ থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে তার পরিবারকে খবর দেওয়া হয়।

স্থানীয় আরেক বাসিন্দা একবর আলী বলেন, আব্দুল হান্নানের মৃত্যু নিয়ে কেউ কোন কথা বলেনি। কারণ সবাই জানে তার মৃত্যু হয়েছে সড়ক দুর্ঘটনায়। পরবর্তীতে যখন শোনলাম এ ঘটনায় হত্যা মামলা করেছে তার পরিবার। অবাক হয়েছি। আমরা ধারণা করতেই পারিনি ঘটনাটি এভাবে বদলে দেয়া হবে। সেখানে উপস্থিত ২০-২৫ জন মানুষেরও একই বক্তব্য।

এদিকে হান্নানের ভাই আব্দুর রশিদের দায়েরকৃত এজাহারে উল্লেখ করেন, তার ভাই আব্দুল হান্নান ও ভাতিজা মো. মেরাজকে পূর্ব শত্রæতার জেরে আসামিরা পথরোধ করে। আসামিরা তাদের দুজনকেই এলোপাথাড়ি মারধর করে। এতে আব্দুল হান্নানের মাথার মাথায় ভিতরে ঢুকে যায় এবং রক্তক্ষরণ হয়। তাদের চেচামেচি শুনে লোকজন এসে উদ্ধার করে আব্দুল হান্নানকে হাসাপাতালে নেওয়া হয়।

এজাহারে এলোপাথাড়ি মারধরের কথা বলা হলেও আব্দুল হান্নানের শরীরের দুটি স্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। একটি মাথায় অপরটি পিঠে। 

আর কোথাও কোন আঘাতের চিহ্ন নেই বলে জানিয়েছেন খোদ মামলার বাদী আব্দুর রশিদ। তিনি বলেন, দাফনের জন্য ধোয়ার সময় আমি দেখেছি দুটি স্থানে আঘাত। আর কোথাও আঘাত নেই। একই কথা বলের মরদেহ ধোয়ানোর কাজে নিয়োজিত তার চাচাত ভাই এত্তাব আলীও।

হত্যা মামলা দায়েরের পর পুলিশ ২নং আসামি এত্তার আলীকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপার্দ করে। এরপর পুলিশ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা পায় অটোরিকশাচালক আব্দুর রাজ্জাকের। তাকে গ্রেপ্তারও করা হয়। পরে আব্দুর রাজ্জাক আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও নাচোল থানার এসআই দেওয়ান মো. আলমগীর হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, প্রথমে নিহতের পরিবার একটি অভিযোগ দিয়েছিলেন সেখানে হত্যার কথা ছিল না। তাতে ছিল জখমের কথা। বারবার এজহার দিতে বলা হয়, তারা দেয়নি। আব্দুল হান্নানের মৃত্যুর পর তারা এজাহার দেন। এজাহার নামীয় একজনকে গ্রেপ্তারের পর তদন্তে অটোরিকশা চালকের সম্পৃক্ত পায় পুলিশ। পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়েছে বলেও তদন্তে ওঠে আসেন। পরিপ্রেক্ষিতে আব্দুর রাজ্জাককে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়।

আদালতে সে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দী দিয়েছেন। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ২য় আদালতের বিচারক ঈশিতা শবনম তার জবানবন্দী রেকর্ড করেন। এসআই দেওয়ান মো. আলমগীর হোসেন জানান, এখনও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেলে বিষয়টি খোলাসা হয়ে যাবে।