সভাপতি না করায় কলেজ শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে মারধর-ভাংচুর

প্রকাশ : ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১৯:০১ | অনলাইন সংস্করণ

  চাঁদপুর প্রতিনিধি

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার গৃদকালিন্দিয়া হাজেরা হাসমত ডিগ্রি কলেজের এডহক কমিটির সভাপতি পদে নাম প্রস্তাব না করায় কলেজের অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত, শিক্ষক-শিক্ষর্থীকে মারধর ও কলেজের বিভিন্ন জিনিসপত্র ভাংচুর করেছে সাবেক এমপি হারুনুর রশিদ এর অনুসারী বিএনপি নেতাকর্মীরা

ঘটনার পর থেকে কলেজের শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তাদের দাবী কলেজে সাবেক এমপি হারুনুর রশিদের দান-অনুদান থাকা সত্বেও তাকে কলেজ কর্তৃপক্ষ যথাযথ সম্মান দেয়নি।

সরেজমিন কলেজে গিয়ে মারধরের শিকার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও ঘটনার সাথে জড়িত বিএনপি নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত ৫ আগস্টের পর দেশের সব কলেজের পরিচালনা পর্ষদ বাতিল হয়। এরপর গৃদকালিন্দিয়া হাজেরা হাসমত ডিগ্রি কলেজের সভাপতি মনোনীত হন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা ডাঃ আনোয়ারা হক। তিনি এর আগেও সভাপতি ছিলেন। এরপর থেকে চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) আসনের বিএনপির সাবেক এমপি লায়ন হারুনুর রশিদ এর অনুসারী নেতাকর্মীরা তাকে সভাপতি মনোনীত করার জন্য প্রস্তাব করেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের গৌরী রানী সাহার কাছে।

সাবেক এমপিকে সভাপতি হিসেব প্রস্তাব না করায় সর্বশেষ গত ১৭ নভেম্বর সকাল ১০টার দিকে বিএনপির নেতাকর্মীরা কলেজ এলাকায় মনাববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। পরে কলেজ অধ্যক্ষের কক্ষে এসে কেন সাবেক এমপিকে সভাপতি হিসেবে প্রস্তাব করা হলো না মর্মে উত্তেজিত হয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত, শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন ও শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলাম জুনায়দকে মারধর ও রক্তাক্ত জখম করে। স্থানীয় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বিল্লাল খানের নেতৃত্বে বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী এই হামলা চালায় বলে অভিযোগ। তারা ওই সময় কলেজের সিসিটিটিভ ক্যামেরা ও যন্ত্রপাতি ভাংচুর করে এবং অধ্যক্ষ ও শিক্ষকে কক্ষ থেকে বের করে তালা বদ্ধ করে দেয়।

হামলার সময় সাবেক চেয়ারম্যান বিল্লাল হোসেন খান এর নেতৃত্বে লায়ন হারুনুর রশিদের অনুসারী মশিউর রহমান রিপন, আনিছুর রহমান আজাদ, আরিফ হোসেন খান, সাহাদাত হোসেন ভূঁইয়া, ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী, মাহবুবুর বাশার বিপুল, আনোয়ার হোসেন পাটওয়ারী, নাসির হোসেন ও মফিজুল ইসলামসহ প্রায় অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী ঘটনাস্থলে ছিলেন।

কলেজের ইংরেজি বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক খন্দকার খাজা মো. মাছুম বলেন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বিল্লাল খানের নেতৃত্বে বিএনপি নেতা আজিজুর রহমান, হুমায়ুনসহ অধ্যক্ষের কক্ষে তারা প্রবেশ করে। তাদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও সুযোগ দেয়নি। তারা অতির্কত হামলা চালিয়ে শিক্ষক দেলোয়ার হোসেনকে মারতে মারথে মেঝেতে পেলে দেয়। শিক্ষকরা তাকে হামলা থেকে উদ্ধার করে। ঘটনার শেষ সময়ে আমাদের কলেজের প্রাক্তন ছাত্র জুনায়েদ আসলে তাকে মেরে মাথা পাটিয়ে দেয়। পরে তাকেউপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সে পরবর্তীতে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়।

হামলার শিকার শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, কোন কিছু বুঝে উঠার পূর্বেই তারা আমাকে মারধর করে। কোন কথা বলার সুযোগ দেয়নি। সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান উপস্থিত থেকে এই ঘটনা ঘটায়। তারা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ড. শামছুল হক ভুঁইয়ার ছবিটিও ভাংচুর করে।

হামলায় গুরুতর আহত কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলাম জুনায়েদ বলেন, আমি জানতে পারি লায়ন হারুনুর রশিদের লোকজন মানববন্ধন করেছে। তখন আমি কলেজে আমার ভাইয়ের সাথে দেখা করার জন্য গিয়েছি। আমার ভাই সেখানে চাকরি করে। কলেজ প্রবেশ করে অধ্যক্ষকের কক্ষে গিয়ে দেখি লোকজন শিক্ষক দেলোয়ার হোসেনকে মারধর করছে। এমন পরিস্থিতি সম্পর্কে আমি অবগত ছিলাম না। ২ থেকে ৩ মিনিটের মধ্যে আমি হামলার শিকার হই। হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বর্তমানে বাড়িতে আছি।

কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গৌরী রানী সাহা বলেন, ১৭ নভেম্বর সকাল আনুমানিক ১০টার দিকে কলেজের সামনে হট্টোগল শুনতে পাই। তাৎক্ষনিক শিক্ষকদেরকে পাঠাই বিষয়টি জানার জন্য। পরে শিক্ষকরা শ্রেণি কক্ষে যান এবং শিক্ষার্থীদের কলেজ থেকে বের হতে দেননি। এই সময়ে বিএনপির সাবেক এমপি লায়ন হারুনুর রশিদ এর অনুসারী বিএনপি নেতাকর্মীরা আমার কক্ষে প্রবেশ করে। তারা আমার সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে এবং শিক্ষক দেলোয়ার ও শিক্ষার্থী জুনয়ায়েদকে মারধর করে। সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বিল্লাল খান ও আজিজ চেয়ারম্যান উপস্থিত থেকে এসব ঘটনা ঘটায়।

সাবেক এমপি লায়ন হারুনুর রশিদ এর স্থানীয় প্রতিনিধি দাবীদার সাবেক চেয়ারম্যান বিল্লাল হোসেন খান বলেন, সাবেক এমপির এই কলেজে অনেক দান-অনুদান আছে। কিন্তু উনাকে গত একদশকে সে হিসেবে সম্মানিত করা হয়নি। ৫ আগস্টের পরে আমরা বহুবার কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের নিকট উনাকে সভাপতি হিসেবে প্রস্তাব করার জন্য গিয়েছি। তিনি আমাদের কথা কর্ণপাত করেননি এবং ইউএনও আমাদেরকে আশ্বাস দিয়েও বদলি হয়ে যান। যে কারণে আমরা মানববন্ধন করেছি।

হামলার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি চলে আসার পর এসব অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। সেখানে বিএনপির পক্ষ থেকে সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজ, হুমায়ুনসহ অনেকেই ছিলেন। আহত জুনায়েদ আমার ভাতিজা। আমি তাকে দেখার জন্য হাসপাতালে গিয়েছি। শিক্ষককে মারধর এসব ঘটনাগুলো কোনটাই আমি সমর্থন করি না। এসব ঘটনার জন্য আমরা কলেজ কর্তৃপক্ষের নিকট দু:খ প্রকাশ করবো।

এসব বিষয়ে বক্তব্যের জন্য সাবেক এমপি লায়ন হারুনুর রশিদ এর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হয়। তবে তিনি কল রিসিভ করেননি।