ঢাকা ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পেঁয়াজ বীজের দামে দিশেহারা  কৃষকরা  

পেঁয়াজ বীজের দামে দিশেহারা  কৃষকরা  

কম খরচে অধিক লাভবান হওয়ায় আগাম সবজি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার কৃষকরা। শীত মৌসুমের পেঁয়াজ চাষ করতে গিয়ে বীজের দাম আকাশচুম্বী হওয়ায় কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। দামের কারণে পেঁয়াজের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কার কথা বলছেন কৃষকরা। গত মৌসুমের চেয়ে চলতি মৌসুমে পেঁয়াজ বীজ দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে ঈশ্বরদীতে । চড়া মূল্যে বীজ কিনে ফলন ও আশাতীত দাম পাবেন কি না, তা নিয়ে কৃষকদের মধ্যে সংশয় ও শঙ্কা কাজ করছে।

জানা গেছে, মুড়ি কাটা পেঁয়াজ চাষে ঈশ্বরদীর কৃষকদের জুড়ি নেই। এর সঙ্গে বাড়তি প্রেরণা জুগিয়েছে বাজারে বছর জুড়েই পেঁয়াজের দামের ঊর্ধ্বমুখীতা। সব মিলিয়ে উপজেলার মাঠ জুড়ে চলছে পিঁয়াজ চাষ। এবার অতি বর্ষণ ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে আগাম পেঁয়াজ চাষে কৃষকরা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে নাবিতে বা দেরিতে হলেও অনেকেই পেঁয়াজ চাষ করছেন। কিন্তু বাজারে অতি চড়ামূল্যে বীজ কিনতে গিয়ে কৃষক দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। ঈশ্বরদীর শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে পেঁয়াজ বীজের প্রকার ভেদে (ছোট, জিরো সাইজ) ৮ হাজার টাকা থেকে ৮ হাজার ৫০০ টাকা প্রতি মণ (৪০ কেজি) বীজ বিক্রি হচ্ছে।

কৃষকরা বলছেন, এ রকম বীজ গত রোপণ মৌসুমে ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এবার বীজের দাম কৃষকের নাগালের বাইরে।

তবে কৃষি বিভাগ বলছে, বেশকিছু দিন থেকে পেঁয়াজের দাম চড়া। এ মৌসুমে পেঁয়াজ বীজের দাম বেশি। তারপরও কৃষকরা পেঁয়াজ রোপণ করবেন। গত বছর পেঁয়াজ চাষ করে ভালো দাম পেয়েছেন কৃষকরা। খরচ বেশি হলেও পেঁয়াজ চাষ ব্যাহত হবে না। পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নের কৈকুন্ডা,লক্ষ্মীকুন্ডা, প্রমত্ত পদ্মার বিস্তীর্ণচর, ছলিমপুর, ভাড়ইমারী, নওদাপাড়া সহ আশপাশের অন্তত ২০ টি গ্রামে মুড়ি কাটা পেঁয়াজের আবাদ হয়। ওই সব গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন, কাশেম আলী, মতিয়র রহমান বলেন, এবারে পেঁয়াজ বীজের দাম দ্বিগুণ। ৮ থেকে ৮ হাজার ৫০০ টাকা মণ দরে পেঁয়াজ বীজ বিক্রি হচ্ছে।

আবেদ আলী নামের এক কৃষক বলেন, তার দেড়- দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ রোপণ করার নিয়ত ছিল। বীজের দাম অস্বাভাবিক হওয়ায় সে আশা ভঙ্গ হয়েছে এবার। তিনি এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করবেন। বীজের ছোট বড় আকার ভেদে এক বিঘা জমিতে ৩ থেকে ৪ মণ বীজ প্রয়োজন হয়। সে হিসেবে এক বিঘা জমির জন্য বীজ কিনতে লাগবে তাদের ৩২ থেকে ৪০ হাজার টাকা। আবাদে জমি চাষ, রাসায়নিক সার, সেচ ও শ্রমিকের দিন মজুরি তো আছেই।

মঙ্গলবার সরেজমিনে উপজেলার লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে গেলে কৃষক শাহানুর, আফজাল হোসেন ও হাফিজার রহমান বলেন, গত মৌসুমে তারা ৪ হাজার টাকা মণ দরে বীজ কিনে ছিলেন। এবার দাম দ্বিগুণ। ৮ হাজার টাকা মণ। আফজাল হোসেন আরও বলেন, তিন মাসের ফসল হিসেবে গত মৌসুমে পেঁয়াজ চাষ করে ভাল লাভ হয়েছে। ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি হলে দাম কমে যায়।

আফজাল ও শাহানুর রহমান আরও বলেন, পেঁয়াজ চাষের কষ্টের কথা। ঘর বাড়ি ছেড়ে রাত জেগে জমিতে এক মাস পাহারা দিতে হয় পেঁয়াজ খেত। পেঁয়াজ রোপনের পর ২ মাস পর থেকে এক মাস ধরে জমিতে রাতে পাহারায় থাকতে হয়। না হলে এক রাতেই চোরেরা তুলে নিয়ে যায় সব পেঁয়াজ।

উপজেলার ঈশ্বরদী বাজারের পেঁয়াজ বীজ ব্যবসায়ী নাজমুল ইসলাম ও বাবলুর রশিদ বলেন, এবার ছোট সাইজের ( জিরো সাইজ) পেঁয়াজ ৮ হাজার টাকা থেকে ৮ হাজার ৫০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে সাইজ বড় হলে দাম একটু কম। গত মৌসুমের চেয়ে এ মৌসুমে দাম খুবই বেশি। দাম বেশি হওয়ায় বিক্রি খুব একটা ভালো না।

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় চলতি মৌসুমে এ পেঁয়াজ রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯২০ হেক্টর জমিতে। এ পরিমাণ জমিতে থেকে ১৩ হাজার ২১৬ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হবে।

ঈশ্বরদী উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মাহমুদা মোতমাইন্না বলেন, এ ফসলে প্রতি বছর কমবেশি ভালো লাভ হয়। এ জন্য উৎপাদন খরচ বেশি হলেও কৃষক পেঁয়াজ চাষ করবে। উৎপাদন ব্যাহত হবে না।

ঈশ্বরদী,কৃষক
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত