রংপুরে পূর্ণাঙ্গ শিশু হাসপাতাল নির্মাণ সম্পন্নের সাড়ে ৫ বছর পূর্ণ হয়েছে। লোকবলের অভাবে পড়ে আছে ৩১ কোটি টাকার অবকাঠামো। উদ্বোধনের দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও চালু হয়নি রংপুর ১০০ শয্যার শিশু হাসপাতাল। এটির কার্যক্রম শুরুর অপেক্ষায় রয়েছে স্থানীয়রা।
অত্যাধুনিক অবকাঠামোসহ চিকিৎসার নানা সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্ত্বেও হাসপাতাল চালুর বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কালক্ষেপণে ক্ষোভ বাড়ছে তাদের। তবে এটি কবে নাগাদ চালু হবে, তা জানেন না স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা।
সরেজমিনে হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, অত্যাধুনিক হাসপাতাল ভবনে যেন সুনসান ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত এক আবাসিক চিকিৎসক, চার নার্স ও নিরাপত্তাপ্রহরীরা কর্মহীন অলস সময় কাটাচ্ছেন। চত্বরে শিশুদের জন্য নির্মিতি বিভিন্ন খেলার রাইডগুলো ধুলায় মলিন হয়ে পড়ে আছে।
এদিকে, জেলার শিশুরা নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শয্যা সংকটে গাদাগাদি করে চিকিৎসা নিচ্ছে। রোগী ও স্বজন, চিকিৎসক-নার্সদের অবর্ণনীয় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। অবিলম্বে বিশেষায়িত হাসপাতালটি চালুর দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, রংপুর বিভাগের শিশুদের স্বাস্থ্যসেবার জন্য নগরীর সাবেক সদর হাসপাতাল চত্বরে এক দশমিক ৭৮ একর জমির ওপর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে এবং স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালটির নির্মাণকাজ শেষ হয় ২০১৯ সালে। ২০২০ সালের ৮ মার্চ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেলা সিভিল সার্জনকে ভবনটি হন্তান্তর করেছিল। তিনতলার হাসপাতালে রয়েছে ইমার্জেন্সি, আউটডোর, চিকিৎসকদের চেম্বার, ল্যাব, অপারেশন থিয়েটার, ব্রোন ইউনিট, ওয়ার্ড ও কেবিন। হাসপাতাল চত্বরে আছে সুপারিনটেনডেন্ট কোয়ার্টার, ডক্টরস কোয়ার্টারস, স্টাফ অ্যান্ড নার্স কোয়ার্টারস, ড্রাইভার কোয়ার্টারস। বিদ্যুতের সাবস্টেশন স্থাপনের জন্য আলাদা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। করোনার প্রাদুর্ভাব বাড়ায় ২০২০ সালের ১৯ এপ্রিল এটিকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সম্প্রসারিত ভবন ‘করোনা ডেডিকেটেড আইসোলেশন হাসপাতাল’ হিসেবে চালু করেছিল স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে করোনা কেটে গেলেও হাসপাতালের কার্যক্রম আজও শুরু হয়নি। এ অবস্থায় দ্রুত হাসপাতাল চালুর দাবি তোলেন স্থানীয়রা।
তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি এর উদ্বোধন করেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। সে সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাসপাতাল মিলনায়তনে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে জানান, হাসপাতালে ১৫ শয্যার আইসিইউ, সিসিইউ, ৭০-৮০টি শয্যায় সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন রয়েছে। রংপুর বিভাগ ও পাশের জেলার শিশুদের চিকিৎসায় হাসপাতালে দ্রুত জনবল নিয়োগ ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি দেওয়া হবে। তবে এখনও উদ্বোধনেই আটকে আছে। জনবল নিয়োগ হয়নি, দেওয়া হয়নি যন্ত্রপাতি।
রংপুর স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহাবুল আলম জানান, সাড়ে ৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৭ সালের ২১ নভেম্বর নির্মাণকাজ শুরু হয়। দুই বছর সময় বেঁধে দেওয়া হলেও এর আগেই কাজ শেষ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। হাসপাতালের প্রথমতলায় জরুরি ও বহির্বিভাগ, চিকিৎসকদের চেম্বার ও প্যাথলজিক্যাল ল্যাব রয়েছে। দোতলায় অপারেশন থিয়েটার ও বার্ন ইউনিট এবং তিনতলায় শিশু ওয়ার্ড ও কেবিনের ব্যবস্থা আছে। চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আলাদা আলাদা ভবন রয়েছে। ২০২০ সালের ৮ মার্চ হাসপাতাল ভবন জেলা সিভিল সার্জনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তবে এখনও শিশু হাসপাতালের প্রয়োজনীয় জনবল এবং শিশু স্বাস্থ্যসেবার যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়নি।
শনিবার সকালে রংপুরের শিশু হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডাক্তার মনিকা মজুমদার জানান এখানে একজন মেডিকেল অফিসার সহ দুইজন নার্স এবং দুইজন স্টাফ নিয়মিত বসেন। তিনি বলেন, প্রতিদিন ৪০/ ৫০জন শিশুরোগীকে আউটডোর চিকিৎসা দেয়া হয়।
এ ব্যাপারে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডাক্তার হারুন আর রশিদ বলেন, ‘হাসপাতালটির জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ এবং জনবলের চাহিদা নির্ধারণ করে বরাদ্দের জন্য মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। দাফতরিক কাজ চলছে। তবে কবে নাগাদ চালু হবে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছি না।’