কক্সবাজারের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও হত্যা, ডাকাতি, অপহরণসহ ৪৪ মামলার আসামি জিয়াবুল হক জিয়াকে(৪০)অস্ত্রসহ আটক করেছে র্যাব। আজ বুধবার ভোরে রামু উপজেলার রাজারকূল এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয় বলে জানিয়েছেন র্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের আইন ও গণমাধ্যম শাখার সিনিয়র সহকারী পরিচালক ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ কামরুজ্জামান।
আটক জিয়া কক্সবাজার সদরের চৌফলদন্ডী ইউনিয়নের মাজেরপাড়া এলাকার মনির আহমদের ছেলে। তার কাছ থেকে একটি দেশীয় অস্ত্র ও ২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।
র্যাবের দাবি, জিয়াবুল হক জিয়া চৌফলদন্ডী ইউনিয়নের ভূমি দস্যু ও চিংড়িঘের দখলকারী, অসংখ্য মামলার আসামি ও অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী। তার ভয়ে নির্ঘুম রাত্রীযাপন করেন এলাকাবাসী। এই জিয়াবুল হক জিয়ার নেতৃত্বে এলাকায় সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার ও নারী নির্যাতন, জোরপূর্বক নিরাপরাধ মানুষের জমি দখল, চিংড়িঘের দখল, চুরি, ডাকাতি, মাদক ও অস্ত্রসহ নানাবিধ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের তথ্য পেয়েছে র্যাব।
তাদের মতে, জিয়াবুল হক জিয়া আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার এড়াতে সু-কৌশলে বারবার নিজের অবস্থান পরিবর্তন করে আসছিল। তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় জিয়ার অবস্থান শনাক্ত করা হয়। সে রামু উপজেলার রাজারকুল ইউনিয়নের পূর্ব রাজারকুল এলাকায় তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে আত্মগোপনে অবস্থান করছিল। ওই তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার (৬ নভেম্বর) শেষ রাতের দিকে অভিযান চালায় র্যাব-১৫।
এ সময় র্যাবের উপস্থিতি বুঝে দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টাকালে জিয়াবুল হক জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে জিয়াবুল হক জিয়া জানায়, দীর্ঘ ১৫ বছর যাবত চৌফলদন্ডী এলাকায় সে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে আসছিল। তার অপরাধ সাম্রাজ্যে অন্য সহযোগীদের নিয়ে নিরীহ মানুষের চিংড়ি প্রজেক্ট দখল করে বিপুল পরিমাণ অর্থ সম্পদের মালিক বনে যায়।
জানা যায়, যখন কোন ঘের বা ভূমি তার দৃষ্টিতে পড়ে তখনই সেটা দখল করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠতো। পর্যায়ক্রমে দখলের উদ্দেশ্যে ঘের মালিকদের বিভিন্নভাবে হুমকি দিতো। এতে কাজ না হলে তার অন্যান্য সহযোগীদের মাধ্যমে ঘের মালিকদের জোরপূর্বক ধরে এনে চালানো হতো পাশবিক নির্যাতন।
র্যাবের দাবি, এমন কোন নির্যাতন নেই যা সে করেনি। ঘের মালিকরা হুমকি, নির্যাতন ও প্রাণ ভয়ে অনেকাংশে ঘেরের দখলদারিত্ব ছাড়তে বাধ্য হয়। এরূপ পরিস্থিতি তৈরি করে সে ঘের মালিকদের নিকট থেকে জোরপূর্বক স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে সাধারণ মানুষের ভূমি/চিংড়ি ঘের অবৈধ ভাবে দখল করে নিতো। সম্প্রতি যৌথবাহিনীর অভিযানে চৌফলদন্ডী ইউনিয়নের পশ্চিম পাড়া মাঝেরহাট এলাকা থেকে যে ৩০০টির অধিক স্বাক্ষরিত ফাকা দলিল দস্তাবেজ ও অস্ত্র-গোলাবারুদসহ উদ্ধার করা হয় তা তারই অধিনস্ত আস্তানায় ছিল বলে স্বীকার করেছে।
গ্রেপ্তারকৃত জিয়াবুল হক জিয়ার বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর থানায় হত্যাচেষ্টা, অস্ত্র, মাদক, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়, চুরি, ডাকাতি, নারী ও শিশু নির্যাতন এবং বন আইনসহ বিভিন্ন অপরাধে মোট ৪৪টির অধিক মামলা রয়েছে।