চুয়াডাঙ্গায় মুন্নি হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য উদঘাটন

প্রকাশ : ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১০:২৯ | অনলাইন সংস্করণ

  চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি

চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গা থানাধীন ভাংবাড়ীয়া গ্রামস্থ খোয়াজ আলী শেখ এর কন্যা খালেদা আক্তার মুন্নি (১৮) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রহস্য উদঘাটন ও ঘটনায় জড়িত ২ ঘাতককে আটকের ঘটনায় জেলা পুলিশের প্রেসব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শনিবার দুপুর ২ টার সময় পুলিশ সুপারের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত প্রেসব্রিফিংয়ে চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত) রিয়াজুল ইসলাম উপস্থিত গনমাধ্যম কর্মীদের জানান, গত ৯ নভেম্বর ২০২৪ তারিখ দুপুর আনুমানিক ১২টার সময় ভিকটিম মুন্নি হাটবোয়ালিয়া বাজারে কেনাকাটা করার উদ্দেশ্যে বাড়ী থেকে বের হয়। ভিকটিম একই দিন সন্ধ্যা আনুমানিক ৬টার সময় তার মা’কে জানায় কেনাকাটা করতে রাত হয়েছে আলমডাঙ্গা খালার বাসায় থাকবে। পরবর্তীতে ১৪ নভেম্বর ২০২৪ তারিখ সকাল ৮টার সময় অজ্ঞাতনামা মহিলার অর্ধগলিত(পোকা ধরে গেছে) লাশ উদ্ধার পূর্বক ভিকটিমের পরিবারকে সংবাদ দিলে ভিকটিমের পরিবার ঘটনাস্থলে পৌছে ভিকটিমের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ট্যাটু দেখে লাশটি ভিকটিম খালেদা আক্তার মুন্নি’র মর্মে সনাক্ত করে। 

একইদিন নিহত মুন্নির মা বাদী হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার একটি হত্যা মামলা নং-১১ দায়ের করেন।  

চুয়াডাঙ্গা জেলার পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা, বিপিএম-সেবা তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনার মূলরহস্য উদঘাটনসহ ঘটনার সাথে জড়িত আসামীদের গ্রেফতারের জন্য প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। এর প্রেক্ষিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(প্রশাসন ও অর্থ) (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) রিয়াজুল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গা এবং পুলিশ সুপার(সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামানের নেতৃত্বে জেলা পুলিশের একাধিক টিম ঘটনার মূলরহস্য উদঘাটন এবং ঘটনার সাথে জড়িত প্রকৃত আসামীকে গ্রেফতারের লক্ষে মাঠে নামে।

অবশেষে ডিবি, চুয়াডাঙ্গার চৌকস টিম অভিযান পরিচালনা করে ১৫ নভেম্বর ২০২৪ তারিখ রাত আড়াইটার সময় ঘটনার সাথে জড়িত প্রকৃত আসামি সদর থানার হাজরাহাটি গ্ৰামের টোকন আলীর ছেলে মানিক মুন্সী (২২) এবং একই গ্ৰামের মহিদুল ইসলামের ছেলে পারভেজ মুন্সীকে (১৯) তাদের নিজ নিজ বাড়ী থেকে আটক করে।

ঘটনার বিষয়ে আসামী মানিক আলী ওরফে মানিক মুন্সি (২২) জানায় গত ৬ নভেম্বর ২০২৪ তারিখ আসামী ও তার বন্ধুরা বড়গাংনীতে মুন্নির সাথে টাকার বিনিময়ে অনৈতিক সম্পর্ক করার জন্য নিয়ে আসলে ভিকটিম স্থানীয়দের সহযোগীতায় ব্লাকমেইল করে বিশ হাজার টাকা আদায় করে। অতঃপর আসামী মানিক মুন্সি ভিকটিমের উপর রাগের বশবর্তী হয়ে প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা করে।

আসামী মানিক মুন্সি গত ৯ নভেম্বর ২০২৪ তারিখ বিকালে ফোনকলের মাধ্যমে আসামী মানিক মুন্সির সাথে ভিকটিম সারারাত বিশ হাজার টাকার বিনিময় অনৈতিক কাজ করতে সম্মত হয়। সন্ধ্যার পরে ভিকটিম মুন্নি সদর থানাধীন বোয়ালমারি নীলমনিগঞ্জ পিটিআই মোড়ে পৌঁছালে আসামী মানিক মুন্সি তার অপর সহযোগী আসামী পারভেজ মুন্সি ওরফে স্বপন(১৯) এর মোটরসাইকেল এ নিয়ে আসতে বলে। আসামী পারভেজ মুন্সি ওরফে স্বপন পিটিআই মোড় থেকে ভিকটিমকে রিসিভ করে বোয়ালমারি শ্বশানের রাস্তার ফাঁকা জায়গায় আসামী মানিক মুন্সির নিকট নিয়ে আসে। আসামীদ্বয় পানবরজের পিছনে জঙ্গলে ভিকটিমের সাথে পালাক্রমে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে।

আসামী পারভেজ মুন্সি ওরফে স্বপন ঘটনাস্থল থেকে চলে গেলে আসামী মানিক মুন্সি একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক করে ভিকটিমকে পাঁচ হাজার টাকা দিলে ভিকটিম টাকা নিতে অসম্মতি প্রকাশ করে এবং চিৎকার করলে ভিকটিমের গলা চেপে ধরলে উপুড় হয়ে পড়ে গেলে পিঠের উপর বসে গলাটিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ওড়না দিয়ে হাত বেধেঁ জঙ্গলের ফেলে রেখে ভিকটিমের শপিং ব্যাগ ও জুতা নদীতে ফেলে দেয়। ঘটনার বিষয়ে আসামীদ্বয় বিজ্ঞ আদালতে দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।