ঢাকা ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চট্টগ্রাম বন্দরের এক শতাংশ সার্ভিস চার্জ চায় চসিক

চট্টগ্রাম বন্দরের এক শতাংশ সার্ভিস চার্জ চায় চসিক

চট্টগ্রাম বন্দরের আয়ের এক শতাংশ সার্ভিস চার্জ চাইছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। নগরীর রাস্তাঘাট সংস্কার ও উন্নয়নের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের আয়ের একটি অংশ চাইছে সিটি করপোরেশন। যদিও এ দাবি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের অতীতের একাধিক মেয়রের ছিল। কেউ আজ অবধি সার্ভিস চার্জের নামে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে এ অর্থ আদায় করতে পারেনি।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, বিদ্যমান আইনের সংশোধন করা না হলে এ ব্যাপারে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া কঠিন হবে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, চট্টগ্রাম শহরের বড় একটি অংশজুড়েই বন্দর ও বন্দরসংক্রান্ত বিভিন্ন স্থাপনার অবস্থান। বন্দরের কাজে ব্যবহৃত দৈনিক অন্তত ১৫ হাজার ট্রাক, লরি ও কাভার্ডভ্যানসহ ভারী যানবাহন চলাচল করে এই নগরীর বিভিন্ন সড়কে। ফলে দ্রুত নষ্ট হচ্ছে সড়ক। এতে সংস্কারে বাড়তি ব্যয় হচ্ছে সিটি করপোরেশনের। সেবা খাতে একক প্রতিষ্ঠান হিসেবেও বেশি গুরুত্ব পায় চট্টগ্রাম বন্দর। এসব সেবা অব্যাহত রাখতে বন্দরের আয় থেকে ১ শতাংশ সার্ভিস চার্জ দাবি করেছে সিটি করপোরেশন। চট্টগ্রাম বন্দরের আয়ের এক শতাংশ র্ভিস চার্জ চাইছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। নগরের রাস্তাঘাট সংস্কার ও উন্নয়নের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের আয়ের একটি অংশ চাইছে সিটি করপোরেশন। তবে এ দাবি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের অতীতের একাধিক মেয়রের ছিল। কেউ আজ অবধি সার্ভিস চার্জের নামে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে এ অর্থ আদায় করতে পারেনি।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা ডা. শাহাদাত হোসেন দায়িত্বভার গ্রহণের পর বন্দরের বাৎসরিক আয়ের এক শতাংশ সার্ভিস চার্জ চেয়ে গত ২০ নভেম্বর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যেও শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ সম্পন্ন হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। যার কারণে চট্টগ্রামে গড়ে উঠেছে প্রচুর শিল্পকারখানা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়াও চট্টগ্রামে রয়েছে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ফলে এ অঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন অর্থনৈতিক কার্যক্রম বজায় রাখতে সড়ক-মহাসড়কগুলো সচল রাখা ও এর সার্বক্ষণিক সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

চিঠিতে তিনি আরও উল্লেখ করেন, চট্টগ্রামের অধিকাংশ সড়ক ৬-১০ টন বোঝার গাড়ির জন্য নির্মাণ করা হলেও ৫০-৬০ টনের বোঝা নিয়ে গাড়ি চলাচল করছে। হাজার হাজার ট্রাক-লরিসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করায় নগরীর অভ্যন্তরীণ রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর, জেটি থেকে প্রতিনিয়ত ভিআইপি বিমানবন্দর সড়কে অসংখ্য ভারী যানবাহন চলাচল করে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দরমুখী সড়কগুলো এ কারণেই প্রতিনিয়ত নষ্ট হচ্ছে। ভারী যানবাহনের কারণে নিয়মিত রাস্তা-কালভার্ট নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, যাতে নগরবাসীর চলাচলে যানজটসহ চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে। জনগণের চলাচলের জন্য সুষ্ঠু সড়ক ব্যবস্থাপনা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের অন্যতম দায়িত্ব। এসব রাস্তাঘাট সংস্কার করতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন যা সিটি করপোরেশনের বর্তমান সক্ষমতা দিয়ে জোগান দেওয়া সম্ভব নয়।

এ প্রেক্ষাপটে চট্টগ্রাম বন্দরের বাৎসরিক আয় থেকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে ১ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ পরিশোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে তা সিটি করপোরেশনের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রধান সড়ক, কালভার্ট ও টেকসই উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড সম্পাদনে কার্যকর অবদান রাখতে সক্ষম হবে। যা বন্দরের সুষ্ঠু কার্যক্রম অব্যাহত রাখার পাশাপাশি জনগণের চলাচলের নিরাপত্তাসহ সার্বিক পরিস্থিতির উন্নয়নসহ চট্টগ্রামকে গ্রিন, ক্লিন, হেলদি সিটি হিসেবে গড়তে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন জানান, আমরা সার্ভিস চার্জ হিসেবে বন্দরের বার্ষিক আয়ের ১ শতাংশ চেয়ে নৌপরিবহন উপদেষ্টার কাছে চিঠি পাঠিয়েছি। এটা সিটি করপোরেশনের পাওনা। বন্দরেরই উচিত এ টাকাটা সিটি করপোরেশনকে দিয়ে দেওয়া। এর আগে বন্দর চেয়ারম্যানের সঙ্গেও এ প্রসঙ্গে আলোচনা করেছি। তিনি এ ব্যাপারে সার্বিক সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। বন্দর তো সব জায়গায় টাকা দিচ্ছে। সিটি করপোরেশনের পাওনা কেন দেবে না? বন্দরের বড় বড় গাড়িগুলো কিন্তু সিটি করপোরেশনের রাস্তা দিয়ে চলছে। আমাদের সকল লজিস্টিক সাপোর্ট বন্দরকে দিচ্ছি। ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামত করতেই সিটি করপোরেশনের রাজস্ব আয়ের বড় অংশ চলে যায়। প্রয়োজনে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে হলেও তদবির করে ন্যায্য দাবি আদায় করবো।

মেয়র বলেন, কেবল চিঠি দিচ্ছি না। এ ব্যাপরে মন্ত্রণালয়ে দেন–দরবার করব এবং এ ব্যাপারে তাদের বুঝানোর চেষ্টা করব, এটা সিটি কর্পোরেশনের পাওনা এবং সেটা যেন দিয়ে দেয়। এ অর্থ পেলে চট্টগ্রামকে আরো ভালোভাবে সাজাতে পারব। বন্দরও যদি চট্টগ্রামের উন্নয়ন চায়, তারা যদি তাদের মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি বলে তাহলে ১ শতাংশ অর্থ পেতে সমস্যা হবে না।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, বিগত সময়ে খোরশেদ আলম সুজন যখন প্রশাসক হিসেবে ছিলেন তখন সার্ভিস চার্জ হিসেবে এক শতাংশ সিটি করপোরেশনের জন্য দাবি করেছিলেন। কিন্তু আমাদের বিদ্যমান আইন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ আইন-২০২২, যেটার প্রেক্ষিতে আমরা চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালনা করি। এ আইনে এটার প্রভিশন না থাকার কারণে সিটি করপোরেশনকে টাকা দেওয়ার সুযোগ নেই। চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানিয়েছে, গত ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং করেছে ৩১ লাখ ৬৮ হাজার ৬৯০ টিইইউস। এ ছাড়া কার্গো বা খোলা পণ্য হ্যান্ডলিং হয়েছে ১২ কোটি ৩২ লাখ ৪২ হাজার ৭৪৮ মেট্রিক টন। বন্দরের পণ্যভর্তি কনটেইনারের বেশিরভাগই পরিবহন হয়েছে সড়কপথে। জানা গেছে, এর আগে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রাম বন্দরের কাছ থেকে সার্ভিস চার্জ হিসেবে ১ শতাংশ আদায়ের দাবি জানিয়েছেন। পরবর্তীতে একাধিক মেয়র এ দাবি জানান।

এদিকে অর্থনীতিবিদ ও সাধারণ নগরবাসী মেয়রের উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তারা বলছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা চট্টগ্রামের বাসিন্দা। তাই এবার কর্পোরেশনের প্রস্তাব এবং দীর্ঘদিনের দাবিটি পূরণের বিষয়ে আশাবাদী তারা। বন্দরের আয় থেকে চসিককে বরাদ্দ দেয়া হলে রাস্তাঘাট সংস্কার এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে গতি আসবে বলেও মনে করেন তারা। এছাড়া একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে শহরের রাস্তাঘাটের বড় ব্যবহারকারী বন্দর। তাই রাস্তাঘাটের রক্ষণাবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান চসিককে অর্থ দেয়াও উচিত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

চসিক সূত্রে জানা গেছে, এ অর্থ পেলে চসিকের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রধান সড়ক, কালভার্ট ও টেকসই উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড সম্পাদনে চসিক কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে।সার্ভিস চার্জের যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলা হয়, চট্টগ্রামের অধিকাংশ রাস্তা ৬–১০ টন ওজনের গাড়ির জন্য নির্মাণ করা হলেও ৫০–৬০ টনের বোঝা নিয়ে গাড়ি চলাচল করছে। হাজার হাজার ট্রাক, লরিসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করায় নগরের অভ্যন্তরীণ রাস্তাঘাট দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর, জেটি হতে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সড়কে অসংখ্য ভারী যানবাহন চলাচল করে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দরমুখী সড়কগুলো এ কারণেই প্রতিনিয়ত নষ্ট হয়। এসব ভারী যানবাহনের কারণে নিয়মিত রাস্তা, ব্রিজ ও কালভার্ট নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে নগরবাসীর চলাচলে যানজটসহ চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে। জনগণের চলাচলের জন্য সুষ্ঠু সড়ক ব্যবস্থাপনা সিটি কর্পোরেশনের অন্যতম দায়িত্ব। এসব রাস্তাঘাট নিয়মিত সংস্কার করতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন যা সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান সক্ষমতা দিয়ে যোগান দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

উল্লেখ্য, গত ২০২৩–২০২৪ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর কন্টেনার হ্যান্ডলিং করেছে ৩১ লাখ ৬৮ হাজার ৬৯০ টিইইউস। এছাড়া কার্গো বা খোলা পণ্য হ্যান্ডলিং হয়েছে ১২ কোটি ৩২ লাখ ৪২ হাজার ৭৪৮ মেট্রিক টন। বন্দরের পণ্যভর্তি কন্টেনারের সিংহভাগ পরিবহন হয়েছে সড়ক পথে। অর্থাৎ বন্দরের পণ্যবাহী যানের চাপ বাড়ছে নগরের সড়কে।উল্লেখ্য, গত ১২ নভেম্বর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান টাইগারপাস নগর ভবনের অস্থায়ী কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন মেয়রের সঙ্গে। এসময় চট্টগ্রাম বন্দরের আয়ের ১ শতাংশ ‘নগর উন্নয়ন মাশুল’ হিসেবে দেওয়া হলে শহরের অবকাঠামোগত উন্নয়নে সিটি কর্পোরেশন আরো বেশি ভূমিকা রাখতে পারবে বলে বন্দর চেয়ারম্যানকে জানান ডা. শাহাদাত। এর আগে ২০২১ সালের ২০ জুন বন্দর ভবনে অনুষ্ঠিত চসিক ও বন্দরের যৌথসভায় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি–রপ্তানির প্রতিটি কনসাইনমেন্টের (চালান) বিপরীতে ‘সিটি ডেভেলপমেন্ট চার্জ’ নামে কোনো ফি শুল্ক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আদায় করা যায় কীনা তার উপায় খোঁজারও সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া গত ১৫ মে চসিকের প্রাক বাজেট (২০২৪–২৫ অর্থবছর) আলোচনায়ও বন্দর থেকে ‘সিটি ডেভেলপমেন্ট চার্জ’ আদায়ে একমত পোষণ করেন সুশীল সমাজ। খসড়ায় থাকলেও চূড়ান্ত আইনে বাদ : ২০২১ সালের ৫ এপ্রিল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ আইন ২০২১ এর চূড়ান্ত খসড়া মন্ত্রিপরিষদের সভায় অনুমোদন দেয়া হয়। ওই খসড়ায় এতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ শতাংশ অর্থ চসিককে প্রদানের বিষয়টি অর্ন্তভুক্ত ছিল। নগরের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য এ অর্থ প্রদান করার কথা ছিল। অথচ ২০২২ সালের এপ্রিলে ওই খসড়া ‘চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ আইন–২০২২’ হিসেবে চূড়ান্ত অনুমোদন পায়। এতে চসিককে ১ শতাংশ অর্থ দেয়ার বিষয়টি বাদ পড়ে।

চট্টগ্রাম বন্দর,সার্ভিস চার্জ,চসিক
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত