কাউখালীতে ৪৫ হাজার টাকা দিলেই মেলে কাতার চ্যারিটির গভীর নলকূপ
প্রকাশ : ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৩:০৮ | অনলাইন সংস্করণ
কাউখালী (পিরোজপুর) প্রতিনিধি
পিরোজপুর জেলার কাউখালীতে প্রয়োজনীয় গভীর নলকূপ না থাকার ফলে সুপেয় পানির জন্য গভীর নলকূপের চাহিদা অনেক বেশি। বিশুদ্ধ পানির জন্য সরকারিভাবে বছরে প্রায় শতাধিক গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়। তবে এতে লক্ষাদিক মানুষের পানির চাহিদা পূরণ হয় না।
এ উপজেলার অধিকাংশ মানুষ গরিব হওয়ায় নিজেদের অর্থায়নে গভীর নলকূপ স্থাপন করতে পারে না। যে কারণে চাহিদা বেশি থাকায় বিভিন্ন দাতা সংস্থা বিনামূল্যে গভীর নলকূপ বরাদ্দ দিয়ে থাকেন।
এই সুযোগে এক শ্রেণীর অসাধু ঠিকাদার দালাল চক্রের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বিনামূল্যে না দিয়ে সাধারণ গ্রাহকদের নিকট থেকে হাতিয়ে নেয় লক্ষ লক্ষ টাকা।
অনুসন্ধান করে জানা গেছে ,কাতারভিত্তিক সংস্থা কাতার চ্যারিটি স্থানীয় ঠিকাদারের মাধ্যমে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গভীর নলকূপ বসানোর ব্যবস্থা করছে।
যার ধারাবাহিকতায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কাউখালী উপজেলায় একশত গভীর নলকূপ বসানোর কার্যক্রম চলমান আছে।
কাতার চারাটি সূত্রে জানা গেছে, গরিব ও অসহায় সাধারণ মানুষের জন্য বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উন্নত প্লাটফর্মসহ এক একটি গভীর নলকূপের জন্য ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ করেন।
তবে ঠিকাদার সুনির্দিষ্ট দালাল চক্র দিয়ে সাধারণ মানুষকে না দিয়ে ধনাঢ্য ব্যক্তিদের নিকট থেকে একটি গভীর নলকূপের জন্য ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা চাঁদা গ্রহণ করে বরাদ্দ দেয়, বঞ্চিত হয় সাধারণ মানুষ।
এই চক্রটি সাধারণ মানুষকে সংস্থার বরাদ্দ কম বলে স্থানীয় ইউপি সদস্য, চেয়ারম্যানসহ অন্যান্যদের ভুল বুঝিয়ে গ্রাহকদের নিকট থেকে এই মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন ।
আরো জানা যায় যে, কাতার চ্যারিটি নামক এই সংস্থাটি কাউখালী সদরসহ পাঁচটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে গ্রাহকদের নিকট থেকে ৪০/৪৫ হাজার টাকা নিয়ে একটি গভীর নলকূপ বরাদ্দ দেয়। অথচ সংস্থাটির গভীর নলকূপ সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বসানোর কথা থাকলেও দালাল চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের কেউন্দিয়া গ্রামের ভূক্তোভুগী আব্দুর রহমান তালুকদারের ছেলে নুরুল আমিন তালুকদার জানান, তিনিসহ তার বাড়ির চারপাশে বেল্লাল উদ্দিন, মাসুদ হোসেন, লিপি বেগম এরা সকলেই একটি গভীর নলকূপ ৪০ হাজার টাকা দিয়েছে। তবে অনেকে ৪৫ হাজার টাকা দিয়েছে বলে শুনেছি।
তিনি আরো জানান, দক্ষিণ বাজার আল মদিনা স্যানিটারি দোকানের মালিক মিজানুর রহমান রিপনকে ৪০ হাজার টাকা দিলে সে ব্যবস্থা করেন।
পাঙ্গাসিয়া বাজারের ব্যবসায়ী উজ্জ্বল জানান, রাজাপুর উপজেলার লেবু বুনিয়া বাজারের ব্যবসায়ী আবুল হোসেনের মাধ্যমে ৪০ হাজার টাকা করে দিয়ে এলাকায় ১০/১২ টি কাতার সংস্থার টিউবওয়েল বসিয়েছেন।
এ ব্যাপারে এডভোকেট জহুরুল ইসলাম বলেন, সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে এই টাকা গ্রহণ করা সম্পূর্ণ অনৈতিক ও অবৈধ, এটা চাঁদাবাজির শামিল ।
তিনি আরো বলেন, ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা খরচের একটি টিউবয়েলের জন্য সংস্থার বরাদ্দ ১ লক্ষ ১০ হাজার ও গ্রাহকের কাছ থেকে ৪০/৪৫ হাজার টাকা নেওয়া একটি ফৌজদারি অপরাধ। এদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
রাজাপুর উপজেলার আবুল হোসেন এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সাইট দেখাশোনা করি। মূল ঠিকাদার খুলনার সব কিছু সে জানে তবে কাউখালীতে আমরা কাতার সংস্থার ১০০টি গভীর নলকূপ স্থাপন করেছি।
কাউখালী কলেজের প্রভাষক সুমন, স্যানিটারি দোকান মিজানুর রহমান রিপন ও পাঙ্গাসিয়া বাজারের উজ্জ্বল দোকানদারের মাধ্যমে কত টাকা নেওয়া হয়েছে তারাই বলতে পারবে। ঠিকাদারের ফোন নাম্বার চাইলে তিনি তার মোবাইল বন্ধ করে দেয়, যার ফলে ঠিকাদারের সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নিবাহী কর্মকর্তা স্বজল মোল্লা জানান, টাকা নেওয়ার কথা শুনেছি, কোন অভিযোগ পাওয়া গেলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।