পরিবারে স্বচ্ছলতা আনতে একযুগ আগে লেবাননে পাড়ি জমিয়েছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নিজাম উদ্দিন। কিন্তু নির্ধারিত কাজ না পাওয়ায় সে আশা তার পূরণ হয়নি।
বৈধ কাগজ না থাকায় মায়ের মৃত্যুর পরও দেশে আসতে পারেননি। তবুও নানা কষ্ট সয়ে প্রবাসেই জীবন কাটাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু শনিবার লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ইসরাইলের বিমান হামলায় প্রাণ হারিয়ে তার সব কষ্টের অবসান হয়েছে।
তার মৃত্যুর খবরে কসবা উপজেলার খাড়েরা গ্রামের বাড়িতে চলছে স্বজনদের আহাজারি। শোকার্ত স্বজনদের দাবি এবার যেন নিজামের মরদেহটা অন্তত দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। তাকে যেন দেশের মাটিতে দাফনের সুযোগ পায় পরিবার।
৩২ বছরের নিজাম উদ্দিন ওই গ্রামের মৃত আব্দুল কুদ্দুস-আনোয়ারা বেগম দম্পতির ছেলে।
নিজামের বড় বোন সায়েরা বেগম জানান, তাদের পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে নিজাম সবার ছোট। তাদের অভাব-অনটনের সংসারে নুন আনতেই পান্তা ফুরাতো। তাই ১২ বছর আগে সাত লাখ টাকা দেনা করে লেবাননে গিয়েছিল নিজাম।
কিন্তু ভাগ্য তার ভাইয়ের সহায় হয়নি জানিয়ে সায়েরা বেগম বলেন, সেখানে গিয়ে নির্ধারিত কাজ না পাওয়ায় ভালো উপার্জন ছিল না তার।
১২ বছরের প্রবাস জীবনে পরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা আনতে না পারলেও মায়ের থাকার জন্য একটি টিনের ঘর বানিয়েছিল নিজাম। কিন্তু ঘর বানানোর ছয় মাস পরেই মারা যান মা।
সায়েরা বেগম আরও বলেন কাগজপত্র না থাকায় মায়ের মৃত্যুর পরও নিজাম দেশে ফিরতে পারেনি। শেষ বারের মত মায়ের মুখটাও দেখতে পারেনি ভাইটি।
এছাড়া পরিবারের সবাই বিয়ের কথা বললেও অর্থনৈতিক কারণে বারবারই নিজাম তা এড়িয়ে গেছে বলেও জানান তার বোন।
শনিবার রাতেই নিজামের বন্ধুর মাধ্যমে ইসরায়েলি বিমান হামলায় তার মৃত্যুর খবর পান বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।
পরে প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শনিবার স্থানীয় সময় বিকাল সাড়ে ৩টায় বৈরুতের হাজমিয়ে এলাকায় একটি হোটেলে ইসরাইলের করা বিমান হামলায় মারা যান নিজাম। নিজাম লেবানন যুদ্ধে নিহত হওয়া প্রথম বাংলাদেশি।
কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ শাহরিয়ার মোক্তার জানন, এরমধ্যে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে। বৈরুতের পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেই নিজামের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।