চাহিদা মেটানোর জন্য সংসারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মধ্যে আলু ও পেঁয়াজ দুই অন্যতম পণ্য। আর দৈনন্দিন এই দুই পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। পণ্য দুটির দাম কমার কোনও লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। অগ্রহায়ণ মাসে শীতকালীন সবজির সরবরাহ বেড়েছে রংপুরের বাজারে। প্রায় সব ধরনের সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা কমেছে। তবে পুরোনো আলুর দাম কেজি প্রতি ফের ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে। অপরদিকে ক্রেতাদের মধ্যে সবজি, ডিম, মুরগির দাম কমায় যে স্বস্তিবোধ, আলু-পেঁয়াজ কিনতে গেলে তা উল্টে যাচ্ছে। বাজারে এখন প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭৫ টাকা কেজি দরে, যা গত মাসে ৫৫-৬০ টাকা ছিল। ১০০-১২০ টাকার দেশি পেঁয়াজের দাম উঠেছে ১২০-১৩০ টাকায়। তবে ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ কেনা যাচ্ছে ১০০ টাকার মধ্যে।
রোববার রংপুর নগরীর বিভিন্ন বাজারে ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা আলু, পেঁয়াজের এই অস্বাভাবিক দামকে খুব স্বস্তিদায়ক বলে মনে করছেন না।সালাহউদ্দিন নামে একজন বলেন, আলুর দাম ৭০ টাকা, এটা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। একই অবস্থা পেঁয়াজের ক্ষেত্রেও। কিন্তু দুটি পণ্য এতটাই প্রয়োজনীয় যে বাজারে এলে কিনতেই হয়। বিকল্প কিছু নেই। তিনি আরো বলেন, মাসে পরিবারের যদি ৭-৮ কেজি আলু আর পাঁচ কেজি পেঁয়াজ লাগে। সেগুলোন কিনতে ব্যয় করতে হবে ১২-১৫শ’ত টাকা। এটা কি স্বাভাবিক কথা!
এই দুই পণ্যের দামের বিষয়ে সিটি বাজারের এক পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, আলু- পেঁয়াজের মৌসুম এখন শেষের দিকে। প্রতি বছর এ সময়ে দাম বাড়ে। তবে এ বছর শুরু থেকে দাম চড়া। এরপর এখন বেড়ে আরও বাজার অস্থিতিশীল হয়েছে। তাছাড়া সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে বোতলজাত সয়াবিনের দাম না বাড়লেও খোলা তেলের দাম বেড়েছে। বাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৭০ থেকে ১৭১ টাকায় উঠেছে। যেখানে বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৭ থেকে ১৭২ টাকা। এছাড়া প্রতি লিটার খোলা পাম তেল ১৬২ থেকে ১৬৩ টাকা। দোকান গুলোতে শীতের সবজির পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। বাজারে সবজির দাম অনেকটা কমেছে গত মাসের তুলনায়। শাকের দাম তুলনামূলক ভাবে বেশি। বেশিরভাগ সবজিই ৩০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু শিম ও করলার দাম ৭০-১০০ টাকা কেজি। ঢ্যাঁড়স, পটোল, ঝিঙা, পেপে, চিচিঙা ৩০-৫০ টাকায় নেমে এসেছে। এছাড়া বেগুন, বরবটি, করলা ও কাঁকরোল ৫০-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিছুদিন আগেও এসব সবজির দাম ৫০ টাকার উপরে ছিল। অপরদিকে, এক ফুলকপি ৫০ টাকা কেজি, পাতা কপি ৪০ টাকা কেজি এবং লাউ ৫০-৭০ টাকা থেকে ৩০- ৫০ টাকায় নেমেছে। মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৫০ টাকা, মুলা প্রতি কেজি ৬০ টাকা, গাজর প্রতি কেজি ১৬০ টাকায় কিনছে ক্রেতারা। কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৪০ কেজি দরে। টমেটো ১৪০ টাকা, শিম ৮০- ১০০ টাকা ও শসা বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকায়।
সবজি বিক্রেতা আবু বলেন, শীতের সবজির সরবরাহ বাড়ছে। আগামীতে দাম আরও কমে আসবে। এদিকে সবজির মতো মাছের বাজারে কিছুটা স্বস্তি মিলেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে মাছের দাম ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। কেজিতে ৩০ টাকা কমে প্রতি কেজি পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকায়। কেজিতে ২০ টাকা কমে প্রতি কেজি তেলাপিয়া বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগেও বিক্রি হয়েছিল ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা পর্যন্ত। প্রতি কেজি রুই হচ্ছে ২৩০ থেকে-২৮০ টাকায়।
এদিকে, গত সপ্তাহ থেকে বাজারে ব্রয়লার ও পাকিস্তানি মুরগির দাম কম। এখন প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭০-১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা ১৯০ থেকে ২২০ টাকা উঠেছিল। পাকিস্তানি মুরগির দাম ২৮০-৩০০ টাকা প্রতিকেজি। এছাড়া বাজারে প্রতি হালি ফার্মের মুরগির ডিমের দাম ৪৬-৪৮ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৬৫০-৭০০ টাকায়। সবজি, মাংস ও মাছের দাম কমলেও চড়া চালের বাজার।
সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, বাজারে মোটা চালের দর কেজিতে ৫২-৫৫ টাকা, আর চিকন চাল ৬৫-৮০ টাকা। এক মাসের ব্যবধানে মোটা ও চিকন চালের দাম বেড়েছে যথাক্রমে ১.৯ শতাংশ ও ২.৭৮ শতাংশ। চাল বিক্রেতারা জানান, আমন ধান ওঠা শুরু হলে বাজারে দাম কমতে শুরু করবে। বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট ৭০-৭২ টাকা, আটাশ ৬০-৬২ টাকা, নাজিরশাইল ৭৬-৮২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দেশের বাজারে আলু, পেঁয়াজ, ভোজ্যতেল, চিনির মতো নিত্যপণ্যের দাম দীর্ঘদিন ধরে উচ্চপর্যায়ে রয়েছে এবং ক্রমবর্ধমানভাবে বাড়ছে। এতে মানুষের কষ্ট বাড়ছেই। কারণ নিত্যপণ্যের চাহিদা মেটাতে দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষকে জীবনযাপনের ব্যয় নির্বাহে তীব্র লড়াই করতে হচ্ছে।