ঢাকা ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কিশোরগঞ্জে একই পরিবারের ৪ জনের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় থানায় মামলা

কিশোরগঞ্জে একই পরিবারের ৪ জনের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় থানায় মামলা

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে একই পরিবারের ৪ জনের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামী করে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন নিহত জনি বিশ্বাসের মা শিখা রানী বিশ্বাস।

বুধবার (২৭ নভেম্বর) অজ্ঞাতনামা আসামি করে ভৈরব থানায় মামলাটি করেন তিনি।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলাটির তদন্তে থাকা ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) দায়িত্বে থাকা পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শাহিন। তিনি বলেন, হত্যা মামলা হয়েছে। আমরা নানা দিক মাথায় রেখে ঘটনাটি তদন্ত করছি।

এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। তবে জনি বিশ্বাসের সঙ্গে একই ফ্ল্যাটে সাবলেট নিয়ে বসবাস করা কার্তিক বর্মণ ও সৃষ্টি রানী বর্মণ দম্পতিকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, স্ত্রী ও সন্তানদের হত্যার পর জনি বিশ্বাস নিজে আত্মহত্যা করেছেন।

গতকাল মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) বিকালে কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার রাণী বাজার এলাকার একটি ফ্ল্যাটের কক্ষ থেকে স্বামী-স্ত্রী ও তাদের দুই সন্তানসহ চার জনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

নিহতরা হলেন, গৃহকর্তা জনি বিশ্বাস (৩২) তাঁর স্ত্রী নিপা রানী মল্লিক (২৬) তাঁদের দুই শিশুসন্তান ছেলে ধ্রুব বিশ্বাস (৮) ও মেয়ে কথা বিশ্বাস (৪)।

জনি বিশ্বাসের মরদেহ ঝুলছিল রুমের ভিতরে বৈদ্যুতিক ফ্যানে। তাঁর স্ত্রী নিপা রানী মল্লিকের মরদেহ গলা কাটা অবস্থায় বিছানায় পরেছিলো। তাঁদের দুই শিশুসন্তানের মরদেহও পড়ে ছিল বিছানায়। নিপা রাণী মল্লিক সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ঐ ভবনে সাবলেট হিসেবে দুই সন্তানকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন এই দম্পতি। ভবনের অন্য ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা তাঁদেরকে শান্ত, ভদ্র ও সুখী দম্পতি হিসেবে জানতেন। এই দম্পতির মধ্যে বিরোধ হয়েছে, এমন কিছু কখনো তাঁদের চোখে পড়েনি। সংসারে অর্থের টানাটানি ছিল। কিন্তু কখনোই ফ্ল্যাটের কারও কাছে টাকা বা অন্য কোনো প্রয়োজনীয় জিনিস কখনো ধার চাননি।

ভৈরব উপজেলা শহরের রানীবাজার এলাকার মৃত শাহজাহান মিয়ার ভবন এটি। তিন মাস আগে এই ভবনের ছয়তলার ছাদে চিলেকোঠার দুই কক্ষের ফ্ল্যাটের একটি কক্ষ সাবলেট হিসেবে ভাড়া নেন জনি-নিপা দম্পতি। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে প্রতিবেশীরা দরজা ভেঙে ওই ফ্ল্যাটে ঢুকে একই কক্ষে পরিবারের চারজনের লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেন। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাঁদের লাশ উদ্ধার করে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জনি বিশ্বাসের বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের আনারাবাদ গ্রামে। বাবার নাম গৌরাঙ্গ চন্দ্র বিশ্বাস। জনি আট বছর ধরে স্ত্রীকে নিয়ে ভৈরবে বসবাস করে আসছিলেন। স্বজনেরা জানান, ভৈরব বাজারের বাগানবাড়ি এলাকায় মিজান মিয়ার ওয়ার্কশপে হেডমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতেন জনি। ৯ বছর আগে গাজীপুরের নির্মল মল্লিকের মেয়ে নিপা রানী মল্লিককে বিয়ে করেন তিনি। জনি-নিপা দম্পতির দুই সন্তান ধ্রুব ও কথা। ধ্রুব স্থানীয় একটি স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে পড়ত।

জনি-নিপার স্বজনেরা জানান, গত রোববার স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে জনি গ্রামের বাড়িতে যান। পরদিন সোমবার ফিরে আসেন। জনি সকাল ১০টার মধ্যে ওয়ার্কশপে কাজে যেতেন। একই ওয়ার্কশপে কাজ করেন জনির আপন খালাতো ভাই ঝোটন প্রামাণিক। গতকাল সকাল ১০টা পেরিয়ে গেলেও কাজে না আসায় ওয়ার্কশপের মালিক মিজান মিয়ার নির্দেশে ঝোটন যান জনিকে ডেকে আনতে। অনেক ডাকাডাকির পরও দরজা না খোলায় ফিরে আসেন তিনি।

সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে প্রথমে নিপা ঘরে ঢুকেন। ১৮ মিনিট পর ৫টা ৩৮ মিনিটে আসেন জনি।

জনি বিশ্বাসের ছোট ভাই পলাশ বিশ্বাস বলেন, আমাদের মনে হচ্ছে, ঘটনাটির পেছনে অন্য ঘটনা থাকতে পারে। এ জন্যই হত্যা মামলা করেছি।

এদিকে এক পরিবারের চারজনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় মরদেহ উদ্ধারের পরপরই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী। এ ছাড়া র‍্যাব, ক্রাইম সিন ও পিবিআইয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী বলেন, আমাদের তদন্তে কিছু মানুষের কাছ থেকে জানতে পেরেছি, জনি নেশা করতেন। তবে ঘটনার সঙ্গে নেশার সম্পর্ক রয়েছে কি না, এখনো নিশ্চিত নই। ঘটনার রহস্য উদঘাটনে তৎপর রয়েছে পুলিশ।

নিহত,কিশোরগঞ্জ,মরদেহ,মামলা
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত